এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে গেল ঢাকা

এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে গেল ঢাকা

নিউজ ২৪ ডেস্ক

ক্রমেই যেন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকা। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে জমে যায় হাঁটু থেকে কোমর পানি। পানি ঢুকে যায় ফুটপাত উপচে দোকানের ভেতরেও। রাজধানীর নিম্নাঞ্চলগুলোয় ঘরের ভেতরে জমে যাচ্ছে কোমর পানি।

গতকাল বৃহস্পতিবার মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ঢাকার নাগরিক জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দুর্ভোগ।  দুপুরের এক ঘণ্টার বৃষ্টি নামতে সময় লেগেছে ছয় থেকে আট ঘণ্টা। কোনো কোনো এলাকার রাস্তা গভীর রাত পর্যন্ত পানিতেই ডুবে ছিল। অনেক এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দেখা গেছে লাইফবোট দিয়ে জনগণকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে।
সড়কের বিভিন্ন স্থানে সিএনজি অটোরিক্সা, প্রাইভেটকার বিকল হয়ে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। ডুবে ছিল ফুটপাতগুলোও।

এদিকে এদিন প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ও পানিবন্দী হয়ে পড়ে। ফলে অফিস শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা পরও সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারেননি। দুপুর আড়াই থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঢাকার প্রায় অর্ধেক এলাকাই পানিতে তলিয়ে যায়। পড়ন্ত বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তায় অসংখ্য যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বাসের ভেতরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে সময় পার করলেও রাস্তায় নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা করতে পারেননি কর্মস্থলফেরত মানুষগুলো। অধিকাংশ ফুটপাতগুলো ছিল পানির নিচে। আর রাস্তার পানি ছিল ডাস্টবিনের ময়লায় সয়লাব। এদিন কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, মালিবাগ, মৌচাক, বনশ্রী, রাজারবাগ, আরামবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, ফকিরাপুল, মতিঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছিল পানির নিচে।   

এদিকে চট্টগ্রামের পর এবার ঢাকার রাস্তায়ও নৌকা চলতে দেখা গেছে গতকাল। এদিন রাজধানীর শান্তিনগরে বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া সড়কে লাইফবোট দিয়ে মানুষকে পারাপার করিয়ে দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বর্ষায় সব এলাকায় লাইফবোট সুবিধা দেওয়া সম্ভব না হলেও সবচেয়ে বেশি দুর্গত এলাকাগুলোতে ১০-১৫টি লাইফবোট এখন থেকে কাজ করবে।  

সরেজমিন দেখা যায়, দুপুরের পর বৃষ্টি থামার সঙ্গে সঙ্গে থমকে যায় রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলো। শাহবাগ থেকে টঙ্গীগামী প্রধান সড়ক, নিউমার্কেট থেকে মিরপুরগামী সড়ক, রামপুরা বনশ্রী, পুরানা পল্টন, নয়া পল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ প্রায় সব সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় গভীর রাত পর্যন্ত। এতে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রী, অফিস ফেরত মানুষসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।  

এদিকে বৃষ্টির পাশাপাশি মাসের পর মাস খোঁড়াখুঁড়ি দুর্ভোগ বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন রাজধানীবাসী। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে মাটির নিচে থাকা সার্ভিস লাইনগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি কোনোভাবেই নামতে পারছে না। এছাড়া পানি ভেঙেও মানুষ নির্বিঘ্নে হাঁটতে পারছে না। সড়কের যত্রতত্র গর্ত, ইট, বালু, সুড়কি, লোহার রড থাকায় পানিতে হেঁটে চলা মানুষ অহরহ দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও মাথার ওপরে বৃষ্টি আর রাস্তায় জমে থাকা পানিতে একাকার হয়ে মানুষ রাস্তায় হেঁটেছে। এ সময় অনেককে খোলা ম্যানহোল কিংবা গর্তের মধ্যেও পড়ে যেতে দেখা যায়।

বাটা সিগন্যাল থেকে হাতিরপুল বাজার পর্যন্ত পুরোটা ছিল হাঁটুপানির নিচে। সেই পানিতে আটকে ছিল শত শত গাড়ির মিছিল। অনেকেই গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য পথে যেতে চেয়ে উল্টো আরও দীর্ঘ যানজটে পড়েছেন। কাঁটাবন পার হয়ে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত আসার পর বাংলামোটরের দিকেও ছিল একই অবস্থা। ফার্মগেট থেকে টঙ্গীগামী ভিআইপি রাস্তাটি তলিয়ে যায় হাঁটু পানিতে। এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর এই করুণ চিত্র ক্ষোভের আকারে উঠে এসেছে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে মানুষ তুলোধুনো করেছেন সিটি করপোরেশনকে। কখনো কখনো দায়ভার এসে পড়েছে সরকারের ওপরে।

সম্পর্কিত খবর