ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ বিষয়ে পরিষ্কার করলেন অনেকে

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর ঘুরেফিরে একটি আলোচনা এখন হচ্ছে সেটি হচ্ছে, এই সরকারের মেয়াদ কতদিন থাকবে। বাংলাদেশের সংবিধান কিংবা কোন আইনে এই সরকার ও এর মেয়াদ সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। সে কারণেই এ প্রশ্ন।   সরকার প্রতিষ্ঠার পরপরই কয়েকটি দল নির্বাচনের কথা বললে এখন আর চাপ দিচ্ছে না। বলছে প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার।   নতুন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, “নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করার জন্য যতদিন থাকার দরকার হবে, অন্তর্বর্তী সরকার ততদিন থাকবে”। বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘নবগঠিত সরকারের মেয়াদের বিষয়ে এখন আলোচনা বা সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সম্ভব নয়। আপনি কি সংস্কার চান, সেটা না বুঝে তো আমি মেয়াদের কথা বলতে পারব না। সংস্কার যদি আপনারা না চান তাহলে আরেক কথা। কাজেই এখন মেয়াদ মেয়াদ করে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। আরেকজন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, “এ (মেয়াদের) বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের যেহেতু গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তিতে গঠিত একটি সরকার এবং অনেকগুলো সংস্কারের কথা আমরা বলেছি- সেগুলো আমাদের করতে হবে। সেটা যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি সুন্দর সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসার পর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এই সরকারের মেয়াদ শেষ করব। ” বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এখন মেয়াদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত সংস্কারে। সংস্কার করতে যত সময় লাগবে সেটা তারা করবেন। সেই সময় তারা নিবেন”। আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “যখন ওনাদের মনে হবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরি হয়েছে তখন ওনারা নির্বাচনের ঘোষণা দিবেন। তার আগে এই সরকারের মেয়াদ নিয়ে কোন ধারণা পাওয়া যাবে না”।   ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম বলেন, “এটাকে কেয়ারটেকার সরকার বলা হচ্ছে না। সেটা বলা হলে মানুষের মনে তিন মাস মেয়াদের ধারণা হবে। অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ছিল তিন মাস। কিন্তু এটা অন্তর্বর্তী সরকার। ফখরুদ্দিনের সেনা সমর্থিত সরকার ছিল দুই বছর। আর এই সরকার ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হয়েছে। দেশের মানুষের একটি আকাঙ্ক্ষা আছে তাদের কাছে। তাই সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার ওপর এই সরকারের মেয়াদ নির্ভর করছে”। এদিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের সম্পাদকরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘অন্তত দুই থেকে তিন বছর’ দায়িত্ব পালনের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। (৩ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ২০ সম্পাদকের মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ, কালের কণ্ঠের হাসান হাফিজ, আমাদের সময় সম্পাদক আবুল মোমেন, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ,  বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, প্রতিদিনের বাংলাদেশের মুস্তাফিজ শফি, দেশ রূপান্তরের মোস্তফা মামুন, কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন । উল্লেখ্য, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ছিল তিন মাস। নির্বাচনের জন্যই ওই সরকার গঠিত হতো। কিন্তু এই সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা ৮ আগস্ট শপথ নিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের আলোকে এই সরকারের বৈধতা দিয়েছেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে মতামত দেন সুপ্রিমকোর্ট। সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে বলা বলা আছে, “যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে আইনের এইরূপ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, যাহা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন। ” কিন্তু এই মতামতে সরকারের কোনো সময়সীমা নেই।

news24bd.tv/ডিডি