এ কেমন বাবা!

'বাবা', যে শব্দটি মেয়ের কাছে আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক। প্রতীকী ছবি

এ কেমন বাবা!

রুকাইয়া ইসলাম চাঁদনী

''কাটেনা সময় যখন আর কিছুতে/ বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না/ জানালার গ্রিলটাতে ঠেকাই মাথা/ মনে হয় বাবার মত কেউ বলে না/ আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়। ....আয়রে আমার সাথে গান গেয়ে যা/ নতুন নতুন সুর নে শিখে নে/ কিছুই যখন ভাল লাগবে না তোর/ পিয়ানোয় বসে তুই বাজাবিরে/ আয় খুকু আয় খুকু আয়। '' বাবা-মেয়ের সম্পর্ক কেমন হয় তা কালজয়ী গানটির মধ্যে পরম মমতায় বেধে দিয়ে গেছেন গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই গান সন্তানদের এক অসীম আবেগে জড়িয়ে দেয় বাবার সঙ্গে।

বাবা হারানো যে কোন মেয়ের চোখের পাতা ভিজিয়ে দেয়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাবার সঙ্গে কাটানো সুখের স্মৃতিগুলো। পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে বাবার আদর। এ যেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।
কিন্তু সেই পরম স্নেহ ও নিরাপত্তার জায়গাটুকুও আজ অনিরাপদ হয়ে উঠছে। হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর। আজ বাবার ধর্ষিত হচ্ছে মেয়ে! টাকার জন্য নিজের মেয়েকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দিচ্ছে বাবা নামধারী এক মানুষরূপী পশু! তাহলে মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়? কেনই বা পরম আস্থা ও মমতার 'বাবা' শব্দটি আজ কলুষিত? কোথায় এই সংকটের সমাধান?

আগে এমন ঘটনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে শোনা গেলেও সম্প্রতি বাংলাদেশেও এমন ঘটনা সামনে আসছে। গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮) যশোরে এক বাবার জেল-জরিমানা হলো নিজের মেয়েকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে। ঘটনাটা শোনামাত্রই বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। বাবা বলতে আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি পবিত্র মুখ। মুখে কাঁচা-পাঁকা দাঁড়ি। 'মা' ছাড়া যে মানুষটি কখনো আমার নাম ধরে ডাকেনি। সকল আবদার পূরণের একমাত্র স্থান। যার ভয়ে মাও কখনো আমাকে শাসন করতে গেলে দুবার ভাবে। সেই 'বাবা' নামের পবিত্র শব্দটিকে আজ কলুষিত, কলঙ্কিত করছে কিছু মানুষরূপী পশু। এমনকি মায়ের কাছেও নিরাপদ থাকছে না সন্তান। মায়ের পরকীয়ার বলি হচ্ছে নাড়িছেড়া ধন। এগুলো কীসের আলামত?

যশোরের ঘটনা শোনার পর কিছুতেই মনকে প্রবোধ দিতে পারছি না। মাত্র কিছু টাকার জন্য নিজের মেয়েকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দিলেন বাবা! গত কয়েক বছরে বাংলাদেশেরই এমন অনেকগুলো ঘটনা সংবাদপত্রের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এমন ঘটনা হরহামেশা ঘটতে শুরু করেছে। কোথায় যাচ্ছে সভ্যতা?  কোথায় যাচ্ছে সমাজ, নৈতিকতা? সন্তানের কাছে যে বাবা সকল নিরাপত্তার প্রতীক সেই বাবার কাছেই আপন মেয়ে অনিরাপদ কেন ? 

ঘটনা-১: যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার মো. বাবুর ছেলে শরিফুল ইসলাম। একই উপজেলার ফুল মিয়ার মেয়ে সুফিয়া বেগমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ঘর আলো করে জন্ম নেয় একটি কন্যসন্তান। কিন্তু, মেয়ের জন্মের এক বছর পরই দু'জনের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মেয়েকে নিয়ে সুফিয়া চলে যান বাবার বাড়ি। এরই মধ্যে পেরিয়ে যায় ১৫ বছর। গত বছর হঠাৎ সুফিয়ার বাবার বাড়িতে গিয়ে হাজিন হন শরিফুল। মেয়েকে বেড়াতে নিয়ে যেতে চান। জন্মের পর থেকে মেয়ে বাবার আদর পায়নি মনে করে সুফিয়াও বাধা দেননি। কিন্তু, শরিফুলের ভেতরে লুকিয়ে থাকা পশুটিকে দেখতে পাননি সুফিয়া। বাবাকে পেয়ে মেয়েও আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু, সেই আনন্দ যে চারিদিক অন্ধকার করে দেবে তা কোনভাবে বুঝতে পারেনি ১৬ বছরের মেয়েটি। বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে যান শরিফুল। আর ফেরত দেননি। দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে গত বছরের ২২ মার্চ মেয়েকে বিক্রি করে দেন ফরিদপুরের এক যৌনপল্লিতে। আট মাস পর বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) সহযোগিতায় ওই মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় ফরিদপুরের যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করা হয়। আদালত শরিফুল ইসলাম নামের ওই 'বাবার' সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।

ঘটনা-২: গত ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের অভয়নগরের সিদ্দিপাশা সোনাতলা গ্রামের ধলু সরদার নামের এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড করেছেন আদালত। অভিযোগ- সৎ মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণ। মামলার অভিযোগে জানা যায়, আসামি ধলু সরদার মেয়েসহ এক বিধবা নারীকে বিয়ে করেন। অভাবের সংসার হওয়ায় তারা এক ঘরে থাকতেন। ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ধলু সরদার প্রথম তার সৎ মেয়েকে ধর্ষণ করেন। চলতি বছর ধলু সরদার ফের মেয়েকে ধর্ষণ করলে মেয়েটি মাকে জানায়। গত ৯ মার্চ মেয়েটির মা ধলু সরদারকে আসামি করে অভয়নগর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

ঘটনা-৩: মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরভুতা গ্রামের বেল্লাল হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক ড. এ কে এম আবুল কাশেম। জানা যায়, বেল্লাল হোসেন ২০১৪ সালের ২৭ মে তার মেয়েকে ফুসলিয়ে বাড়ির পাশের একটি খামার বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে ভিকটিম তার মাকে বিষয়টি জানায়। মা স্থানীয় মাতব্বরদের ঘটনাটি জানান। পরে ১২ জুন মা ফুলবানু বাদি হয়ে সদর থানায় বেল্লাল হোসেনকে আসামি করে মামলা করেন। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আদালত বেল্লাল হোসেনকে জেল-জরিমানা করেন।

ঘটনা-৪: এই ঘটনাটা ২০১৬ সালের। ফরিদপুরে আপন ১৩ বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে লম্পট বাবাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মেয়েটি দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের শিকার হচ্ছিল বলে ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া যায়। থানার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার এক ব্যক্তি তাঁর পরিবার নিয়ে ফরিদপুর শহরে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন। একদিন মেয়েটির মা তার বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে যান। তখন বাবা ও মেয়ে এক বিছানায় থাকতে শুরু করে। সেই থেকে প্রায় একমাস জন্মদাতা বাবার ধর্ষণের শিকার হয় মেয়েটি। ওই বছর ১ সেপ্টেম্বর রাতে ওই ব্যক্তি মেয়েকে প্রতিদিনের মতো ধর্ষণ করতে গেলে মেয়েটি চিৎকার করতে থাকে। পরে প্রতিবেশী ও বাড়ির মালিক ছুটে আসলে মেয়েটি তাদেরকে সব খুলে বলে। বাসার মালিক ও প্রতিবেশীরা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানাকে জানালে পুলিশ এসে ওই ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশের কাছে মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করলে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

