জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই বিপ্লবে শহীদ সকলের স্বপ্ন পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেঁজগাওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

এসময় তিনি সবাইকে জুলাই নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টার দৈনিক কার্যসূচি অনুযায়ী, বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে এ মতবিনিময় সভা চলে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এতদিন চুপচাপ শুয়ে শুয়ে স্বপ্নের মধ্যে আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিল। তাদের স্বপ্ন শিক্ষার্থীরা ভেঙে দিয়েছে। তারা কী এখন চুপচাপ বসে থাকবে? মোটেও না। তারা চেষ্টা করবে তোমাদের যেন দুঃস্বপ্নে লুকিয়ে দেওয়ার। তারা চেষ্টার ত্রুটি করবে না। তাই যেটা শুরু করছো সেই কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে বেরিয়ে যেও না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্ম থেকে এই সুযোগ আর আসেনি। যে সুযোগ তোমরা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছ এটা যেন হাতছাড়া না হয়। এই সুযোগ হাত ছাড়া হলে বাংলাদেশ আর রাষ্ট্র থাকবে না। এটা শুধু রাষ্ট্র না, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্রে যেন পরিণত হয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীদের দেখছি আর ভাবছি, কী একটা স্বপ্ন আমাদের সামনে, জাতির সামনে তোমরা নিয়ে এসেছ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে তাদের স্মরণ করে তিনি বলেন, যারা শহীদ হয়েছে আজ তারা আমাদের সঙ্গে বসতে পারতো। কিন্তু সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হয়নি। যখন হাসপাতালে আহতদের দেখার জন্য যাই তাকাতে কষ্ট হয়।

তিনি আরও বলেন, একজন তরুণকে যখন দেখতে যাই তখন সে জিজ্ঞেস করে স্যার, ক্রিকেট খেলব কীভাবে? ক্রিকেট তার মাথা থেকে সরছে না। যতবার দেখি, মনে প্রশ্ন জাগে আমরা এমন বাংলাদেশ বানিয়েছি?

সরকারপ্রধান বলেন, কালকে একটা হাসপাতালে গেলাম, আবার সেই দৃশ্য। তরুণ প্রাণ, অনেকের মাথার খুলি উড়ে গেছে। অনেকের শরীরে গুলি রয়ে গেছে। বেঁচে আছে।  

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, যতবার শুনি, যতবার দেখি, আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয়, যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করব। এটা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।  

তিনি বলেন, আমি সাক্ষাতের সময় যে দৃশ্য দেখছি সেটা তো সবাই দেখছে না। যারা হাসপাতালে আসছেন তারা হয়তো অনুধাবন করতে পারছে। মানুষকে জানাতে হবে, বোঝাতে হবে। কি নৃশংসতা ছিল।

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এই আন্দোলন দমনে তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার আগ্নেয়াস্ত্রের বাড়াবাড়ি রকমের ব্যবহার করে বলে অভিযোগ ওঠে। জুলাইয়ের মাঝমাঝিতে কয়েক শ’ ছাত্র-জনতার প্রাণ ঝরে। পরে সেই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।

এই আন্দোলন দমনে হাসিনার সরকার আরও কঠোর হয়। নির্বিচারে হত্যা করে ছাত্র-জনতাকে। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ওই সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে চলে যান।

৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।

news24bd.tv/JP