কনকনে শীতে জীবন সংগ্রামে পঞ্চগড়ের কর্মজীবী নারীরা

বেশ কয়েকদিন থেকে পঞ্চগড়ে তীব্র শীত বিরাজ করছে। কনকনে বাতাস আর হিম ঠান্ডায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। নেই রোদ, সূর্যের দেখা। বয়ে যাচ্ছে ঠান্ডা বাতাস। কুয়াশায় আবৃত সবকিছু। ঝিরি ঝিরি পড়ছে শিশির বিন্দু। পানিতে হাত দিলেই বরফের অনুভব। মাঘ মাসের ঘনশীতে অসস্থির জীবন যাপন। খুব দরকারি কাজ ছাড়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

এই বিরূপ আবহাওয়ায় ভালো নেই জেলার কর্মজীবী নারীরা। প্রতিদিন ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে একখণ্ড শীতের কাপড় পরেই কাজ করতে হচ্ছে তাদের।  

জেলার প্রায় ২০ হাজার নারী পাথর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে জড়িত। অনেকেই পাথর ক্র্যাশিং মেশিনে পাথর ভাঙার কাজ করেন। অনেক নারী এখন কৃষিকাজে জড়িত। কেউ কেউ হোটেলে বা বাসা বাড়িতে করছেন রান্নার কাজ। প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার নারী শ্রমিক চা বাগান ও চা কারখানার বিভিন্ন কাজে সংশ্লিষ্ট। অনেকে বাড়িতে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল পালন করে পরিবারে বাড়তি আয় যোগ করছেন।  

এসব নারীকে উপার্জনের পাশাপাশি করতে হচ্ছে ঘর গৃহস্থালির কাজ। কাপড় কাঁচা, রান্না বান্না, ছেলে মেয়ে লালন পালনসহ নানা রকমের কাজ করতে হচ্ছে তাদের। শীতের তীব্রতা গায়ে মেখেই কাজ করতে হচ্ছে তাদের। অনেকের শীতের কাপড় নেই। বাড়তি শীতের কাপড় কেনার সামর্থ্যও নেই।  

এদিকে শীতের তীব্রতায় পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আয় কমে গেছে। কাজ কর্মের অভাব পড়েছে।  

শীতের মধ্যে বাসন পরিষ্কার করছেন এক নারী

তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার ডাক্তারপাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম জানান, পাথর ভাঙা ( ক্র্যাশিং) মেশিনে কাম করে প্রতিদিন ৩-৪শ’ টাকা আয় করি। স্বামী অন্য কাজ করে। বর্তমানে ওর কাজ নেই। ঠান্ডায় হাত পা জড়ো হয়ে আসে। এই ঠান্ডায় রান্নাবাড়ার কাজ করা খুব কঠিন। কাপড়তো কাঁচা যায় না। পানি বরফের মতো ঠান্ডা।  

তিনি আরও বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেশি। খাবো নাকি কাপড় কিনবো। মোর দুই মেয়ের জন্য কিছু কিনতে পারিনি। খুব ঠান্ডা । পুরনো কাপড় দিয়েই চলেছে।  

চা শ্রমিক মরিয়ম আক্তার জানান, ঠান্ডা পানিত বাসন কাসন মাজা খুব কষ্টের। তারপরও কাজ করা লাগে।  

এসব দরিদ্র নারী সরকারি বেসরকারিভাবে শীতের কাপড় এখনো পায়নি। তারা বলছেন, কত জনেই তো কাপড় পায়। যাদের আছে তারাই পায়।  

নারী উন্নয়ন কর্মী ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন পরস্পরের নির্বাহী পরিচালক আক্তারুন্নাহার সাকি জানান, পঞ্চগড়ের দরিদ্র নারী শ্রমিকদের শীতকালে কষ্ট বেড়ে যায়। বিশেষভাবে তারা শীতের সহযোগিতা পায় না।  তিনি সরকারি বেসরকারিভাবে তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানান।  

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত সাড়ে ২৮ হাজার শীতের কম্বল পাওয়া গেছে। আমরা উপজেলাভিত্তিক জনসংখ্যার অনুপাতে বিতরণ করছি। শীত ক্রমশ বাড়ছে। আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। আরও কম্বল বরাদ্দের জন্য চাহিদা দিয়েছি। এগুলো আসলেই আমরা বিতরণ করবো।

news24bd.tv/আইএএম