ব্রা এবং তার একটি ফিতা

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি

ব্রা এবং তার একটি ফিতা

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি নিজ গুণে বিশ্বের বুকে নিজেকে চিনিয়েছেন। সেই সঙ্গে সুনাম বয়ে এনেছেন দেশের জন্য। আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রিয়তি একাধারে পাইলট, অভিনেত্রী, মডেল, পোল ড্যান্সার, স্ক্রিন রাইটার, সাবেক মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল, মিস আয়ারল্যান্ড, ইন্টারন্যাশনাল বিউটি কুইন ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিচারক। এখনো নিয়মিত একের পর এক আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড যুক্ত হচ্ছে তার ঝুলিতে।

প্রচণ্ড স্পষ্টবাদী একজন মানুষ। মনে যা আসে, যেটা বিশ্বাস করেন, তাই অকপটে বলে ফেলেন, তাতে কে কী মনে করলো সেটা নিয়ে ভাবেন না। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাকে মাঝেমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হতে দেখা যায়। সমাজের যেসব বিষয় অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও ঠিক নয় বলে তিনি মনে করেন, তা নিয়ে প্রতিবাদ জানান।
প্রশ্ন তোলেন। অনেকে তার প্রশ্ন ও যুক্তিকে স্বাগত জানান, কেউ আবার পাল্টা যুক্তি দেখান। আজও একটি বিষয় নিয়ে ফেসবুকে প্রশ্ন তুলেছেন প্রিয়তি। এবারকার বিষয় 'অন্তর্বাস নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি'। অনেকেই তার যুক্তিকে অকাট্য বলে মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ পাল্টা যুক্তি দেখিয়েছেন। প্রিয়তির স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

''নারীরা শরীরের কোন অঙ্গ গোপন করার জন্য ব্রা বা ব্রেসিয়ার পরিধান করে না, একইভাবে পুরুষেরাও আন্ডারওয়্যার পরিধান করে না তাদের গোপন অঙ্গ ঢাকার জন্য। যেই পোশাকটি আমি, আপনি সবাই প্রতিদিন পরিধান করি,তা দিয়েই তো শরীরের গোপনাঙ্গ-সহ বেশিরভাগ অঙ্গ ঢাকা পড়ে। তার পরেও আমরা বাড়তি একটা কাপড় কেন পরি? আমার ছোট্ট মাথায় উত্তরটা সিম্পল। পুরুষেরা আন্ডারওয়্যার পরেন যেন কোন কারণে প্রসাবের ফোঁটা পড়ে তিনি যেই প্যান্টটি পরিধান করে আছেন তা নষ্ট না হয়, তাতে তিনি যেন মানুষের সামনে বিব্রত না হন, চামড়ায় কোনভাবে যেন ব্যাথা না পান এবং সাথে বাইরে থেকে বডি সেইপ যেন প্রেজেন্ট্যাবল থাকে। ঠিক-ঠাক সুশীল ও পরিছন্ন লাগে, যাতে বিব্রত বোধ না করেন।

একইভাবে নারীরা যে ব্রা পরিধান করছেন, তিনি যেই পোশাকটি পরে আছেন, তাতে সাপোর্ট দেয়ার জন্য, যাতে তিনি যেই পোশাকটি গায়ে পরিধান করেছেন, তা বাইরে থেকে দেখতে ভালো লাগে, বডি সেইপ যেন দেখতে কটু বা অশালীন না লাগে। আফটার অল, আমরা সবাই তো যে কোনো পোশাকই পরিধান করি না কেন, প্রথমত লজ্জা নিবারনের জন্য, দ্বিতীয়ত দেখতে ভালো লাগার জন্য।

এখন, আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই ব্রা যেখানে পোশাকের শুধুই একটি অংশ, সেখানে কোন নারী পরিধান করা অবস্থায় ব্রা এর ফিতা বা ব্রা এর কোন অংশ কোন কারণে দেখা গেলে বা বের হয়ে গেলে বা কেউ বের করে রাখলে এতো কানাঘুষা, হাসাহাসি, মন্দ কথা, টিটকারি করার মানে কি? আর এটি শুধুমাত্র এই সাউথ এশিয়া উপমহাদেশের দেশগুলোতেই হয়, পৃথিবীর অন্য কোন দেশে ব্রা এর ফিতা বের হয়ে থাকলে এতো বাজে কথা বা সমালোচনা শুনতে হয় না যে, '' দেখ দেখ ওই মেয়েটার না ব্রা এর ফিতাটা বের হয়ে আছে, বাজে মেয়ে (বাজে মেয়ের লেবেল লাগিয়ে দিলাম)। অথবা ভাবী, আপনার না ব্লাউজ এর ভিতর দিয়ে ব্রা বের হয়ে আছে। আমি অশিক্ষিত মানুষগুলোর দোষ দিবো না কারণ তারা জানেই না পৃথিবী কোন গতিতে চলছে , নাই কোন ধরনের জ্ঞান, কিন্তু শিক্ষিত সমাজের শিক্ষিত মানুষগুলো ??  উনাদের মস্তিষ্ক কেন এক জায়গায় আটকানো? ভাবতে পারেন, আমাদের Thought Process (ধ্যান-ধারণা) আমরা কোন দিকে Divert (নিয়ে যাচ্ছি) করছি? আমাদের কি নিজেদের ওই ক্ষমতা নেই যে আমাদের মস্তিষ্ককে ট্রেইন করবো, যে ব্রা বা আন্ডারওয়্যার শুধুই আমাদের নিত্যদিনের পোশাকের একটি অংশ, অন্যান্য প্যান্ট, শার্ট, ওড়না, শাড়ির মতো? ফিতা বের না হয়ে থাকলে কি আপনি আমি জানতাম না যে নারীটি ব্রা পরে আছে কি নেই? বা আন্ডার গার্মেন্টস পরে আছে কি নেই?

বি. দ্র. খোলামেলা পোশাক পরা আর ব্রা, এই দুইটি ভিন্ন টপিক, দু'টিকে মিলিয়ে আমার লেখার বিষয়বস্তুকে গুলিয়ে ফেলবেন না আশা করি। ''

(লেখাটি মাকসুদা আক্তার প্রিয়তির ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত। )

সম্পর্কিত খবর