যৌতুক না পেয়ে নববধূর শরীরে সিগারেটের ছ্যাকা!

স্বামীর সিগারেটের ছ্যকায় ক্ষতবিক্ষত গৃহবধূ সাথীর শরীর

যৌতুক না পেয়ে নববধূর শরীরে সিগারেটের ছ্যাকা!

শেখ রুহুল আমিন,ঝিনাইদহ

যৌতুকের টাকা না পেয়ে নববধূর উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছেন স্বামী সাব্বির হোসেন। টাকার জন্য স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথীর গলায় ছুরি চালিয়ে জখম করেছেন। দিনের পর দিন জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পুড়িয়ে ক্ষত-বিক্ষত করেছেন। আর এ নিয়ে মামলা করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ ওই গৃহবধূর।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ সাথীর বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শ্রীপুর। তিনি ওই গ্রামের আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মেহেদী হাসান শওকতের মেয়ে। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এসে বুধবার দুপুরে সাথী তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে পাষণ্ড স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের ক্ষত স্থানগুলো সাংবাদিকদের দেখান। এ সময় তিনি আদালতে দায়ের করা ৩টি মামলার তথ্য সাংবাদিকদের দেন।

সাথী জানান, একটি (শৈল সিআর নং ৩১৬/১৮) মামলায় সাব্বির হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছেন। এছাড়া পারিবারিক ও নারী শিশু নির্যাতন আদালতের দুইটি (এনটিসি-২৫৫/১৮ ও শৈল আঃ ৮৫/১৮) মামলার তদন্ত চলছে। কিন্তু সাব্বির এপিবিএন'র এর কনস্টেবল হওয়ায় আদালতের আদেশ পুলিশ তামিল করছে না। সাব্বির এখন ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানায় ১ এপিবিএন (কনস্টেবল নম্বর ১৪৫৪)- এ বহাল তবিয়তে কর্মরত।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গত ১৬ মে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার গোবরা গ্রামের সাব্বির হোসেনের সাথে শারমিন আক্তার সাথীর ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয়। সাব্বির ওই গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে। বিয়ের পর সাব্বিরকে দুই লাখ টাকার যৌতুক প্রদান করেন সাথীর পিতা মেহেদী হাসান শওকত। এরপর তিনি বিভিন্ন সময় যৌতুকের টাকার জন্য নির্যাতন করতেন। দিন যত যায় ততই নির্যাতনে মাত্রা বাড়তে থাকে সাথীর উপর। জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাকায় এখন ক্ষত-বিক্ষত সাথীর শরীর। এতকিছুর পরও সাথী সংসার করার জন্য স্বামীর সাথে ঢাকার উত্তরায় দক্ষিণখান আমতলা শাহী মসজিদের পাশে (বাসা নং ২৬০) ভাড়া বাসায় চলে যান। সেখানে নিয়ে বাসায় একা পেয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত ও গলায় ছুরি চালায় সাব্বির। রক্তাক্ত জখম হয় সাথী। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফুল ইসলামের কাছে চিকিৎসা দেওয়া হয়। নিকটস্থ থানায় এ বিষয়ে গত ৭ নভেম্বর একটি জিডি করেন সাথী। জিডি নং ৪০৪। জিডি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এসআই আসমাউল হুসনাকে নির্দেশ দেন ওসি। কিন্তু সাব্বিরের প্রভাবে সব কিছু আটকে গেছে। নির্যাতিত গৃহবধূ স্বামীর ক্ষত চিহ্ন নিয়ে শৈলকুপা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে পড়ে আছেন। আদালতে মামলা করেও তিনি প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে তার অভিযোগ। উপরন্তু স্বামী সাব্বির এখন সারাক্ষণ তাকে ও তার পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান সাথী।

সম্পর্কিত খবর