চুমুর রকমফের

ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় চুমু, সংস্কৃতি ভেদে কিছুটা বদলে যায় অর্থ

চুমুর রকমফের

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ চুমু। প্রেমের প্রকাশ চুমু। শিশুকে আদরের জানান দেওয়া হয় চুমু দিয়ে। এমনকি খেলার মাঠে গ্যালারি থেকে খেলোয়াড়ের দিকে উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দিয়ে প্রকাশ করা হয় সমর্থন।

বিনয় ও শ্রদ্ধা জানাতে হাতে দেওয়া হয় আলতো চুমু। সন্তান দীর্ঘদিন পর বিদেশ থেকে ফিরেছে, আদর করে বাবা-মা জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে সন্তানকে জানান দেন তাদের প্রতীক্ষা ও ভালবাসা। আবার যৌনতার বহিঃপ্রকাশও ঘটায় চুমু। একেক চুমু একেক অর্থ প্রকাশ করে।
আবার একাধিক অর্থও প্রকাশ করে। দেশ ও সংস্কৃতি ভেদেও চুমুর অর্থ কিছুটা বদলে যায়।

কখন মানুষ চুমু খায়? কেন কিছু সংস্কৃতিতে চুমু অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং অন্য সংস্কৃতিতে বেমানান? যে ভাল চুমু দিতে পারে সে কি সবচেয়ে ভালো প্রেমিক?  বিভিন্ন গবেষণার আলোকে জীববিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান বিষয়ক সাংবাদিক সেরিল কিরশেনবম এসব বিষয়ের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন তার ‘দ্য সায়েন্স অফ কিসিং : হোয়াট আওয়ার লিপস আর টেলিং আস’ শীর্ষক বইয়ে। লেখকের মতে একটা সম্পর্ককে আরও উন্নত ও নিবিড় করতে চুমুর বিকল্প নেই। পাশাপাশি তাঁর মতে আপনি কীভাবে আপনার সঙ্গীকে চুমু দিচ্ছেন তা আপনার সম্পর্কের খুঁটিনাটি অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করতে পারে।

এছাড়াও চুমু নিয়ে বিশ্বব্যাপী ভুরি ভুরি গবেষণা হয়েছে। কোন গবেষণা হয়েছে চুমুর রহস্য জানতে, কোন গবেষণা হয়েছে সংস্কৃতির সঙ্গে চুমুর সম্পর্ক খুঁজতে, কোন গবেষণা হয়েছে চুমুর স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা খুঁজতে। যেমন, ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর প্রকাশিত ওয়াশিংটন পোস্টের একটা প্রতিবেদনে জানা যায়, ১০ সেকেন্ডের একটা গভীর চুমুতে আমরা প্রায় ৮০ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ব্যাকটেরিয়া আদান-প্রদান করি। নেদারল্যান্ডের গবেষকরা এ তথ্য খুঁজে বের করেছেন। তাই বলে চুমু তো আর থেমে থাকে না। এর আছে দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি, কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং সম্পর্ককে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা। আবেগ, ভালবাসা, প্রেমের জানান দেওয়ার ক্ষমতা। বিজ্ঞান বলছে, চুমু মানুষকে প্রশান্তি দেয়। এটা পিটুইটারি গ্রন্থিকে উত্তেজিত করে অক্সিটসিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে প্রশান্ত করে। চুমু শরীরে ডোপামাইন হরমোনের স্তর বৃদ্ধি করে যা প্রেম ও আবেগের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়। আবেগের সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যায়। এছাড়া চুমু মুখের পেশি শক্তিশালী করে, অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়ায়, বিভিন্ন হরমোন গ্রন্থিকে উত্তেজিত করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করে তোলে।

এ তো গেল চুমুর ভালো-মন্দ। এবার আসুন দেখে নেওয়া যাক কোন চুমুর ধরণের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে কোন রহস্য-

গালে চুমু : গালে চুমু খাওয়া হল ভালবাসা জাহির করার সবচেয়ে মিষ্টি পদ্ধতি। এই ধরণের ভঙ্গিমার অর্থ হল আপনার সঙ্গী শুধু আপনাকে ভালবাসেনই না বরং সম্মানও করেন। এটা স্বার্থহীন বন্ধুত্বেরও প্রকাশ। আবার কারও সঙ্গে দেখা হলে বা বিদায় জানানোর জন্য এ ধরণের চুমুর ব্যবহার হয়। আবার এ ধরণের চুমু দেওয়ার সময় দুই হাত তার ঘাঁড়ে রাখলে তা বাড়তি স্নেহের প্রকাশ ঘটায়।

বন্ধ ঠোঁটের চুমু : ঠোঁট বন্ধ করে চুমু দেওয়ার অর্থ সম্পর্কের মধ্যে দুরত্ব রয়েছে। একে অপরের সঙ্গে খুব একটা স্বাভাবিক নন এই জুটি। অর্থাৎ সম্পর্কের মধ্যে কোনও রকম মানসিক বন্ধন বা আবেগ নেই। শুধুমাত্রা সৌজন্যতা বজায় রাখার জন্য এমন চুমু।

