শফী চলে গেছেন সিয়েস্তায়

আনোয়ার শাহাদাত

শোকগাথা

শফী চলে গেছেন সিয়েস্তায়

আনোয়ার শাহাদাত

প্রতিদিন যখন ঘুমিয়ে পরি তখন খুব করে প্রার্থনা করি যে 'শালা, কাল যেন আর ঝামেলা করে ঘুম থেকে উঠতে না হয়!' বিধাতা এসব বোঝেন না, ফলে ঠিকই এত বছর ঠিক মরবার জন্যে ঘুমিয়ে পরলেও আবার উঠে যাই ঠিকঠাক।  

আমাদের বন্ধু সুহৃদ শফী আহমেদ মার্কেজের মাকোন্দো কী যেন বরিশাল কী যেন বা নেত্রকোনার মফস্বল শহরের মতন সিয়েস্তা'য় গিয়েছিলেন, কৈশোরে যাকে আমরা 'বিউটি-ঘুম'এর পালাও বলতাম। তেমনসব ঘুম থেকে উঠে আমরা আমাদের অতি মফস্বলীয় তেল দেয়া চুলে টক আঁচড়িয়ে সদর রোডে আড্ডা দিতে চলে যেতাম।  

শফি আহমেদ মার্কেজের কর্নেলের অরিলিয়েসদের ঘুম থেকে আর জাগেননি, কিন্তু আমরা নিশ্চিত মাকোন্দ'র ওই ঘুম যাদবীয় (ম্যাজিক্যাল), শফি জেগেই আছেন সিয়েস্তায় বা ঘুমিয়ে উঠবেন ও জেগে রইবেন যতদিন তার জেনারেশন / প্রজন্ম সেটা তাকে রাখতে সক্ষম হবেন।

আমার মনে হয়না শফি আহমেদ কোনদিন আমার কোনও লেখা না পড়েছেন। আমি প্রায় নিশ্চিত তিনি আমার এ লেখাটা পড়বেন না মনে হচ্ছে যেহেতু তার গতকাল বিকেলের সিয়েস্তাটাএকটু দীর্ঘতর হলও বলে।  
কথা হয়েছিল ক'দিন আগে যে আমাদের দেখা হবে। আমি বলেছিলাম যদি বরিশাল হতে ওই সময়ে ফিরে আসি তবে।

তিন তার অফিসের সম্পূর্ণ ঠিকানা একাধিক বার বুঝিয়েছিলেন; আমি ক্রমাগত তার বর্ণনা শুনে গেছি, যদিও কিছুই রেজিস্টার/কানে তুলিনি কারণ আমি জানি 'গুগুল লোকেশন'এ দিয়ে পরে গিয়ে হাজির হবও তার কার্যালয়ে।  
ঈশ! শফি আহমেদ আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমি যদি মরে যেতাম তাহলে আপনি অন্তত একটা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলতেন, বলতেন যে আমি অমুক, অমুক দশকে আপনার ও আপনার সকল বন্ধুদের বন্ধু ছিলাম! কী যে আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়ে গেল আমার... মরে গেলে সেই ঘোষণা আরে হবেনা... ফলে আমার মরণের পরে অন্তত একটি লোক ছিল বলে যে গোপন বিশ্বাস ছিল... হয়ত তিনি বলতেন... অথচ শফি আহমেদ আপনার এই দীর্ঘ সিয়েস্তার ফলে ওই লোকটি আর রইল না যে বলতে পারবে যে... 
ফলে এখন আর ৮০'র ৯০ হতে ওই লোকটিও থাকল না বা মাকন্দো  শহরের এক দীর্ঘ সিয়েস্তায় যাওয়ার ফলে... মরে গেলে পরে কেউ কী থাকল যে বলবে যে; হেই! এই হলও গিয়ে ওই যে কিনা সেই, ওই যে ওই, সেই হলও ওই এবং সেই এবং ... 
বলে রাখি- আওয়ামীলীগে যে ক'টা লোক সাহিত্য'র সঙ্গে সম্পৃক্ত/ যোগাযোগ তার তিনটি চারটি লোকের তিনটে লোক চলে গেল, মুকুল ভাই, জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু, আর শফি আহমেদ। বাকী যে লোকটি সাহিত্য সম্পর্কিত আমার জানা মতে তিনি হলেন গিয়ে 'কাদের ভাই' আমাদের ওবায়দুল কাদের ভাই।  
একটু খারাপ লাগছে শফি আহমদে যে আমার ক'দিন আগে যখন আপনের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা ছিল এবং দেখা হলে যে আমরা অনেকক্ষণ হ্যান্ড সেক করে হাত ঝাঁকাতাম এবং দীর্ঘ একটা হাগ দিতাম।  

দীর্ঘ... ক্ষমা করে দিয়েন ব্রো । দেখা হলও না বলে ও সেই আপনারই দোষ, আমার নয়, সে ওই আপনার একটু লম্বা সিয়েস্তা হেতু দেখাটা আর অমন হলো না বলে ধরে নিলাম।
আহ! জীবন হলো আসলে কোনও এক অপরিকল্পিত বিকেলের ঘুমে (সিয়েস্তায়) চলে যাওয়া, সে একটু দীর্ঘ কী চিরদীর্ঘ... ।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক। কাজ করেছেন, সিবিএস ও এইচবিও’তে। নিউইয়র্কের শিক্ষা বিভাগে কর্মরত। কথা সাহিত্যিক ও ফিল্মমেকার।  

news24bd.tv/ডিডি

এই রকম আরও টপিক