থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যায় খাদ্য ব্যবস্থাপনা

থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যায় খাদ্য ব্যবস্থাপনা

পুষ্টিবিদ মাহমুদা আফরিন

মানুষের গলায় প্রজাপতির মতো দেখতে যে গ্রন্থিটি আছে সেটার নাম থাইরয়েড গ্রন্থি। এখান থেকে যে হরমোন গুলো নির্গত হয় তার মধ্যে T3 এবং T4 অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই থাইরয়েড হরমোন শরীরের বিপাক, বৃদ্ধি ও অন্যান্য অনেক কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই যদি থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে কোন কারনে ব্যাঘাত ঘটে তবে তা হৃদস্পন্দন, শক্তি স্তর, মেজাজ, বিপাক ,হাড়ের স্বাস্থ্য, গর্ভাবস্থা ও অন্যান্য অনেক জৈবিক কাজকে প্রভাবিত করে।

থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে তার মধ্যে-হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন হ্রাস), হাইপার থাইরয়েডিজম (অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন), গয়টার ও থাইরয়েড ক্যান্সার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

থাইরয়েড হরমোন জনিত এইসব সমস্যায় খাদ্য ব্যবস্থাপনার ভূমিকা অনস্বীকার্য। নিম্নে হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপার থাইরয়েডিজম সমস্যায় কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে এবং কোন খাবার গুলো খেলে ভালো হবে তা বলা হলো।

হাইপোথাইরয়ডিজমে যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে
ক্রুসিফেরাস ভেজিটেবল:
যেমন ফুলকপি ,বাঁধাকপি, ব্রকলি, শালগম, মুলা, মুলা শাক, সরিষা, সরিষা শাক, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাবার।

সয়া ও সয়া প্রোডাক্টস : সয়াবিন, সয়া মিল্ক, সয়াসস, টফু, সয়া বাদাম, সয়া চাংক ইত্যাদি।

স্টোন ফ্রুটস : অনেক ফল আছে যেগুলো স্টোন ফ্রুটস নামে পরিচিত। তার মধ্যে কিছু ফলে গয়োট্রোজেন উপাদান বিদ্যমান থাকে। হাইপোথাইরয়ডিজম সমস্যায় এই ফলগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন:- চেরি, এপ্রিকট, পিয়ার, হ্রাসবেরি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি।

গ্লুটেন : গ্লুটেন থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে ঠিকমতো কাজ করতে দেয় না। ফলে থাইরয়েড সমস্যার লক্ষণগুলো বেড়ে যায়। তাই সাদা আটা -ময়দা এবং তা দিয়ে তৈরি সব ধরনের খাবার এই সমস্যায় এড়িয়ে চলতে হবে।

ক্যাফেইন : ক্যাফেইন থাইরয়েড হরমোনের ওপর সরাসরি এফেক্ট না করলেও এটা টি-ফোর হরমোনের শোষণকে কমিয়ে দেয়। ফলে থাইরয়েড সমস্যার লক্ষণগুলো বেড়ে যায়। তাই ক্যাফেইন আছে এমন সব ধরনের পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন: কফি, চা, ক্যাফেইন ক্রিম, সব ধরনের কার্বনেটেড পানীয়।

ফাস্টফুড ও ভাজাপোড়া : যেহেতু হাইপোথাইরয়েডিজমের সাথে অতিরিক্ত ওজনের একটি যোগ সংযোগ আছে। তাই যাদের হাইপো থাইরয়েডিজম আছে, তাদের ওজন যাতে আরো বেড়ে না যায় সেজন্য সব ধরনের ডুবো তেলে ভাজা খাবার, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।

কোন খাবারগুলো বেশি খেতে হবে :

  • সেলেনিয়াম ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। যেমন : ব্রাজিল নাট, সামুদ্রিক মাছ ও খাবার, অর্গান মিট, আখরোট, ডিম, সূর্যমুখীর বীজ, মটর, কোকো পাউডার, ফ্ল্যাক্সসিড ইত্যাদি।
  • প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার যেমন: লো ফ্যাট টক দই।
  • আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার : লবণ ও অন্যান্য আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার তালিকায় রাখতে হবে।
  • গাঢ় সবুজ শাকসবজি।
  • ভিটামিন ডি ফট্রিফাইড খাবার ইত্যাদি।

হাইপারথাইরয়েডিজমে যে খাবারগুলো নয়
অতিরিক্ত আয়োডিন সমৃদ্ধ লবণ ও অন্যান্য লবণাক্ত খাবার যেমন: চানাচুর, চিপস, শুটকি, সামুদ্রিক খাবার ও সামুদ্রিক মাছ। দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার, পনির, ডিমের কুসুম, আয়োডিন সমৃদ্ধ পানি, গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার যেমন: সাদা আটা-ময়দার সব ধরনের খাবার, সয়াবিন, সয়া মিল্ক, সয়া সস, টফু, ক্যাফেইন সমৃদ্ধ কফি ও চা, সোডা, চকলেট ইত্যাদি।

যে খাবারগুলো খাবার তালিকায় রাখতে হবে
লো-আয়োডিন লবণ, ডিমের সাদা অংশ, তাজা ফল, লবনবিহীন বাদাম, আলু, মধু,আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন: শুকনো বীজ, গারো সবুজ শাকসবজি, টার্কি মুরগি, মাংস ,গোটা শস্য, সেলেনিয়াম ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার – সূর্যমুখীর বীজ, ব্রাজিল নাট, তোকমা, মাশরুম, মটর, কোকো পাউডার, বাদামের দুধ; ক্যালসিয়াম ফর্টিফাইড খাবার, ভিটামিন ডি ফর্টিফাইড খাবার, হলুদ, সূর্যমুখী তেল, অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল, তৈলাক্ত মাছ, গোলমরিচ গুঁড়ো, কাঁচামরিচ ইত্যাদি খাবার তালিকা রাখতে হবে।

এছাড়াও থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায় যে বিষয়গুলো বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হলো: 

  • প্রতি রাতে সঠিক সময় আট ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
  • সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে।
  • মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে হবে।
  • চিকিৎসক প্রদানকৃত ওষুধ অবশ্যই সঠিক সময় ও নিয়মিত নিতে হবে।

লেখক : পুষ্টিবিদ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাইজদী, নোয়াখালী।

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর