অনাবৃষ্টি কাটাতে ব্যাঙের বিয়ে!

অনাবৃষ্টি কাটাতে ব্যাঙের বিয়ে!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বিয়ে বলে কথা। তবে কোনো মানব-মানবীর নয়। দুটি ব্যাঙের! কাল রাতে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের কাচিনীয়া বাজার গ্রামে ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়েতে গ্রামবাসীসহ অন্তত ৫শ অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

দুটি ব্যাঙকে হলুদ দিয়ে সাজানো হয়। সেই সঙ্গে সাজানো হয় চালন-কুলা। চালন-কুলায় রাখা হয় পান, সুপারি, দূর্বাঘাস, মিষ্টি, মাটির গুঁড়াসহ বিয়ের উপকরণ। দুই ব্যাঙের পক্ষে বিভক্ত হয়ে কিশোর-কিশোরীরাও সেজেছিল।

চলেছে তাদের নাচ-গান পরিবেশনা। বিয়েতে নিমন্ত্রিত ব্যক্তিরাও ব্যাঙ দম্পতিকে দিয়েছেন অর্থসহ বিভিন্ন ধরনের উপহার।

রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলে বিয়ের অনুষ্ঠান। সবার মনের বিশ্বাস, ব্যাঙের বিয়ে দিলেই অনাবৃষ্টি কেটে যাবে। হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলে এ আয়োজন করলেও বিয়েতে পালন করা হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের নিয়ম-কানুন। বিয়ে শেষে ব্যাঙ দুটিকে জলাশয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

এই ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের কাচিনীয়া বাজার গ্রামের মানুষ। হিন্দুরীতি অনুসারে বিয়ের জন্য ছায়ামণ্ডপ, মাড়োয়া, পুষ্পমাল্য, গায়ে হলুদ সব আয়োজনই ছিল।

আয়োজকরা জানায়, শ্রাবণ মাসের ৭ দিন চলছে। কিন্তু বৃষ্টি নেই। জমিতে পানি নেই। আমন চারা রোপণ করা যাচ্ছে না। আবার যে জমিগুলোতে চারা রোপণ করা হয়েছে, সে জমিগুলো পানির অভাবে চৌচির হয়ে গেছে। অনেকে শ্যালোমেশিন দিয়ে খেতে পানি দিচ্ছেন। এ কারণে যাতে বৃষ্টি আসে সেজন্য ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়।

বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন চলছিল ৭ দিন আগে থেকে। গ্রামের তরুণরা ৭ দিন আগে থেকে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেচে গেয়ে অর্থ, চাল, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা তেল ইত্যাদি সংগ্রহ করে। এ সময় সবাইকে ব্যাঙের বিয়ে খেতে আসার দাওয়াত দেয়া হয়।

রোববার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন। বাজানো হয় মাইক। রঙ আর হলুদ মেখে শুরু হয় নাচ-গান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বরের বাবা রাজেন্দ্রনাথ রায় ও কনের বাবা নিপুণ রায় বর-কনেকে নিয়ে হাজির হয় অনুষ্ঠানে। এ সময় পাশেই চলছিল রান্না-বান্নার কাজ।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, খরা থেকে মুক্তি পেতে এবং বৃষ্টির আশায় তাদের এই আয়োজন। অনাবৃষ্টির কবলে পড়লে তারা বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে থাকেন। এই রীতি শতবর্ষ আগে থেকেই চলে আসছে।  

তাদের মতে, হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ণে বর্ণিত বৃষ্টির দেবতাকে খুশি করার জন্য সেই সময়ে ব্যাঙের বিয়ের প্রচলন ছিল। সেই ধারা অনুসারে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে এ এলাকার বাসিন্দারা। তাদের বিশ্বাস, ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টির দেবতা খুশি হয়ে বৃষ্টি দেন। এই আশায় ব্যাঙের বিয়ে দেয়া হয়েছে।


অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর