মুক্তিযোদ্ধা আমরু মিয়া। বয়স এখন ৮৬। বাড়ি সিলেটের সদর উপজেলার টুকের বাজার ইউনিয়নের কুমারগাঁও গ্রামে। জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন দেশকে শত্রুমুক্ত করার লড়াইয়ে।
দেশ স্বাধীন হয়েছে অনেক বছর হলো। কিন্তু, আমরু মিয়ার লড়াই আজও থামেনি। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে আজ ভিক্ষার থালা হাতে ঘুরে বেড়ান মানুষের দ্বারে দ্বারে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের অনেকে সুবিধা থাকলেও তার কিছুই পাননি তিনি।আমরু মিয়ার বাড়ি সিলেটের সদর উপজেলার টুকের বাজার ইউনিয়নের কুমারগাঁও গ্রামে। সিলেটের কুমারগাঁও বাস স্ট্যান্ড, তেমুখী পয়েন্ট, মদিনা মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষার থালা হাতে প্রায় দেখা যায় তাকে। দীর্ঘদিন ধরে নিরুপায় হয়ে ভিক্ষা করছেন। এক হাতে ভিক্ষার থালা আর আরেক হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। আমরু মিয়া বলেন, দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধে । তখন নিজের জীবনের কথা ভাবিনি।
ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ৫নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেছেন আমরু মিয়া। সিলেটে বিমানবন্দরে পাক হানাদারদের হাতে বন্দি থাকা নারীদের মুক্ত করার যুদ্ধে তিনি আঘাত পেয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
দেশকে স্বাধীন করার যুদ্ধে জয়ী হওয়া আমরু মিয়া নিজের জীবন যুদ্ধেই হেরে গেছেন। পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতেই এখন সংগ্রামে ব্যস্ত তিনি।
আমরু মিয়া বলেন, চোখের সামনে সহযোদ্ধাদের অনেকের মৃত্যু দেখেছি। শুধু ভেবেছি এ দেশকে স্বাধীন করতেই হবে। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল। এখনও কোনো মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাইনি। অন্য কোনও সুযোগ-সুবিধাও পাইনি। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করছি।
আমরু মিয়া যখন যুদ্ধের ময়দানে লড়াইয়ে লিপ্ত, তখন তার ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় এক সন্তান। বর্তমানে ১৩ সন্তানের জনক আমরু মিয়া। আমরু মিয়া বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছু করছে। একজন অসহায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জীবনের শেষবেলায় এসে আমার একটাই চাওয়া, মুক্তিযোদ্ধা হিসেব সম্মান নিয়ে যেন মরতে পারি।