ঘটনা-৫: গত বছরের সেপ্টেম্বরের ঘটনা। মালয়েশিয়ায় মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে বাবাকে ৪৮ বছরের কারাদণ্ড ও ২৪ ঘা বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেয় দেশটির পেটালিং জায়া নগরীর শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধকারী একটি বিশেষ আদালত। তিন কন্যা সন্তানের জনক ওই ব্যক্তি ২০১৩ সাল থেকে বড় মেয়েকে ধর্ষণ করে আসছিল। ২০১৫ সালে স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তখন ছোট দুই মেয়ে মায়ের সঙ্গে চলে যান, বড় মেয়েকে রেখে দেন বাবা। বছর দুই পর ছোট দুই মেয়েকেও একই উদ্দেশ্যে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চান ওই ব্যক্তি। তখন বড় মেয়ে মায়ের কাছে পুরো ব্যাপারটি খুলে বলেন। এরপর ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার সাবেক স্ত্রী।

ঘটনা-৬: চলতি বছরের জুলাইয়ের ঘটনা। নিজের কিশোরী মেয়েকে মাসের পর মাস ধর্ষণের অভিযোগে ভারতের রাজস্থানের এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে দেশটির একটি আদালত। স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে ২০১৭ সালের মে মাস থেকে তিন সন্তানকে নিয়ে অন্যত্র বসবাস শুরু করেন নির্যাতিতা মেয়েটির মা। কিছুদিন পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে না নিলেও এক ছেলে ও এক মেয়েকে দেখভালের নামে নিজের কাছে নিয়ে যান ওই ব্যক্তি। এরপর, নিজের কিশোরী মেয়ের ওপর যৌন অত্যাচার চালাতে থাকেন। বাবার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অবশেষে বাধ্য হয়ে মায়ের কাছে অভিযোগ করে ওই কিশোরী। এরপর মা আইনের দ্বারস্থ হন।

ঘটনা-৭: চলতি বছরের এপ্রিলের ঘটনা। নিজের ২ কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে ভারতে ৪২ বছরের এক ফ্যাশন ডিজাইনার বাবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দুই মেয়ের একজনের বয়স ১৭, অন্যজনের ১৩। তারা বাবার অত্যাচারের কথা মাকে জানায়। মা দুই মেয়েকে নিয়ে ভারতের ভাকোলা পুলিশের কাছে গিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। ৮ এপ্রিল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ঘটনা-৮: নির্মমতার সর্বোচ্চ সীমা ছাড়ানো এ ঘটনাটি ঘটে ভারতের উত্তর প্রদেশের সীতাপুরে চলতি বছরের এপ্রিলে। বন্ধুদের নিয়ে নিজের ৩৫ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে বাবা! ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ১৬ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল নির্যাতিতার। স্বামীর সঙ্গে বিবাদের কারণে বিয়ের দু'বছরের মধ্যেই বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। তারপর থেকেই তাঁর‌ সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করতো তার বাবা। গত ১৫ এপ্রিল বাবার সঙ্গে একটি মেলায় যান ওই নারী। সেখানে ধর্ষক বাবার সঙ্গে দেখা হয় তার বন্ধু মান সিংয়ের। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তারা আরেক বন্ধু মিরাজের বাড়িতে যান। আর সেখানে তিনজনে মিলে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। মিরাজের বাড়িতেই ১৮ ঘণ্টা বন্দী ছিলেন ওই নারী। পরে সুযোগ বুঝে পালিয়ে বাড়িতে ফিরে মা-কে সব খুলে বলেন। থানায় অভিযোগ জানানোর পর মিরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে তখনও বাবা নামের ওই নরপশুকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

