'মাসুদা ভাট্টি আমার জন্য ছুরি শানাতে ব্যস্ত ছিল'

মাসুদা ভাট্টি ও তসলিমা নাসরিন

'মাসুদা ভাট্টি আমার জন্য ছুরি শানাতে ব্যস্ত ছিল'

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

সম্প্রতি টেলিভিশন টকশো'তে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে 'চরিত্রহীন' বলে মন্তব্য করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হেসেন। এ নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক মামলা হয়। এরইমধ্যে মাসুদা ভাট্টিকে 'ভীষণরকম চরিত্রহীন' বলে ফেসবুকে মন্তব্য করেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

তিনি বলেন, চরিত্রহীন বলতে বুঝি, অতি অসৎ, অতি লোভী, অতি কৃতঘ্ন, অতি নিষ্ঠুর, অতি স্বার্থান্ধ, অতি ছোট লোক। মাসুদা ভাট্টি এসবের সবই। পাল্টা অভিযোগে তসলিমা নাসরিনের সেই অভিযোগের জবাব গত রোববার রাতে ফেসবুকে একটি পোস্টে দেন মাসুদা ভাট্টি। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই আবারও মাসুদা ভাট্টিকে 'চরিত্রহীন' এবং 'ধূর্ত' বলে মন্তব্য করলেন তসলিমা নাসরিন।
একইসঙ্গে বলেন, তার (তসলিমা) চিঠির কারণে মাসুদা ভাট্টির ব্রিটেনে পলিটিক্যাল এসাইলাম হয়েছিল। অথচ এর জন্য তাকে একটা ধন্যবাদও দেননি মাসুদা ভাট্টি, উল্টো তার (তসলিমা) পিঠে বসানোর জন্য ছুরি শানাতে ব্যস্ত ছিল।

মঙ্গলবার ফেসবুকে তিনি লেখেছেন, মাসুদা ভাট্টি যে এত শক্তিধর জানতাম না। কেউ তাকে একটা গালি দিল, বাহ সে ২০ কোটি টাকার মামলা ঠুকে দিলো । আর সেই লোক, শুনেছি বিরাট কিছু, গ্রেপ্তার হয়ে গেল, তাকে এখন জেলের ভাত খেতে হচ্ছে। মাসুদা ভাট্টি নামক ক্ষমতাবান আমার সত্য ফাঁসের 'জবাব' দিয়েছে। জবাব তো নয়, আবারও এক রাশ মিথ্যের কলস উপুড় করেছে। আমি তাকে আমার পাবলিশার হিসেবে নাকি ফ্যান হিসেবে পরিচয় করিয়েছি, বড় ব্যাপার নয়। সে আমার পাবলিশারও নয়, ফ্যানও নয়। আমাকে দিয়ে মিথ্যে বলিয়ে নিয়েছে নিজের স্বার্থের জন্য। সবচেয়ে বড় যে মিথ্যেটি ছিল, সেটি হলো 'সে বাংলাদেশে ফিরে গেলে তাকে মৌলবাদিরা মেরে ফেলবে' -- এই মিথ্যে বাক্যটির কারণে সে ব্রিটেনে পলিটিক্যাল এসাইলাম পেয়েছিল। তখন তার পক্ষে নাকি সাংবাদিকরা দাঁড়িয়েছিল, তবে কারও দাঁড়ানোর জন্য কিন্তু তার পলিটিক্যাল এসাইলাম হয়নি, হয়েছে আমার চিঠির কারণে। ইনিয়ে বিনিয়ে নানা কথা বললো, এই সত্যটা কিন্তু বললো না। ব্রিটেনে পলিটিক্যাল এসাইলাম এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার পর আমাকে কিন্তু কোনও ধন্যবাদও দেয়নি। দেবে কেন, আমার পিঠে ছুরি বসাবার জন্য তখন তো ছুরি শানাতে ব্যস্ত ছিল। উপকারীর উপকার স্বীকার করতে তার ইচ্ছে তো হয়ই না, বরং অপকার করতে ইচ্ছে হয়। এই উপকারের কথা উল্লেখ করার প্রয়োজন অনুভব করতাম না, যদি বদমাইশি না করতো। ক্ষতিকর লোকদের চিহ্নিত করতে হয় সর্ব সাধারণের মঙ্গলের জন্য। অপ্রেসর এখন চমৎকার ভিক্টিম রোল প্লে করছে। বলছে আর কত শাস্তি আমি দেব তাকে? কী শাস্তি আমি তাকে দিয়েছি, শুনি। তার সম্পর্কে সত্য তথ্য জানানোর নাম বুঝি শাস্তি?

আরও পড়ুন: তসলিমা নাসরিনের সমালোচনার জবাবে যা বললেন মাসুদা ভাট্টি

আরও বড় মিথ্যে কথা লিখেছে, সে নাকি আমার বইয়ের সমালোচনা করেছে, ব্যক্তি আক্রমণ করেনি। রিয়েলি? দেখাক তার তিন কিস্তিতে লেখা তসলিমার প্রতি ঘৃণা আর নিন্দা ছুড়ে দেওয়া সেই নোংরা গালাগালি গুলো? তার লেখার শিরোনাম ছিল ' তসলিমা নাসরিনের ক -- ফুরিয়ে যাওয়া যৌবনের আত্মযৌবনিক কামশাস্ত্র'। শিরোনাম পড়েই নিশ্চয়ই অনুমান করা যায়, কী বলতে চেয়েছে সে। ওই নোংরা জিনিস আমি রাখিনি, কিন্তু নিজের রচনা তো নিজে সে রেখেছে। দেখাক। মানুষ পড়ুক।

তসলিমা কুড়ি বছরে কুড়িবার লিখেছে তার কীর্তিকলাপ সম্পর্কে? ২০০৩ থেকে এখন ১৫ বছর। তো এই ১৫ বছরে তাহলে ছন্দ মিলিয়ে তাকে বলতে হবে ১৫ বার। সত্য শতবার উচ্চারণ করতে হয়, ১৫ বার তো কমই। এই ১৫ বছরে তার একবারও কেন ইচ্ছে করলো না ক্ষমা চাইতে? আজ যখন বড় বড় বুদ্ধিজীবী আর নারীবাদী দাঁড়িয়ে গেছে মাসুদাকে কেন চরিত্রহীন বলা হলো এই প্রতিবাদে, তখন কেন আমার মনে হবে না এরা সব হিপোক্রিটের জাত? তখনই বলতে ইচ্ছে করেছে চরিত্রহীনকে চরিত্রহীন বলবে না তো কী বলবে! আমি কোনও 'মোক্ষম' সময় বেছে নিইনি। সব সময়ই সত্য বলার সময়। যারা নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধে আদায়ে ব্যস্ত, তাদের কাছেই সত্য বলার জন্য এই সময়টা ভালো, ওই সময়টা খারাপ। আমার কাছে নয়।

আরও পড়ুন: মাসুদা ভাট্টি ভীষণরকম চরিত্রহীন: তসলিমা নাসরিন

মইনুল হোসেন কী কারণে মাসুদাকে চরিত্রহীন বলেছেন, সে মইনুল হোসেন জানেন। আমি তাকে কী কারণে চরিত্রহীন বলেছি, ব্যাখ্যা করেছি। মাসুদা দাবি করেছে আমার পক্ষে সে লিখেছে অনেক। মানুষের সহানুভূতি কাড়ার জন্য ন্যাকামো বেশ জানা আছে তার। আমার সহানুভুতি পাওয়ার জন্যও একসময় ন্যাকামো করেছিল, আড়ালে ছুরিতে শান দিচ্ছিল। এখন সরকারি আরাম আয়েস জুটছে তার, রথী মহারথীরা তাকে ঘিরে আছে, আর সে ভান করছে, তার নাকি সংকটকাল চলছে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দোষ দিয়েছে আমাকে, আমি দেশের রাজনৈতিক অবস্থার এদিক ওদিক করে দিয়েছি। আমি একা মানুষ, কোনও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক, ধর্মীয় দল আমার পক্ষে কোনওদিন ছিল না, থাকবেও না। মাসুদা ভাট্টির মতো আমি প্রভাবশালী নই। আমার কোনও ক্ষমতা নেই রাজনীতির জগতে কোনও ঢিল ছোঁড়ার। আমার মতো রাজনীতি না বোঝা বোকা লোক যেমন সংসারে আছে, মাসুদা ভাট্টির মতো ধূর্ত লোকেরা চিরকালই ছিল, আছে। মানুষের পিঠে চড়ে চড়ে উঁচুতে গিয়ে ওঠে, তারপর লাথি মেরে ফেলে দেয় নিচের মানুষদের। আমি অনেক লোক দেখেছি জীবনে, মাসুদা ভাট্টির মতো এত ভয়ঙ্কর মিথ্যুক আর চরিত্রহীন জীবনে দেখিনি। আমাকে নিয়ে মন্দ কথা অনেক লোকই লিখেছে, এসবে আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু যার জীবনের সবচেয়ে বড় উপকারটি আমি করে দিলাম, উপকারটা লুফে নিয়ে সে যখন আমার বই রিভিউয়ের নামে ব্যক্তি আমাকে জঘন্য আক্রমণ করে , যৌন হেনস্থাকারীর পক্ষ নিয়ে আমাকেই করে কুৎসিত পুরুষতান্ত্রিক আক্রমণ, তখন কষ্ট হয়। সেই কষ্ট থেকেই লিখেছি গতকাল।

সম্পর্কিত খবর