অসহনীয় লোড শেডিংয়ে অতিষ্ঠ রাঙামাটিবাসী

প্রতীকী ছবি

অসহনীয় লোড শেডিংয়ে অতিষ্ঠ রাঙামাটিবাসী

ফাতেমা জান্নাত মুমু  • রাঙামাটি

রাঙামাটিতে অসহনীয় লোড শেডিংয়ে (বিদুৎ বিভ্রাট) অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন জেলাবাসী। চাহিদার অধিক বিদ্যুৎ পেয়েও সঙ্কট এখনো কাটেনি। ঘন ঘন লোড শেডিং ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায়শই থাকতে হচ্ছে বিদ্যুৎবিহীন। এছাড়া রয়েছে লো ভোল্টেজের বিড়ম্বনা তো রয়েছেই।

 

এমন পরিস্থিতিতে শহরবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ভয়াবহ বিপর্যয়ে স্বাভাবিক জনজীবনও থমকে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ বিতরণ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন স্থানীয়রা। বিদ্যুতের এমন দুর্দশা দ্রুত সমাধান করা না হলে আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাঙামাটিবাসী।

রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. নাছির উদ্দীন সোহেল বলেন, ‘দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিনও একই অবস্থা। মাসজুড়ে এমন সমস্যার পরও বিদ্যুৎ বিল কখনো কম আসে না। এর একটা সুষ্ঠু সমাধান হওয়া উচিত। ’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,  ১৯৬০ সালে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় বাঁধ দিয়ে নির্মিত হয় দেশের প্রধান ও একমাত্র  জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি নির্মাণের ফলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার প্রায় ৫৪ হাজার একর চাষযোগ্য জমি পানিতে তলিয়ে যায়। উদ্বাস্তু হন লক্ষাধিক মানুষ।  
news24bd.tv
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সন্ধ্যা নামতেই বিদঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে যায় রাঙামাটি

কিন্তু জেলাবাসীর এতটা ক্ষতিসাধন করে এ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি নির্মিত হলেও শুরু থেকে ২৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রের উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় গ্রিডে। আর রাঙামাটির স্থানীয় জনগণকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ বিতরণের শর্তে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হলেও তাদের সরবরাহ করা হতো মাত্র ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে  তখন থেকেই চরম ভোগান্তির শিকার হতেন জেলাবাসী।  

এ অবস্থায় রাঙামাটিবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বর্তমানে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রাঙামাটিতে সরবরাহ করা হচ্ছে।  

কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও দায়িত্বে চরম অবহেলার কারণে চাহিদার অধিক বিদ্যুৎ পেয়েও অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে রাঙামাটিবাসীকে। এছাড়া কারণে-অকারণে সংযোগ লাইনের মেরামত ও সংস্কার কাজ দেখিয়ে প্রায় সময় অন্ধকারে ডুবে রাখা হয় রাঙামাটি শহরকে।  

এদিকে, কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বেড়েছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শফি উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনও বেড়েছে। কারণ অব্যাহত বৃষ্টিপাতে হ্রদে পানি রয়েছে ১০৬ফুট উচ্চতায়। তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট সচল রয়েছে। বর্তমানে এখানে ১৯০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। তাই রাঙামাটি শহরের বিদ্যুৎ সঙ্কট হওয়ার কথা না। ’

এ ব্যাপারে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার জানান, ‘সম্প্রতি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কিছুটা সমস্যা ছিল। ফলে চাহিদা অনুসারে রাঙামাটি শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হয়নি। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হঠাৎ ফল্ট দেখা দেয়। পাশাপাশি কোথাও সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সেগুলোর সংস্কার তো রয়েছেই। ’

তিনি আরও বলেন, ‘নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে রাঙামাটি সদরের সাপছড়ি এলাকায় একটি সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেটা চালু হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। ’


মুমু▐ অরিন▐ NEWS24

সম্পর্কিত খবর