ফ্রেঞ্চ কিস : প্রেমিক-প্রেমিকার বিশেষ মূহূর্তে অতি জনপ্রিয় এই কিস। এই ধরণের চুমুর অর্থ হল, উভয়ে এই সম্পর্ক নিয়ে খুশী হলেও আরও কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে তাদের। দুজনেই এই সম্পর্কে নিজেদের একশো শতাংশ দিয়ে পরের স্তরে উন্নীত করতে চান। ফ্রেন্স কিসে প্রেমিক-প্রেমিকার ঠোঁটে ঠোঁট মিশে একাকার হয়ে যায়। জিভ ছুঁয়ে যায় জিভে। বিশ শতকের শুরুতে ফ্রান্সে এই চুমুর চল শুরু হয় বলে একে ফ্রেঞ্চ কিস বলে।

স্পাইডারম্যান কিস : সচরাচর এমন চুম্বন দেখা যায় না। এই কিস ক্রিয়েটিভিটি বা সৃজনশীল মনোভাব ব্যক্ত করে। চুম্বনের এই ধরণ বুঝিয়ে দেয় যুগলের একে অপরের প্রতি বিশ্বাস এবং স্বাচ্ছন্দ। এই ধরণের চুম্বনের আরও একটি অর্থ হল, উভয়ই এই সম্পর্ককে আরও উন্নত করতে নানা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করতে পছন্দ করেন। এই চুম্বনে প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনের পা থাকে বিপরীতমুখী।

অ্যাঞ্জেল কিস : আপনার সঙ্গী যদি অ্যাঞ্জেল কিস পছন্দ করেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার সম্পর্ক নিরাপদ অবস্থাতেই রয়েছে। এই ধরণের চুম্বনে একে অপরের প্রতি অগাধ ভালবাসা, নির্ভরতা, শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়। আপনার সম্পর্ক যে শুধুই শরীর ভিত্তিক নয় তাও বোঝা যায়। ভ্রুতে বা ভ্রুর উপরে আলতো করে এমন চুমু দেওয়া হয়। একজন মা তার সন্তানকে বা স্বামী তার স্ত্রীকে অ্যাঞ্জেল কিস দিয়ে ভালবাসা, নির্ভরতা প্রকাশ করতে পারে।

বাটারফ্লাই কিস : এই ধরণের চুমুর ধরণ বাতলে দেয় আপনার সম্পর্ক কতটা প্রাণবন্ত, তরুণ অথচ অভিজ্ঞতাপূর্ণ। আপনার সঙ্গী যদি বাটারফ্লাই কিস পছন্দ করেন তাহলে বুঝবেন তিনি সবসময় আপনাকে আগলে রাখতে চান এবং নিজের কাছ থেকে দূরে যেতে দিতে চান না। প্রেমিক প্রেমিকার চুমু খাওয়ার সময় যদি দু’জনের চোখের পাতা ঠেকাঠেকি হয়ে প্রজাপতির পাখার মতো ডানা ঝাপটায়, তখন তাকে বাটারফ্লাই কিস বলে।

এস্কিমো কিস: এই চুমু সাধারণ ভালোবাসার বহির্প্রকাশ ঘটায়। এর সঙ্গে যৌনতার বিশেষ সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে সাধারণত নাকে নাক ঘষে আলতো করে আদর করা হয়। বড়রা ছোটদের আদর করতে গিয়ে প্রায়ই এস্কিমো কিস করে। প্রেমিক-প্রেমিকা দুষ্টুমি ছলে এই কিস বিনিময় করে। এমন নামকরণের কারণ হল, প্রথম এই কিসের বিষয়টি ধরা পড়ে এস্কিমোদের জীবন নিয়ে ১৯২২ সালে তোলা রবার্ট ফ্লহার্টি-র পৃথিবীবিখ্যাত তথ্যচিত্র ‘নানুক অফ দ্য নর্থ’-এ। হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় এই ধরণের চুমুর প্রচলন খুব বেশি।

সিঙ্গল-লিপ কিস: নারী-পুরুষের প্রেমের ক্ষেত্রে এটিকে ক্ল্যাসিক কিস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রেমিকের ঠোঁটের ফাঁকে যখন প্রেমিকার ঠোঁট সেঁটে থাকে, অনেকটা স্যান্ডউইচের মতো করে, তখন তাকে সিঙ্গল-লিপ কিস বলে। এটার সঙ্গে যৌনতার সম্পর্ক অনেক বেশি। শারীরিক মিলনের সময় বা প্রেমের সম্পর্ককে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবার আকাঙক্ষা প্রকাশ পায় এই চুমুতে।

