২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি

ফাইল ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি

শফী আহমেদ

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর উভ্যুদ্বয় ঘটে বাঙালি জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের। স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ পাকিস্তানী হায়েনাদের আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে একটি মানবিক, সাম্যের অসাম্প্রদায়িক জাতি রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ায়। কিন্তু বাঙালি জাতি রাষ্ট্রের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালির মূল নেতৃত্বকে ধ্বংশ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাঙালি নত করার জাতি নয়।

শুরু হয় হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন। এই প্রতিরোধ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতির মধ্য মনি হিসেবে আবির্ভূত হন।

বর্তমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা আমাদের নেত্রীসহ জাতীয় নেতবৃন্দকে হত্যা করার জন্য খুনী জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ বছরের একুশে আগস্ট এমন এক সময়ে পালিত হতে যাচ্ছে যে সময়টিতে বাংলাদেশে মানুষ ঈদ উল আযহার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্থ।

অপরদিকে একুশে গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে দেশে চলছে নানা ষড়যনত্র অনাগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।

স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ক্রমাগত আক্রমণ বার বার স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিলো বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক সমতাভিত্তিক সমাজের অগ্রগতির ধারাকে। এই জঘন্য অপশক্তি ২০০১ সালে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। শুরু হয় রাজনীতির নতুন মেরুকরণ। ফের সড়যন্ত্রের রাজনীতি রক্তাক্ত হতে শুরু করলো বাংলাদেশ। নতুন করে আমাদের ওপর হত্যাকাণ্ড। শুধু নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার কারণে ধর্ষিত হয়েছে শত শত তরুণী। হাজার হাজার ঘরবাড়ি আক্রান্ত হয় খুনিদের আক্রমণে বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের ওপর চলে নির্মম অত্যাচার।

বিএনপি-জামায়াত জোটের হত্যা আর অপরাধের ধারাবাহিকাতায় ২০০৪ সালে একুশে আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী এক মিছিলপূর্ব- সমাবেশ আহ্বান করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো তাকে লক্ষ্য করে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরিত হতে থাকে। এই গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে বেচেঁ গেলেও প্রাণ হারান আইভী রহমানসহ চব্বিশ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায় শত শত নেতাকর্মী। এখনও আমাদের বহু জাতীয় নেতা গ্রেনেডের স্পিন্টার শরীর নিয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এই গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে হামলাকারীরা নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলো জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের জাতীয় নেতৃত্বকে। আমার একটু অতীতের দিকে ফিরে যাই, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু কে হত্যার পেছনে কার্যকরী ছিল আই এস আই ও সিআইএ। তাদের ক্রীড়নক ছিল খুনি ডালিম, ফারুক, রশিদ চক্র ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে মীর জাফর মোশতাকের চক্র। কিন্তু এ কথা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, জিয়াউর রহমান ছিল বঙ্গবন্ধু খুনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতা। ঠিক তেমনিভাবে এ কথাও অনস্বীকার্য যে, হাওয়া ভবনের অধীশ্বর তারেক রহমান ছিল একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মূল মদদদাতা।

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত চক্র ক্ষমতাসীন হওয়ার পর জিয়াপুত্র তারেক রহমান বিকল্প ক্ষমতা কেন্দ্র গড়ে তোলে এই হাওয়া ভবনে। ২১ আগস্ট গ্রেনেডে হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কতিপয় শীর্ষস্থানীয় কর্মকতা, পুলিশ বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই তাজউদ্দীন ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জেএমবির ঘাতকরা। এই পুরো নীলনকশা হাওয়া ভবন ও তারেক রহমানের মস্তিষ্কজাত।

খুনিরা চেয়েছিলো নির্বিঘ্নে এই হত্যাকাণ্ড সম্পাদন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে জননেত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে যাওয়ার খুনিদের সেই দুরাশা পূরণ হয়নি। অনেক আন্দোলন সংগ্রাম ও নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে উন্নয়নের ধারায়।

চালকের আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যে দলটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো বাঙালি জাতির ভাগ্যের উন্নয়ন সাধন করা। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। পলাতকদেরর দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার চেষ্টা অব্যাহত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে ও রায় কার্যকর হচ্ছে। ঠিক তেমনিভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাষ্টারমাইন্ড তারেক রহমানসহ অপর আসামিদের বিচার কার্যক্রম চলছে।

কেবল এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি খুনির দল। তারা সাজিয়েছিল জজ মিয়া নাটক। বেগম খালেদার সঙ্গে যখন তৎকালীন সামরিক গোয়েন্দা প্রধান এই গ্রেনেড হামলা নিয়ে কথা বলতে চেয়েছেন, তখন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, “এটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আমি দেখছি!” যা কী না সামরিক গোয়েন্দা প্রধান তার জবানীতে বলেছেন।

১৯৭১ এর আগে পরে সকল আন্দোলন সংগ্রাম পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে আওয়ামী লীগ সদা-সর্বদা গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। কখনও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ পরিহার করেনি। খুনের মাধ্যমে কোন রাজনৈতিক শক্তিতে উচ্ছেদ করতে চায়নি। এখনও রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও বিধিবদ্ধ আইনের মাধ্যমেই সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এই এক বিরল দৃষ্টান্ত।

আজ এই দিনে আমরা পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ যারা সেই দিন প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, যারা পঙ্গু ও আহত অবস্থায় অপরিসীম কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন। গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে রাজনীতির বিচ্চ্যুতি পরিহার করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরে ষড়যন্ত্রের রাজনীতির পথ রুদ্ধ করে একটি মানবিক, তুলনামূলক বৈষম্যহীন উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা্ই হোক আমাদের প্রত্যয়।

লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা ও নব্বইয়ের গণ-অন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র-ঐক্যের নেতা।


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল)