দেশের সব অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরে: সিইসি

এবার সিইসির মুখে আওয়ামী লীগের প্রশংসা 

দেশের সব অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরে: সিইসি

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বিএনপি'র সঙ্গে সংলাপে জিয়াউর রহমান ও দলটির ভূয়সী প্রশংসা করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় তোলা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার মুখে এবার শোনা গেল আওয়ামী লীগের প্রশংসা। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, দেশের সব অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে।

সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে প্রাচীনতম দলটির বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন সিইসি।


বুধবার সকালে নির্বাচন কমিশনে সংলাপের স্বাগত বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিইসি।

এসময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, উপদেষ্টা এইচ টি ইমামসহ সংলাপে অংশ নেওয়া অনেকের চোখে-মুখে ‘স্বস্তির হাসি’ দেখা গেছে।

২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ সংলাপে অংশ নেয় সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে।  

সিইসির বক্তব্যের সময় আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদের ‘স্বস্তির চেহারা’ দেখে চার নির্বাচন কমিশনারের চোখেমুখেও ছিল ‘প্রশান্তির ছাপ’।

 

বিএনপি’র সঙ্গে সংলাপে জিয়ার গুণগান করায় তা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অনেকের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সিইসিকে। এ অবস্থায় বুধবারের সংলাপে আওয়ামী লীগ নিয়ে সিইসি কী বলেন তা নিয়ে আগ্রহ ছিল সবার।

বিষয়টি মাথায় নিয়ে মঙ্গলবারই সন্ধ্যায় সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার একদফা বৈঠক করে আওয়ামী লীগের সামনে কীভাবে নিজেদের উপস্থাপন করবেন।

বুধবার সকাল ১১ টায় স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে ‘অনেক ব্যাখ্যার সুরেই’ সিইসি বলেছেন, যে কোনো দলের সঙ্গে সংলাপের আগে সংশ্লিষ্ট দলের প্রোফাইল তুলে ধরা হয়। এ ধারবাহিকতায় আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরছেন বলে উল্লেখ করেন।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ থেকে হালের আওয়ামী লীগের উন্নয়নের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে প্রায় ৯ মিনিট বক্তব্য রাখেন কে এম নূরুল হুদা।
সিইসি জানান, দেশের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক দল আওয়ামী লীগ।  

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ইয়ার মোহাম্মদ খান, শামসুল হক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা তুলে ধরেন।

“জাতির জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নিবেদিত নেতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। ”
তিনি জানান, ৫২ ভাষা আন্দোলন, ৬৬ ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ-আন্দোলণ, যা ছাত্র আন্দোল হিসাবে আমরা জানি; তখনকার সফল নেসতারা এখানে রয়েছেন। ৭০ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বহু অর্জন, বহুমুখী, গণমুখী সকল আন্দোলন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ফসল।
“৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর এীতহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রামে স্বাধীনতার সংগ্রাম..বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কন করে দিয়েছে। ”
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হুকুমে এবং এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের অনেকের অনুপ্রেরণায়, নির্দেশে, পরিচালনায় আমরা তরুণ সন্তান বুকে গ্রেনেড ও কাঁধে অস্ত্র নিয়ে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।
“ঐতিহাসিক সব সফল আন্দোলন আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে। ”
১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশ গঠনের দায়িত্ব কাঁধে নেন।
সিইসি জানান, এক বছরের কম সময়ের মধ্যে দেশকে একটি সংবিধান উপহার দেন; কুটনৈতিক সাফল্যে  বহুদেশের আনকূল্য, সমর্থন অর্জন করেন।
নির্বাচন কমিশন গঠন করেন, ১৯৭৩ সালে জাতিকে প্রথম সংসদ নির্বাচন উপহার দেন এবং স্বাধীন দেশে প্রথম সংসদীয় সরকার গঠন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার হয়।
১৯৭৪ সালের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেন। ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট কালো রাতে জাতির জনকের সপরিবারের হত্যার মধ্য দিয়ে জাতির কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়।
বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বরণের পর দলটির কঠিন পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরেন সিইসি।
জাতীয় চার নেতা হত্যার প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, “জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।  
বহু বাধা বিপত্তি, প্রতিকূলতা, ভয়ঙ্কর সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দলকে সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছয় বছরের মাথায় ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদে নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ।
ওই নির্বাচনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা  মুসলিম বিশ্বের প্রথম মহিলা বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেন এবং রায় কার্যলকর করেন।
আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছে।
উন্নয়নের প্রতিটি খাতে শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার, পরিবেশ সংরক্ষণ আজ বিশ্ব ধরিত্রীর মুকুট প্রধানমন্ত্রীর মাথায়।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।  
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কূটনৈতিক সমাধান অর্জন বিশ্ব মাতৃকা্র আসনে সমাসীন প্রধানমন্ত্রী।
ইসির আইন-বিধি বিধানের প্রায় সবগুলোই আওয়ামী লীগের আমলে তৈরি করা। বর্তমান ইসি আজ বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে। যা আওয়ামী লীগ সরকারই প্রদান করেছে।
এখানে উপস্থিত অনেকের কাছ থেকে আগের অনেক পর্যােয়ে শিক্ষা, দীক্ষা, সাহস, অনুপ্রেরণা পেয়েছি। অনেকের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছি।  
“আজ ভিন্ন পরিস্থিতিতে ইসির দায়িত্ব পালনে আপনাদের সহযোগিতা, পরামর্শ, সুপারিশ কীভাবে নেওয়া যায়; সাহস পুঁজি করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালণা করতে সে সহযোগিতা পেতেই আজকের এ সংলাপ আয়োজন ও প্রয়োজন। ”
আওয়ামী লীগের সুপারিশ ইসির সামনে এগিয়ে যেতে ও সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

গত ররিবার বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সূচনা বক্তব্যে দলটির প্রশংসা করেন সিইসি। তিনি জিয়াউর রহমানকে 'বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা' বলেও উল্লেখ করেন। এজন্য কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।  এই বক্তব্যের জন‌্য সিইসি'র পদত্যাগ দাবি করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম।

সম্পর্কিত খবর