প্রেমের টানে বাংলাদেশে আরও এক বিদেশিনী

প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসা বিদেশিনীদের তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণসহ নানা সংস্কার ও ভেদাভেদ ভুলে শুধু প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসছেন অনেক বিদেশি তরুণী। ঘর ছেড়েছেন ভালোবাসার টানে। এসেছেন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, আয়ারল্যান্ড, পোল্যান্ড, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। এবার সেই তালিকায় নাম লেখালেন ফিলিপাইনের ইয়াসমিন। প্রেমের টানে সুদূর সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীতে এসেছেন তিনি। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন বাংলাদেশি তরুণ রুবেল আহমেদের সঙ্গে।   ইয়াসমিন বর্তমানে উপজেলার কাশিপুরের প্রেমিক রুবেল আহমেদের বাড়িতেই অবস্থান করছেন।

এ প্রসঙ্গে প্রেমিক রুবেল জানান, সিঙ্গাপুরে একটি গ্লাস কোম্পানিতে কর্মরত থাকায় তার সঙ্গে ফিলিপাইনের ফারান্দ ইসলামের মেয়ে ইয়াসমিনের পরিচয়। সেই পরিচয় থেকেই তাদের মধ্যে প্রেম। পরিবারের লোকজন বিষয়টি শুনে আমাদের সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা ২৫ মার্চ ঢাকায় একটি আদালতে এফিডেভিট করার মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। বর্তমানে আমরা দুজনেই ইসলাম ধর্মমতে স্বামী-স্ত্রী। বাকিটা জীবন একসঙ্গে কাটাতে চাই।

রুবেলের বাবা বেলাল হোসেন জানান, আমি কৃষক মানুষ। তারা যেহেতু একজন আরেকজনকে পছন্দ করে, সে জন্য তাদের সুখের কথা চিন্তা করে আমরা তাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছি। তারা সুখে থাকলেই আমরা সুখে থাকবো। বাড়িতে অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজনদের জন্য বৌভাতের অনুষ্ঠান করা হয়েছে।

এসময় তিনি ছেলে-বউয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চান। নতুন এ দম্পতি শিগগিরই আবার সিঙ্গাপুরে তাদের কর্মস্থলে ফিরে যাবেন বলে রুবেলের পরিবার থেকে জানা গেছে।

এদিকে গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন তরুণীরা। কখনো আফ্রিকা, নাইজেরিয়া থেকে, কখনো বা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা থেকে। বাংলাদেশে ছুটে আসা এসব নারীদের অনেকেরই আবার ছিল আগের সংসার। কোন কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশি যুবকের সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয় হয়েছে বিদেশের মাটিতে। কখনো সোশ্যাল মিডিয়ায়।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঝিনাইদহে এলিজাবেথ

ভালোবাসার টানে বাংলাদেশের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছী গ্রামে মিঠুন বিশ্বাসের বাড়িতে ছুটে আসেন মার্কিন তরুণী এলিজাবেথ এসলিক। এলিজাবেথের বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের ওরিয়েন্ট এলাকায়। ১৯৯৭ সালের ৭ জুলাই জন্ম তার। আর মিঠুন একটি এনজিওতে কাজ করেন। এর আগে দেড় বছর সিঙ্গাপুরে ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের মে মাসে ফেসবুকের মাধ্যমে মিঠুন ও এলিজাবেথের পরিচয় হয়। সেই থেকে চলে প্রেম নিবেদন। মিঠুন বিশ্বাস গণমাধ্যমে বলেন, ‘আড়াই বছরের সম্পর্কের পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই বিয়ে করার। দুজনের পরিবারকেও তা জানাই। এতে আমার পরিবার কোনো আপত্তি না জানালেও এলিজাবেথের পরিবার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ’

এলিজাবেথের পরিবার বাংলাদেশকে উগ্রপন্থি মুসলিম দেশ বলে মনে করে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে এলিজাবেথ গণমাধ্যমকে বলেন,  ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসী আছে, এমন ভয় ছিল। এসে দেখি নেই। বাংলাদেশ ভালো, বিশ্বের যে কোনো দেশের মানুষের চেয়ে আতিথেয়তায় সেরা। ভালোবাসার টানে নিজের মাতৃভূমি ছেড়েছি। ’ 

বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক দূরত্ব ঘুচিয়ে, প্রেমের সাগরে ডুবে যুগলবন্দী হয়েছেন তারা। খ্রিস্টান ধর্মের বিধান অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা।

