বাঙালি মাথা উঁচু করেই চলবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ায় ১৯৭১ সালে অনেক মুক্তিকামী মানুষকে পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যা করেছে। তবে সে মানুষগুলো জয় বাংলা স্লোগান দিয়েই বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ সুগম করে গেছেন। দেশের সকল অর্জনের মূলে থাকা ‘জয় বাংলা’কে তাঁর সরকার জাতীয় শ্লোগান ঘোষণার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বকে এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চেয়েছে যে, বাঙালি মাথা নিচু করে নয় বরং মাথা উঁচু করেই চলবে।

সোমবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দীপক ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) আয়োজিত ‘জয় বাংলা’ শীর্ষক উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি হোটেল শেরাটন প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান) অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই জয় বাংলা শ্লোগানটা আজ সকলের হয়েছে এবং এই শ্লোগানের মধ্য দিয়ে আমরা এটাই বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই- আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা বিজয় অর্জন করেছি, মাথা নত করে আমরা চলিনা, মাথা নত করে চলবোনা, বিশ্ব দরবারে বাঙালি মাথা উঁচু করেই চলবে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকেই বঙ্গবন্ধু এই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি নিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য। যে মানুষগুলো ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল।

তিনি বলেন, জাতির পিতা যখন ৬ দফা দিলেন ঠিক তাঁর আগেই ছাত্রলীগকে এই জয়বাংলা শ্লোগানটাকে মাঠে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এর অন্তর্নিহিত অর্থ একটাই ছিল- সংগ্রামের মধ্যদিয়ে মানুষের মাঝে স্বাধীনতার চেতনাটাকে জাগ্রত করা এবং এই শ্লোগানের মধ্য দিয়েই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন। যাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ জাতির পিতা নিয়েছিলেন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে।

আমাদের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের মাহাত্ম তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের যে ভাষণ, সেই ভাষণও তিনি শেষ করেন ‘জয় বাংলা’ বলে। অর্থাৎ বাঙালির যে বিজয় হবে সে সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর মোকাবিলা করতো এই জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে। এই শ্লোগান প্রতিটি মুিক্তকামী মানুষকে অনুপ্রাণিত করতো।

জাতির পিতার দূরদর্শিতাই ছিল আমাদের সকল অর্জনের মূল শক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছিলেন সে সময়ে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে তিনি গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে এনে রেখে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সময় যে অপপ্রচার ছিল স্বাধীনতা অর্জনের পরও সেটা থেমে থাকেনি। অর্থাৎ স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্ত সবসময় ছিল। যখন অনেক ষড়যন্ত্র করেও মানুষের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছতে পারেনি তখনই চরম আঘাত এলো ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বেসরকারি ব্যাংকের আর শাখা খোলার সুযোগ না দিয়ে সরকারি ব্যাংকের অনেক শাখা বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এমনকি আমাদের সরকারি বাস চলাচল করবে সেখানেও বাধা দেয়া এবং সেটাও বন্ধ করার প্রচেষ্টা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো এতই দুর্বল ছিল যে আন্তর্জাতিক সংস্থা যাই পরামর্শ দিত তাই তারা মেনে চলতো। নিজেদের কোন চিন্তা চেতনা বা পরিকল্পনা ছিলনা। কিন্তু আমি সরকারে আসার পর থেকে ঐসব পরামর্শ শুনি নাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শুধু একটা কথা বলেছি এই দেশ আমাদের। আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। আমাদের এদেশের মানুষের মঙ্গল কিসে হবে আমরাই তা সবথেকে ভাল করে জানি। যেটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক সেটাই আমরা করবো।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ব্যাংক, বীমা থেকে শুরু করে বেসরকারি টেলিভিশন, বেসরকারি রেডিও, সকলের হাতে মোবাইল ফোন, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেয়া সহ ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে সক্ষম হয়েছি।

ব্যাংক ব্যবস্থাকে তৃণমূলে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মাত্র ১০ টাকায় একজন কৃষক একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে এবং তাঁদের ভতুর্কির টাকাটাও ব্যাংকের মাধ্যমেই তাঁদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য কোন মানুষ ক্ষুধার্ত বা গৃহহীন আর থাকবে না।

news24bd.tv/আলী