মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও বাইডেনের কূটনৈতিক ব্যর্থতা

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রায় এক বছর ধরে চলা সংঘাতের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনা থমকে আছে, হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। নতুন করে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘাত আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এতো যুদ্ধ-বিগ্রহের মুখোমুখি হয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ক্রমাগতভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সীমিত প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের সীমাবদ্ধতা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান সামরিক ও কূটনৈতিক মিত্র হিসেবে অবস্থান করলেও ইসরায়েলকে শান্তি প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে ও হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল গাজায় হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করা, কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গেই বেসামরিক প্রাণহানি কমানো এবং সংঘাতকে বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করা।

কিন্তু এই কৌশল বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েল সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং লেবাননে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। যেখানে কয়েক শ লেবানিজ নিহত হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের প্রভাব ব্যর্থ হয়েছে, কারণ ইসরায়েল তার সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

মার্কিন কূটনীতির সংকট বাইডেন প্রশাসনের ওপর আরোপিত সমালোচনার একটি প্রধান কারণ হলো ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে না পারা। বাইডেন, ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী এবং জাতিসংঘে কূটনৈতিক রক্ষাকবচ হিসেবে উল্লেখযোগ্য প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বাইডেন প্রশাসনের একাধিক উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইসরায়েল তার নিজস্ব কৌশল চালিয়ে গেছে, যার ফলে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার প্রচেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য একটি উদাহরণ হলো, নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য ইসরায়েলকে সাময়িক বিরতির আহ্বান জানানোর পরপরই নেতানিয়াহু একটি টেলিভিশন বিবৃতিতে তার সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এই ঘটনাটি মার্কিন কূটনীতির সীমাবদ্ধতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরে।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্কুচিত বিশ্বাসযোগ্যতা বাইডেন প্রশাসনকে পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে কিছু প্রশংসা পেলেও (ইসরায়েলকে ইরানের হামলা থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে) বিদেশি কূটনীতিকদের মতে, গাজা যুদ্ধে তার প্রতিক্রিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অনেকে মনে করেন, বাইডেনের গাজা যুদ্ধের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অটল সমর্থন প্রাথমিকভাবে একটি কৌশলগত ভুল ছিল। এর ফলে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব সংকটের মুখে পড়েছে এবং এই অঞ্চলের বিরোধীরা তেমন প্রভাবিত হচ্ছে না।

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইরানের মদদপুষ্ট হয়ে বাণিজ্যিক জাহাজগুলির ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা এই ধরনের আক্রমণ প্রতিরোধে সামরিক রসদ পাঠিয়েছে। এমনকি এই সামরিক তৎপরতা সত্ত্বেও হুথিদের আক্রমণ কমেনি। যা প্রমাণ করে যে, বাইডেন প্রশাসনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সংকট নিরসনে যথেষ্ট নয়।

বাইডেনের উত্তরাধিকার ও ভবিষ্যৎ সংকট বাইডেনের প্রশাসনের ওপর একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন রয়ে গেছে–মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংকট তার বৈদেশিক নীতির উত্তরাধিকারে কেমন প্রভাব ফেলবে? একসময় মার্কিন কূটনীতির সাফল্য হিসেবে বিবেচিত ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টা এখন কার্যত স্থবির হয়ে গেছে। গাজা যুদ্ধ ও লেবানন সংঘাত এই প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণভাবে পেছনে ফেলে দিয়েছে।

যুদ্ধবিরতির কোনো সমাধান না আসলে, বাইডেন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি একটি অমীমাংসিত সংকট হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রশাসনের ওপর পড়তে পারে।

তথ্যসূত্র: আজ জাজিরা 

news24bd.tv/SHS