মৃত্যুর পরের বাড়ি বানাচ্ছেন যিনি

বাড়িটি শেষ হতে লাগবে আরও ৪ বছর। ইনসেটে মান্দুলানি।

মৃত্যুর পরের বাড়ি বানাচ্ছেন যিনি

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

মৃত্যুর পর মানুষ যাতে ভুলে না যায় সেজন্য বিপুল অর্থ খরচ করে নিজের ও পরিবারের জন্য বাড়িসদৃশ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করছেন তানজানিয়ার নজোম্বের এক বাসিন্দা। বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, সেখানে এখন পর্যন্ত কোন সাধারণ মানুষ এত টাকা খরচ করে সমাধি তৈরি করেনি, তাও আবার নিজের জন্য!

অ্যান্টন মান্দুলানি নামের ওই ব্যক্তি চান, তাকে ও তার তিন স্ত্রীকে ওই এলাকার মানুষ মৃত্যুর পরেও মনে রাখুক। এজন্যই এই সমাধিক্ষেত্র।

এরইমধ্যে পাঁচ হাজার ডলার খরচ করে ফেলেছেন। সমাধিক্ষেত্রটি সমাপ্ত হতে এখনো বছর চারেক সময় লাগবে।

বাইরে দেখে নির্মাণ কাজের ধরণ দেখে মনে হবে যেন কোন বাড়ি বানানো হচ্ছে। ভেতরের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা।

সেখানে রয়েছে ১২ মিটার গভীর একটি সমাধি, যা হবে অ্যান্টন মান্দুলামি এবং তার তিন স্ত্রীর মৃত্যুর পরের ঠিকানা। এমন একটি জায়গায় নিজের শেষ ঠিকানা করা অ্যান্টনির সারাজীবনের স্বপ্ন। আট বছর ধরে এই সমাধির কাজ চলছে।

অ্যান্টন মান্দুলানি বলছেন, ''আমি এই সমাধি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ আমি চাই না মানুষ আমাকে ভুলে যাক। সবমিলিয়ে এখানে এক হেক্টর জায়গা আছে, যেখানে আমি এবং আমার তিন স্ত্রীর সমাধি হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এখান থেকে জানতে পারবে, আমি এই পরিবারের জন্য কি ছিলাম। ''

অ্যান্টন মান্দুলানির বড় স্ত্রী ডামিয়ানা উইকেচ বলেন,''আমার মতে, তিনি চমৎকার একটি কাজ করেছেন। মৃত্যুর পরে নিজের থাকার জায়গাটি তিনি নিজেই তৈরি করে নিচ্ছেন। তার একজন স্ত্রী হিসেবে আমি খুশী, কারণ আমাদের একস্থানে সমাধি হবে। ''

এদিকে দরিদ্র একটি গ্রামে এভাবে হাজার ডলার খরচ করে সমাধিস্থান তৈরি করার বিষয়টি সবারই নজরে পড়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

গ্রামের বাসিন্দা জোনাস মেহেমা বলছেন, ''আমি মনে করি, এটা ঠিকই আছে। কারণ যখন থেকে তিনি প্রথাগত হার্বালের ব্যবসা শুরু করেন, তখন থেকেই তিনি বলেছেন যে, তিনি ইতিহাস তৈরি করতে চান, যাতে মৃত্যুর পরেও মানুষ তাকে ভুলে না যায়। ''

গ্রামটির আরেকজন বাসিন্দা ভিক্টর নায়াগাওয়ার অভিমত অবশ্য ভিন্ন।

তিনি বলছেন, ''এটা এমন একটা কাজ যা আমাকে খুবই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আমি কখনো দেখিনি কেউ এত অর্থ খরচ করে নিজের সমাধিক্ষেত্র তৈরি করে। নেতাদের ক্ষেত্রে এটা গ্রহণীয় হতে পারে, যেমন আমাদের জাতির পিতার জন্য। সত্যিই আমি অবাক হয়েছি। ''

এদিকে শুধু সমাধিক্ষেত্রই নয়, মান্দুলামির আরেকটি শেষ ইচ্ছা নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। আর সেই ইচ্ছাটি হলো মৃত্যুর পর নিজের দেহ মমি করানো। তিনি চান, মৃত্যুর পরে তার দেহ মমি করা হবে এবং প্রকাশ্যে সেটি প্রদর্শন করা হবে।

প্রসঙ্গত, ওই সমাজে মনে করা হয়, মৃত্যু নিয়ে বেশি মাতামাতি দুর্ভাগ্য ডেকে আনে।

সূত্র: বিবিসি

সম্পর্কিত খবর