‘মুই এ্যালা কার ভরসায় বাঁচিম’

চকবাজারে আগুন ট্রাজেডি

‘মুই এ্যালা কার ভরসায় বাঁচিম’

হুমায়ুন কবির সূর্য্য, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

ঢাকার চকবাজারে আগুন ট্রাজেডির শিকার হলেন কুড়িগ্রামের তিন হতভাগ্য তরুণ। হতদরিদ্র পরিবারের এই তিন যুবক কাজ নেয় ঢাকার একটি জুতোর দোকানে। ঘটনার দিন বুধবার রাত ১০টার দিকে দোকান থেকে অন্য দোকানে মালামাল ডেলিবারী করতে যায় তারা। এসময় ঘটনাস্থলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে ভ্যানেই মৃত্যুবরণ করেন।

নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাঠেরপাড় শিবেরচর এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে সজিব (২৩), নাগেশ্বরী উপজেলার হাজিপাড়া গোবর্ধনকুঠি গ্রামের মৃত মোজাম্মেলের ছেলে রাজু মিয়া (১৮) ও  একই উপজেলার আবু বক্করের ছেলে খোরশেদ আলম (২২)।

দুর্ঘটনায় হত এই তিন যুবককে শুক্রবার সকালে পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়। এই তিন যুবক কিশোর বয়স থেকেই কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকার চকবাজারে একটি জুতোর দোকানে কাজ নেয়। পরিবারে কর্মক্ষম এই তিন যুবকের লাশ বাড়িতে আনা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

একমাত্র ছেরে সজিবের মৃত্যুতে পাগল প্রায় বাবা আব্দুল কাদের। তিনি প্রলাপ বকছেন আর বলছেন। ‘বাবারে মোর ছওয়াটাক তোমরা আনি দেও। মুই এ্যালা কার ভরসায় বাঁচিম। ’ একমাত্র সন্তানের মৃত্যু তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না।

মৃত রাজু মিয়ার ভাই মাসুদ জানায়, বাঢ়িভিটা ছাড়া তাদের আর কিছু নেই। বাবা মারা যাওয়ার পর রাজু ঢাকায় জুতোর দোকানে কাজ যোগার করে। আর সে এলাকায় ভ্যান চালাতো। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে সে ঢাকায় কাজ করছে।

খোরশেদ আলমের মামা নবিউল্লাহ জানান, খোরশেদ আলম বাবার একমাত্র ছেলে। ৬ শতক বাড়িভিটা ছাড়া তাদের কোনো জমিজমা নেই। জুতার দোকানে কাজ করে সে দিনমজুর বাবাকে সাহায্য করত। সেই একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে আবু বক্কর সারাক্ষণ ছটফট করছেন আর বলছেন, ‘এ্যালা মুই কাক নিয়া থাকিম। ’

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মরদেহ দাফনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকায় বিশ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/সূর্য্য/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর