সন্ধ্যা নদীর গর্ভে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে উপজেলার পশ্চিম পাড়ের মানচিত্র।

সন্ধ্যা নদীর গর্ভে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

১৫ দিনে সোনাকুর গ্রামের প্রায় ২০ বিঘা জমি, ৫০টি ঘর-বাড়ি, ২০টি দোকান নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
ইমন চৌধুরী,পিরোজপুর

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে উপজেলার পশ্চিম পাড়ের মানচিত্র। দীর্ঘদিন ধরে ভাঙনে পশ্চিমাঞ্চলের সোনাকুর, হোগলা, বেতকা, সয়না, রঘুনাথপুর, রোঙ্গাকাঠী ও গন্ধর্ব এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।  

সোনাকুরের পাল বাড়ি ও ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প এরইমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে শত শত পরিবার আজ পথে বসেছে।

চাষাবাদের ভূমি দূরের কথা, নেই মাথা গোঁজার মতো আবাসনের ব্যবস্থাও। ভিক্ষা করে দিন কাটাচ্ছে অসংখ্য পরিবার। কোন প্রকার সহায়তা না পেয়ে ভাঙনকবলিত মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশীর আঙিনায় বা কোন আত্মীয়ের বাড়িতে। ২৫-৩০ বছর ধরে নদীভাঙনে ক্রমাগত এ এলাকার মানচিত্র পরিবর্তন হলেও ভাঙন রোধে নেই কোন পদক্ষেপ।
সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম তীরে সোনাকুর এলাকায় দাঁড়িয়ে তাকালে যতদূর চোখ যায় এক সময় তা ছিল উপজেলার সোনাকুর গ্রামের ভূখন্ড যা এখন শুধুই স্মৃতি।

ভাঙনকবলিত এলাকার ইন্দ্র কুন্ডু, শংকর পাল, বিনয় পাল, কালু শেখ, হেমায়েত আকন, মনির চৌকিদার জানান, এক সময় তাদের সব কিছু ছিল, আজ তারা অসহায়। তারা বেচেঁ আছে মানুষের দয়ায়। সন্ধ্যার পাড়ের ইন্দ্র ক্ন্ডুু  তার জমির উপর গাছের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “সামনে দুই বিঘা জমি ছিল, তা রাক্ষুসে নদীতে লইয়া গেছে। প্রমত্তা সন্ধ্যা কেড়ে নিয়েছে সোনাকুর গ্রামের এক তৃতীয়াংশ ঘর-বাড়ি, দোকানঘর, ফসলী জমি। বর্তমানে ভাঙন ঝুঁকিতে আছে অতুল পাল, জয়দেব পাল, শ্যামল পাল, অমল পাল, সঞ্চীব পালসহ অর্ধ শতাধিক পরিবার।

এলাকার রাখাল পাল বলেন, সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের ফলে ঐতিহ্যবাহী মৃত শিল্প এখন বিলীন হওয়ার পথে। এই এলাকার ভাঙন এতই তীব্র যে নৌ চলাচল ভীতিকর হয়ে পড়েছে। পারতপক্ষে কেউ এদিক দিয়ে নৌযান চালায় না। আমরাজুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সামসুদ্দোহা চান জানান, গত ১৫ দিনে সোনাকুর গ্রামের প্রায় ২০ বিঘা জমি, ৫০টি ঘর বাড়ি, ২০টি দোকানপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধ না করা হলে গ্রামটির মানচিত্র নদী গর্ভে হারিয়ে যাবে।
 
এলাকার নদী ভাঙনকবলিত মানুষের প্রতি সমর্থন জানিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আহসান কবীর বলেন, নদী ভাঙা মানুষগুলো দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে। ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সংগে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত খবর