পঞ্চগড়ে হামলা-ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ, আহত ৫০

অগ্নিসংযোগ

কাদিয়ানীদের জলছা

পঞ্চগড়ে হামলা-ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ, আহত ৫০

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ে আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বার্ষিক ছালানা জলছা নিয়ে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৭ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন অন্তত: ৫০ জন। আহমদীয়া মুসলিম জামাত বা কাদিয়ানীদের শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকান ঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিরোধী পক্ষ খতমে নবুয়্যত সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিক্ষোভকারী খতমে নব্যুয়তের কয়েক হাজার সমর্থক পুলিশ সদস্যদের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকলে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। কাদিয়ানীদের জলসা স্থলের নির্মাণাধীন প্যান্ডেল ও মঞ্চ ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা কাদিয়ানীদের বাড়ি ঘর, দোকানপাটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা কাদিয়ানীদের একটি মসজিদে ও একটি বিদ্যালয়েও ভাঙচুর চালায়।

পঞ্চগড় শহরের আহমদনগর এলাকায় আগামী ২২ ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে বার্ষিক ছালনা জলসা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা । এ নিয়ে খতমে নবুয়াত সংরক্ষণ কমিটি নামের একটি ইসলামী সংগঠন গত কয়েকদিন থেকে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বার্ষিক ছালানা জলছা বাতিল ও তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে সভা-সমাবেশ স্বারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন আন্দোলন করে আসছিল।  

আন্দোলনে স্থানীয় নিরীহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও জড়িয়ে পড়ে। তারা কাদিয়ানীদের জলছা স্থলের আশপাশে ইসলামী ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দও সংবাদ সম্মেলন করে জলছা আয়োজনের ঘোষণা দেয়।

সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একাধিকবার ম্যারাথন বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গলবার সন্ধায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ নিয়েই সিরিজ বৈঠক চলছিল। সমস্যা সমাধানের জন্য বৈঠকে যোগ দেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাত হোসাইন, রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সন্ধায় বিক্ষোভসহ খতমে নবুয়াত সংরক্ষণ কমিটির সর্মথকরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে একত্রিত হতে থাকে । সন্ধা সাতটা থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে একের পর এক বিক্ষোভ মিছিল এসে চৌরঙ্গীতে মিলিত হতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। ঘণ্টাখানেক পর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান  আনোয়ার সাদাত সম্রাট ও পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে খতমে ন্যবুয়্যতের সমর্থকদের শান্ত হতে বলেন।  

এসময় এই দুই জনপ্রতিনিধি জানান, জেলা প্রশাসনের বৈঠকে জলছা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে । সেই সঙ্গে খতমে নবুয়্যাত সংরক্ষণ কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ারও আহবান জানান তারা। জনপ্রতিনিধিদের আহবান উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা কাদিয়ানীদের জলছাস্থলের দিকে যাত্রা শুরু করলে করতোয়া ব্রীজের উপর পুলিশ বাধা দেয়। এ সময়  পুলিশের বাধা উপক্ষো করে খতমে নবুয়্যতের সর্মথকরা উল্টো দিকে মিছিল এবং লাঠিসোঠা নিয়ে রাজনগর এলাকার ভেতর দিয়ে করতোয়া নদী পার হয়ে আহমদ নগরে জলছাস্থলে নির্মাণাধীন প্যান্ডেল ও মঞ্চ ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে।

অন্য আরেকটি উগ্রপন্থী সর্মথক কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে কাদিয়ানীদের বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ও আসবাবপত্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আতংকিত কাদিয়ানীরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালাতে থাকে। পালাতে থাকা কাদিয়ানীদের উপর লাঠি-শোটা, দেশীয় দা-ছুরি দিয়ে হামলা চালায় খতমে নবুয়াতের উগ্র সমর্থকরা। এতে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ১২ জন আহত হয় । আহতদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

খতমে নবুয়্যতের সমর্থকরা মসজিদ এবং একটি বিদ্যালয়েও হামলা ও ভাঙচুর করে । তবে ঘটনা শুরুর দেড় ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয় বলে অভিযোগ করেছেন কাদীয়ানী সম্প্রদায়ের সদস্যরা। পুলিশ, বিজিবি এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

অন্যদিকে শহরের করতোয়া ব্রীজের উপর পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা তর্কে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করলে পুলিশ লাঠিচার্জ এবং কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় ১৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়। তাদের পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গোলাম আযম ঘটনাস্থলে এসে হ্যান্ড মাইকে সবাইকে শান্ত হতে বলেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন- অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাত হোসাইন, রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমদ, ১৮ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায় নবিউস সুন্নাহসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা। তারা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/হায়দার/তৌহিদ)