ঘটনা-৯: আর্জেন্টিনায় নিজের মেয়েকেই প্রায় ২০ বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছিলেন ডোমিঙ্গো বুলাসিও নামের ৫৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। মেয়ের গর্ভে তার আটটি সন্তানও হয়। দুই দশক আগে মেয়েটির মা তাকে ও ডোমিঙ্গোকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকেই বাবার যৌন লালসার শিকার হতে থাকে মেয়েটি। গত বছরের শেষ দিকে কনিষ্ঠ সন্তানের শরীর খারাপ হওয়ায় তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বাধ্য হয় ডোমিঙ্গো। সেখানে ডাক্তারকে কিছু সময় একান্তে পেয়ে বাবার কুকীর্তির ঘটনা ফাঁস করে দেন মেয়েটি। পুলিশে খবর দেন ডাক্তার। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। আদালতের নির্দেশে  ডিএনএ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায় শিশুটি ডমিঙ্গোরই।

এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। লাখে নয়, হয়তো কোটিতেও একটা মিলবে না। এটাই বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করতে চাই। একইসঙ্গে এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা আর একটিও শুনতে চাই না যা 'বাবা'র মতো পবিত্র শব্দটিকে কলুষিত করবে। এমন একটি ঘটনাই বাবা-মেয়ের পবিত্র সম্পর্ককে খুন করার জন্য যথেষ্ট। বিশাল আইসবার্গে একটি চিড় ধরানোর মতো। এমন এক একটি ঘটনাও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জায়গাটিকে অবিশ্বাসে ভরিয়ে তুলতে পারে। আদালত এই নরপশুদের সাজা দিয়েছে। তবে সেই ঘটনাগুলোতেই সাজা হয়েছে যেগুলো সামনে এসেছে। এমন আরও অনেক ঘটনা হয়ত বোবা কান্না হয়ে আড়ালেই রয়ে গেছে।

বাবা শব্দটি আমার কাছে অতি প্রিয় ও আস্থার। আমার বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ট বাবা। সব সন্তানই আমার মতো এমনটা ভাবতে চায়। সন্তানরা বাবার জন্য 'বাবা দিবস' পালন করে। জুন মাসের তৃতীয় রোববার সারা পৃথিবীতে পালিত হয় দিনটি। নানা উপহার কিনে বাবাকে চমকে দিতে চায়। আমিও ভাবি কীভাবে আমার বাবাকে খুশি করতে পারবো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাবাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়। যাদের বাবা নেই তাদের কেউ কেউ স্মৃতি রোমন্থন করে বাবার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লেখে। মা’ এর মতো ‘বাবা’ও ছোট্ট একটি শব্দ, অথচ এর ব্যাপকতা বিশাল। ডাকটার মাঝেই লুকিয়ে আছে কী গভীর ভালবাসা, নিরাপত্তা, নির্ভরতা।  

সাহিত্যে, সংগীতে, লোককথা ও শিল্পকর্মে বাবা স্থান করে নিয়েছেন এক দায়িত্বশীল স্নেহময় মানুষ হিসেবে। এখানে তিনি বাবা, তিনি পুরুষ নন। আমরা বাবাকে বাবা হিসেবে দেখতে চাই, পুরুষ হিসেবে নয়। সন্তানের দুঃসময়ে বাবা স্নেহের সঙ্গে ডেকে নিয়ে বুকে আগলে রাখবেন। ঘুচিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন সব কষ্ট। আপনি জানেন না বাবা, মেয়ের কাছে আপনি কত বড় নির্ভরতার জায়গা। সেই নির্ভরতার জায়গাটুকু কেড়ে নেবেন না। আজ যেসব বাবারা মেয়ের কাছে অপরাধী, আমি বিশ্বাস করতে চাই তারা মানসিকভাবে অসুস্থ, তারা পাগল, তারা স্মৃতিশক্তি হারিয়েছে। সুস্থ মস্তিস্কের কোন বাবাই মেয়ের জন্য হুমকি নয়, বরং আস্থার প্রতীক।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গৃহিণী।

বি.দ্র.পাঠক কলামের যে কোন লেখা ও মন্তব্যের দায়ভার শুধুই সংশ্লিষ্ট লেখকের। এর কোন দায় নিউজ টোয়েন্টিফোর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে না।

সম্পর্কিত খবর