মালয়েশিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গায় ইসহারি

প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসেন ইসহারি নামের চল্লিশোর্ধ এক মালয়েশিয়ান নারী। তিনি বাংলাদেশে এসে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের বাড়িতে উঠেন। এ ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। জানাজানি হলে এলাকাবাসী ওই মালয়েশিয়ান নারীকে দেখতে জহুরুলের বাড়িতে ভিড় করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে জহুরুল ইসলাম ২১ বছর বয়সে মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে চার বছর অবস্থান করে দেশে ফিরে আসেন। এ সময়ই তার সঙ্গে পরিচয় হয় ইসহারির। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর জহুরুল দেশে ফিরে আসলে তার কিছুদিন পরই মালয়েশিয়া থেকে ছুটে আসেন চল্লিশোর্ধ্ব ইসহারি। তিনি মালয়েশিয়ার ইপে এলাকার সুন্দরামের মেয়ে। ইসহারি বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাবি করেন, একই এলাকায় কাজের সুবাদে জহুরুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বছরখানেক আগে তারা বিয়ে করেন। এরপর বাংলাদেশে চলে আসেন তার স্বামী জহুরুল।

থাইল্যান্ড থেকে নাটোরে সুফিয়া

প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসেন থাই-কন্যা সুফিয়া। বিয়ে করেন ভালোবাসার মানুষকে। নাটোরের আদালতে বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করেন তারা। এই দম্পতি হলেন থাইল্যান্ডের সুপুত্তো ওরফে ওম ওরফে সুফিয়া খাতুন এবং বাংলাদেশের অনীক খান। সুপুত্তো ওরফে সুফিয়া খাতুন গণমাধ্যমে বলেন, ‘থাইল্যান্ডের সমাজে বহু বিবাহ একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এটা পছন্দ করি না। তাই বিয়ে করছিলাম না। হঠাৎ করে ফেসবুকে বাংলাদেশের অনীকের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওর সরলতা আমাকে মুগ্ধ করে। ধীরে ধীরে ওর প্রতি আমার আস্থা জন্মায়। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। ওকে আপন করে নেওয়ার জন্য বারবার এ দেশে ছুটে এসেছি। এবার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বিয়ে করে আমি এখন দারুণ সুখী। ’ ৩৬ বছর বয়সী সুপুত্তো পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে ব্যাংকে চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন ফাস্ট ফুডের ব্যবসা করেন। ফেসবুকের মাধ্যমে বাংলাদেশের ২২ বছরের তরুণ অনীক খানের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

পোল্যান্ড থেকে রাজারবাগে ক্যাটরিনা

ক্যাটরিনা স্যান্ড্রা পোল্যান্ডের অধিবাসী। চাকরির সুবাদে আছেন লন্ডনে। বাবা মারা গেছেন। মা থাকেন পোল্যান্ডে। তার সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় বাংলাদেশ থেকে লন্ডরে পড়তে যাওয়া শামীম আহমদের। তার পৈতৃক বাড়ি রাজারবাগ। বাবা সরকারি চাকরিজীবী। তারা শুধুই বন্ধু, তখনো কেউ কাউকেই দেখেনি। এদিকে শামীমের জন্য লন্ডনে এইভাবে লুকিয়ে থাকা বিনা চাকরিতে আর সম্ভব হচ্ছিল না। তাই সে দেশে ফেরার জন্য ওখানকার পুলিশের কাছে ধরা দেয়। এরপর ক্যাটরিনার চেষ্টাতে শামীমকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কথা ছিল ক্যাটরিনা স্যান্ড্রা বাংলাদেশে আসবে জুলাইয়ের ১ তারিখ। কিন্তু তখন না আসায় সবাই ভেবেছিল ক্যাটরিনা আর আসবে না। কিন্তু, সবকিছু গুছিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। শামীমের সঙ্গে ক্যাটরিনা স্যান্ড্রার বিয়ে হয় মুসলমান রীতিতে। বিয়ের আগে স্যান্ড্রা নিজের ইচ্ছায় মুসলমান হন।

অস্ট্রেলিয়া থেকে বরিশালে এমিলি

প্রেমের টানে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে সপরিবারে বরিশালে এসে ধর্মান্তরিত হয়ে প্রেমিককে বিয়ে করেন অস্ট্রেলিয়ার তরুণী এমিলি পার। মনের মানুষকে পেতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বরিশালের সাইদুল আলম রুমানের স্ত্রী এমিলি পারের নতুন পরিচয় হয় এমিলি আলম।

বরিশাল মহানগরীর আলেকান্দা এলাকার মরহুম শামছুল আলম বাবুলের ছেলে সাইদুল আলম রুমানকে বিয়ে করতে পরিবারের ১৮ সদস্য নিয়ে বাংলাদেশে আসেন এমিলি।

এমিলির পিতা মাতা, ভাই বোন, খালা খালু, ফুফু, ফুফাসহ ১৮ জন বরিশালে আসার পরপরই মুসলিম রীতি অনুযায়ী বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

অস্ট্রেলিয়া থেকে মাগুরায় ক্যাথরিনা

অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার সুবাদে বাংলাদেশি কাজী মারুফুজ্জামান চন্দনের সঙ্গে অস্ট্রেলীয় নারী ক্যাথির পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেম এবং প্রেমের টানেই সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে মাগুরায় এসে সংসার পাতেন আসান ক্যাথরিনা নামের এই নারী। মাগুরা শহরের কাজী মারুফুজ্জামান চন্দনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তখন মেলবোর্নের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী ক্যাথরিনা।  পারিবারিকভাবে সবাই তাকে ক্যাথি বলেই ডাকে।

 

মালয়েশিয়া থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফাতেমা

ভালোবাসার জন্য মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসেন ফাতেমা বিনতে আবদুর রহমান।  বিয়ের উদ্দেশে আশিকুর রহমান আশিকের সঙ্গে মালয়েশিয়ান তরুণী ফাতেমা হাজির হন ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট মাহবুব হাসান রানার চেম্বারে। ফাতেমাকে দেখে উপস্থিত অনেকে প্রথমে মনে করেছিলেন তিনি হয়তো আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়ে।

আশিকের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার মন্দিবাগে। ফাতেমাকে সেখানেও নিয়ে যান আশিক।  ফাতেমা তখন কুয়ালালামপুরের একটি কলেজের ছাত্রী। ৮ বছর আগে আশিক মালয়েশিয়া যান কাজের সন্ধানে। ২০১৩ সালে তার সঙ্গে ফাতেমার পরিচয় হয়।

 

আয়ারল্যান্ড থেকে সিলেটে ইফা

ভালোবাসার টানে সুদূর আয়ারল্যান্ড থেকে বিয়ানীবাজারে ছুটে আসেন ডা. ইফা রায়ান। যথারীতি বাঙালি নারীর বেশেই লাল বেনারসি শাড়ি পরে বসেন বিয়ের পিঁড়িতে। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা তাজউদ্দিনের পুত্র মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে তার এ বিয়ে সম্পন্ন হয়।  বিয়ের অনুষ্ঠানে আয়ারল্যান্ড থেকে আসেন ইফার মা ক্যাটরিনা রায়ান, বাবা জন রায়ান ও ভাই অউন রায়ান। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ও আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, ২০০৯ সালের আয়ারল্যান্ডে যাওয়ার পর ডা. ইফা রায়ানের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার।

ব্রাজিল থেকে রাজবাড়ীতে সিলভা

ব্রাজিল কন্যা জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভার সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সঞ্জয়ের। পরিচয় গড়ায় প্রেমে। ভালোবাসার টানে সিলভা ব্রাজিল থেকে চলে আসেন প্রেমিকের বাড়িতে। এর আগে প্রায় দেড় বছর ধরে ফেসবুকে চলত তাদের যোগাযোগ। বাংলাদেশে আসার পর বিমানবন্দর থেকে সঞ্জয় তাকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নিজ বাড়িতে নিয়ে যান।

এ খবর এলাকায় জানাজানি হলে ব্রাজিলিয়ান তরুণীকে এক নজর দেখার জন্য নারী-পুরুষসহ অনেকে ভিড় জমান। জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভা ব্রাজিলের সাওপাউলোর বাসিন্দা। তিনি সেখানে সরকারি চাকরি করেন। অন্যদিকে সঞ্জয় ঘোষ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বাজার এলাকার বালাই ঘোষের ছেলে। সঞ্জয় শ্যামলী পরিবহনের ঢাকা-কলকাতা সার্ভিসে কর্মরত বলে জানা যায়।

মালয়েশিয়া থেকে টাঙ্গাইলে চার সন্তানের মা জুলিজা

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়। ছয় মাস ধরে কথা বলতে বলতে প্রেম। অবশেষে এক মাসের ভ্রমণ ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন মালয়েশিয়ান তরুণী জুলিজা। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কলেজপড়ুয়া মনিরুল ইসলাম ভালোবাসার মানুষটিকে স্বাগত জানাতে মা-বাবা ও বোনদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির হয়ে জুলিজাকে স্বাগত জানান। জুলিজার দেওয়া তথ্যমতে তার বয়স ২২ বছর আর তার বাবার নাম কামিস। জুলিজা গণমাধ্যমে জানান, তিনি পড়াশোনা শেষ করে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাবার বেকারির ব্যবসা পরিচালনা করেন। মনিরুলের কাছে এ দেশের প্রকৃতি সম্পর্কে জেনে বাংলাদেশ ও মনিরুলকে দারুণ পছন্দ হয়েছে তার। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে দেয় মনিরুলের পরিবার। কিন্তু, এরপরই জানা যায়, জুলিজা চার সন্তানের জননি। তার আগের স্বামীও বাংলাদেশি। নাম মো: আজগর আলী। বাড়ি রাজধানীর ঝিগাতলায়। তিনি চার সন্তানসহ জুলিজার ছবি পাঠান। সবচেয়ে ছোট সন্তানটির বয়স তখন একবছর। স্বামী-সন্তান ছেড়েই বিয়ের তথ্য গোপন করে ফেসবুক বন্ধুর টানে বাংলাদেশে ছুটে আসেন মালয়েশিয়ান এ তরুণী। এরপর অবশ্য পারিবারিক কারণ দেখিয়ে মালয়েশিয়া ফিরে যান জুলি।

রাশিয়া থেকে শেরপুরে সিভেতলেনা

প্রেমের টানে শেরপুরে ধর্মকান্ত সরকারের কাছে ছুটে আসেন রাশিয়ান তরুণী সিভেতলেনা। ধর্মকান্ত সরকার শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের ধীরেন্দ্র কান্ত সরকারের ছেলে। সনাতন ধর্ম মতে যজ্ঞ সম্পাদন করে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ-ইস্কনের শেরপুর শাখার সদস্যরা।

বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন পরিবারের লোকজন, বন্ধু-বান্ধব ও ইস্কন ভক্তসহ চার শতাধিক অতিথি। তাদের খাবারের তালিকায় ছিল পুষ্প অন্ন, ভুনা খিচুড়ি, সয়াবিনের রসাসহ ১৪ ধানের নিরামিষ। ধর্মকান্ত সরকারের পরিবার ও ইস্কন মন্দির সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে এইচএসসি পাসের পর উচ্চশিক্ষার জন্য ধর্মকান্ত সরকার চলে যান রাশিয়ায়। ভর্তি হন মস্কোর আছরাখান টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। ধর্মকান্ত সরকার রাশিয়া থাকতেই তাদের মাঝে পরিচয়, অতঃপর প্রেম এবং পরিণয়।  

 

ভিয়েতনাম থেকে চাঁদপুরে থিতু

প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসেন ৩০ বছর বয়সী ভিয়েতনামী তরুণী টিউ থিতু। প্রেমিক চাঁদপুরের যুবক আলমগীর। বয়স ৩৫। ভালবেসে সংসার পাতেন তারা। প্রেমের সূচনা হয়েছিল মালয়েশিয়ায়। আর এর  বাস্তব পরিণতি ঘটে বাংলাদেশের মাটিতে। মানুষের বিড়ম্বনা এড়াতে দীর্ঘদিন থাকেন তারা লোক চক্ষুর আড়ালে। এক পর্যায়ে এই দম্পতি নিজেদের এলাকায় গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লদের বাড়ির মৃত মোবারক হোসেনের ছেলে মো. আলমগীর হোসেন ১০ বছর আগে জীবিকার প্রয়োজনে মালয়েশিয়ায় জোহরবারুতে পাড়ি জমান। সেখানে এক চাইনিজ কোম্পানিতে চাকরি করেন। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে বাকান থানার ওয়েন তোং মহল্লায় টিউ থিতুর জন্ম। সেখানে বাবা মৃত চি ইউ তাই আর মা টিউ থিতু নিয়াত ও ৪ ভাই, ৩ বোনের মাঝে থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা শেষ করেন তিনি।

 

ইন্দোনেশীয়া থেকে পটুয়াখালীতে উলফিয়া

ফেসবুকে পরিচয়। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। এরপর প্রেম। সেই প্রেমের অমোঘ টানে নিকি উলফিয়া নামের দিওয়ানা তরুণী নিজ দেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে হাজারো মাইল পেরিয়ে উড়ে আসেন বাংলাদেশে। এয়ারপোর্টেই প্রথমবারের মতো চার চোখের দৃষ্টি বিনিময়। এর পরের গল্পটা সহজেই অনুমেয়। প্রেমিক ইমরান হোসেনের হাত ধরে সোজা তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নে। নিকি উলফিয়া নাকি ইন্দোনেশিয়ার সুরা বায়া বিভাগের জাওয়া গ্রামের সরকারী চাকুরিজীবী ইউ লি আন থো-এর মেয়ে। পাশাপাশি তিনি একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতাও করেন। আর ইমরান পটুয়াখালী সরকারী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে অর্নাস তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

ইমরান জানান, প্রায় এক ব্ছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ইন্দেনেশীয় এই মুসলিম  তরুণীর সঙ্গে তার পরিচয়, বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতা। এক পর্যায়ে তা অদেখার দূরত্ব ঘুচিয়ে প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। আমার পরিবার সম্পর্কে সব কিছু জেনেশুনেই আমার সাথে সম্পর্ককে স্থায়ী রূপ দিতে চেয়েছে সে। তাই সে আকুল হয়ে ছুটে এসেছে।