ফ্লাইং কিস: নামেই বোঝা যাচ্ছে কেমন হবে এই চুমু। দুইজন থাকবে দুই প্রান্তে, চুমু যাবে উড়ে উড়ে। অর্থাৎ শারীরিকভাবে মিলিত না হয়েও দূর থেকে এই কিস দেওয়া যায়। এটি একটি সর্বজনীন ভালোবাসা প্রকাশের কিস। দূর থেকে ডান হাত মুখের সামনে তুলে হাওয়া খেলিয়ে এই চুম্বন ছুঁড়ে মারা হয়। এই চুম্বন দিয়ে সমর্থনও বোঝানো হয়। খেলার মাঠে খেলোয়াড়কে উদ্দেশ্য করে, পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে ভক্তদের এমন চুমু ছুড়ে দিতে দেখা যায় প্রায়ই।

কানের লতিতে চুমু: কানের লতিতে হালকা করে চুমু ও কামড় প্রেমিক-প্রেমিকার গভীর সম্পর্ক নির্দেশ করে। এটা প্রগাঢ় যৌন ইচ্ছারও প্রকাশ ঘটায়। তবে যে চুমু দিচ্ছে সে কী ধরণের চিন্তা থেকে এই অঙ্গভঙ্গি করছে তার ওপরও বিষয়টা নির্ভর করে।

কপালে চুমু: ভালবাসা, বিশ্বাস, আদর, মমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই চুমুতে। এই চুমুই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ছোট্ট শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার প্রতি ভালবাসার প্রকাশ ঘটাতে কপালে চুমু খেতে দেখা যায়। বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের শুরু এই চুমু দিয়ে হলে তা পরবর্তীতে রোমান্টিক সম্পর্কের নির্দেশ করে।

পায়ে চুমু: এটা দিয়ে গভীর ভালবাসা প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে বোঝানো হয় তোমার পা খুবই সুন্দর, অর্থাৎ তুমি আরও সুন্দর। এই চুমু দিয়ে এক ধরণের কামনার বার্তাও পৌঁছে দেওয়া হয়।

হাতে চুমু: সঙ্গীর হাতের আঙুল আলতো করে ধরে তালুর বিপরীত পাশে হালকা চুম্বন। এটা সঙ্গীর প্রতি ভালবাসা ও আগ্রহের প্রকাশ ঘটায়। অর্থাৎ, তাকে বোঝানো যে, আমি তোমার প্রতি দুর্বল। তোমাকে পছন্দ করি। অনেকটা প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার মতো।

টিকটিকি চুমু: এটাকে ইংরেজিতে বলে লিজার্ড কিস। চুমুর সময় যখন দুজনের জ্বিভ খুব দ্রুত একে অন্যের মুখের মধ্যে যাওয়া-আসা করে করে তখন তাকে টিকটিকি চুমু বলে। এমন চুমুর সঙ্গে যৌনতার সম্পর্ক অনেক বেশি।

লিংগারিং কিস: দীর্ঘস্থায়ী চুমু। অনেকটা ফ্রেন্স কিসের মতো। ঠোঁটে ঠোঁটে দীর্ঘসময় ধরে চুমু খাওয়া হয়। নতুন প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে এমন চুমু জনপ্রিয়। এই ধরণের চুমু একে অন্যের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা, নির্ভরতা ও আবেগ প্রকাশ করে। তবে এর সঙ্গে যৌনতার সম্পর্ক তেমন নেই বলা যায়।

লিপস্টিক কিস: এ ধরণের কিসের অপর নাম 'লিভ এ মার্ক কিস'। ভালোবাসা বোঝাতে যখন কোন মেয়ে তার সঙ্গীর মুখে লিপিস্টিকের ছাপ ফেলে দেয় তাকে লিপস্টিক কিস বলে। অনেক সময় ছোট বাচ্চাদেরও আদর করে এমন কিস দেওয়া হয়।

এয়ার কিস: পুরাতন ফ্রেন্স সিনেমাগুলোতে এমন কিস দেখা যায়। এটা শুধুমাত্র সৌজন্যতা ও বন্ধুত্বের প্রকাশ ঘটায়। এ ধরণের চুমুতে দুজনের গাল পাশাপাশি মিশিয়ে বাতাসে চুমুর শব্দ করা হয়। কখনো কখনো একইসঙ্গে দুজনেই দুজনের গালে আলতো করে চুমু খায়। বিভিন্ন ফিল্ম ফ্যান্টিভ্যাল, পার্টিতে এমন কিস দেখা যায়।

এছাড়াও আছে ভ্যাম্পেয়ার কিস, জ কিস, বাইট এন্ড নিবল, সিডাকটিভ কিস, সিক্রেট মেসেজ কিস, নোজ কিস, হট এন্ড কোল্ড কিস, লিকিং কিস, ফ্রেন্স রোল কিস, বাজ কিস, ফিঙ্গার কিস, হিকি কিস, ভ্যাকুয়াম কিস, আই কিস, রিস্ট কিস, কলারবোন কিস, বেলিবাটন কিস, এলবো কিস, সোল্ডার কিস, সিপ কিস, ফ্রুটি কিস, গাম কিস, সুইট কিস, মেল্ট কিস, সুপারম্যান কিস, অ্যাডভেঞ্চার কিস, স্পটলাইট কিস, টুইস্টার কিস, টেক্সট কিস, মেইল কিস-সহ শত ধরণের চুমু।

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর