পরিবারসহ এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় রাহুল আনন্দকে

জনপ্রিয় ব্যান্ড দল জলের গানের নেতৃত্বে থাকা রাহুল আনন্দের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার (৫ আগস্ট) তাঁর বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ছাত্রদের সঙ্গেই ছিলেন রাহুল। নিজের দলের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তবে সরকার পতনের পর সেই রাহুল আনন্দের বাড়ি্তেই হামলা করা হয়েছে।

রাহুল আনন্দের বাড়িতে হামলার বিষয়ে অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে বিবৃতি দিয়েছে জলের গান। বিবৃতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে বাড়িতে রেকর্ড করা শেষ গানটি।

ব্যান্ডটি লিখেছে, জলের গানের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি শুধু রাহুল আনন্দের বসত বাড়ি ছিলোনা; ছিলো পুরো দলটির স্বপ্নধাম, আনন্দপুর। যেখানে তৈরি হয়েছে কত গান, কত সু্র, আর দাদার ভাবনা প্রসূত শত শত বাদ্যযন্ত্র। শুধু তাই নয়। জলের গানের অফিশিয়াল স্টুডিও হিসেবেও ব্যবহৃত হতো বাড়িটি। দলের সকলের দলগত সংগীত চর্চা থেকে শুরু করে, সকল স্টুডিও ওয়ার্ক – রেকর্ডিং, মিক্সিং, এডিটিং এখানেই হতো।  

বাড়ির দরজা সব সময়ে খোলাই রাখতেন রাহুল। খুব সহজেই যাতে প্রয়োজনে তার কাছে পৌছানো যায় সেই চিন্তা থেকেই এটি করেছিলেন রাহুল। তারা লিখেছেন, যারা নিয়মিত এই বাড়িতে যাতায়াত করতেন, তারা জানেন যে রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার বাড়িটির সাদা গেটটি সবসময় খোলাই থাকতো। তাতে তালা দেয়া হতোনা। যে কেউ, যেকোনো দরকারে যেন দাদার কাছে পৌঁছোতে পারে সেই ভাবনায়। আর যারাই দিনের যেকোন প্রান্তে এই বাড়িতে এসেছেন, সকলেই একটি চিত্রের সাথে খুব পরিচিত, তা হলো-  রাহুল আনন্দ মাটিতে বসে একটি সিরিশ কাগজ হাতে নিয়ে তাঁর নতুন বাদ্যযন্ত্রের কাঠ ঘষছেন।    

গত বছর রাহুল আনন্দের বাড়িতে এসেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। গানে, গল্পে, আড্ডায় রাহুল আনন্দের সঙ্গে কাটিয়েছেন প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। তাঁর বানানো বাদ্যযন্ত্রের প্রশংসা করেছিলেন তিনি।  

তারা সবাই নিরাপদে আছেন উল্লেখ করে ব্যান্ডটি লিখেছে, রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার, এবং আমাদের সকলের প্রিয় জলের গানের এই বাড়িটি আর নেই।  সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এবং আশীর্বাদে বাড়ির সকল সদস্য নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন এবং এখন নিরাপদে আছেন। কিন্তু, রাহুল দা এবং আমাদের দলের সকল বাদ্যযন্ত্র ,গানের নথিপত্র এবং অফিশিয়াল ডকুমেন্টস ছাড়াও, দাদার পরিবারের খাট-পালং, আলনা আর যাবতীয় সব পুড়ে ছাই  হয়ে গেছে! সব! 

ঘর থেকে বের করে দেওয়ার সময় রাহুলের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী এবং ১৩ বছর বয়সী ছেলে। তারা লিখেছেন, সকলের জন্য নিরন্তর ভেবে যাওয়া মানুষটিকে পরিবারসহ এক কাপড়ে তাঁর নিজ ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এর প্রভাব  হয়তো আজীবন লালিত থাকবে তাঁর সন্তানের মনে; যার বয়স কিনা মাত্র ১৩ বছর – ভাবতেই কষ্ট হয়। এতদিন ধরে তিলতিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন সংসারের সবকিছু দাউদাউ করে জ্বলেছে চোখের সামনে। কিছু মানুষের ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার আগুনে! 

আবার ফিরে আসার আশ্বাস দিয়ে তারা বলেন, এই বাদ্যযন্ত্র, গান বা সাজানো সংসার হয়তো আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে আবার গড়ে নিতে পারবো। কিন্তু, এই ক্রোধ আর  প্রতিহিংসার আগুনকে নেভাবো কিভাবে! কেন আমরা ভালবাসা আর প্রেম দিয়ে সবকিছু জয় করে নিতে পারি না? যেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি, সেই স্বাধীনতার রক্ষায় যদি একইভাবে এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হই, তাহলে চরম নিরাশা, অপমান ও লজ্জায় নিজেদের গানই গেয়ে উঠি এক ভগ্ন হৃদয়ে-      "কোন্ ছোবলে স্বপ্ন আমার হলো সাদা কালো?        আমার বসত অন্ধকারে; তোরা থাকিস ভালো!"

তারা আরও লেখেন, সকল প্রাণ ভালো থাকুক। নতুন আগামীর স্বপ্নকে আমরাও অভিবাদন জানাই একইভাবে। কিন্তু, নিজের উল্লাসের চিৎকার এবং সজোর হাততালিতে কারো স্বপ্ন ভেঙে না দেই!

ফেসবুক পোস্টে জুড়ে দেওয়া গানটি ছিল ওই বাড়িতে রেকর্ড করা শেষ গান। সবশেষে তারা বলেন, এই গানটি আমাদের এই ঘরে রেকর্ড করা শেষ গান। ভিডিওতে যা দেখছেন, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। উত্তাল সময়ের সাথে আমরাও একাত্ম ছিলাম গানে গানে। এই শেষ কাজটিই তবে সকলের জন্য আনন্দ উপহার।  

news24bd.tv/এসএম