বিজেপি ভয় পেয়েছে এবং তাকাতে হচ্ছে অন্যের দিকে 

রেজা ঘটক

বিজেপি ভয় পেয়েছে এবং তাকাতে হচ্ছে অন্যের দিকে 

রেজা ঘটক

ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৪০টিতে জয় পেয়েছে নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। অন্যদিকে ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধীদল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস। অর্থাৎ বিজেপি একা সরকার গঠনের জন্য ২৭২ ম্যাজিক ফিগারের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিজেপিকে সরকার গঠন করতে এখন নির্ভর করতে হবে প্রধানত দুই শরিক দল বিহারের নীতীশ কুমারের জনত দল ইউনাইটেড (জেডি-ইউ-১২ আসন) এবং অন্ধ্র প্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি ১৬ আসন) ওপর। চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমার তাই এখন ভারতের কিং মেকার। দশ বছর পর ভারত আবার একটি ঝুলন্ত সংসদ পেলো। নিয়ম অনুযায়ী একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিজেপিকে সরকার গঠন করতে ডাকা হবে।
বিজেপি ২৭২ ম্যাজিক ফিগার দেখাতে ব্যর্থ হলে সরকার গঠনের জন্য ডাক পাবে কংগ্রেস। ৯ জুন নতুন সরকার শপথ গ্রহণ করবে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার। গোটা ভারতে এখন একক বৃহত্তম দল বিজেপি এবং বিজেপি এখন একমাত্র সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে কংগ্রেস অনেক প্রদেশে একটি আসনও জেতেনি। অর্থাৎ সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে কংগ্রেস নিজেদের পুরনো খ্যাতি পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে।  
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে ভারতের বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি। যার নেতৃত্বে আছেন অখিলেশ যাদব। উত্তর প্রদেশকে বলা হয় বিজেপির ঘাটি। ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদি পার্টি জয় পেয়েছে ৩৭টি আসনে। বিজেপি পেয়েছে ৩৩টি আসন এবং কংগ্রেস পেয়েছে ৬টি আসন। উত্তর প্রদেশে সমাজবাদি পার্টির এই বিজয়ে বিজেপিকে নিরঙ্কুশ জয় পেতে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য মহারাষ্ট্র। মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ১৩টি আসন, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) পেয়েছে ৯টি আসন, বিজেপি পেয়েছে ৯টি আসন, শারদ পাওয়ারের কংগ্রেস পেয়েছে ৮টি আসন ও শিবসেনা শিন্ডে (এসএইচএস) পেয়েছে ৭টি আসন। মহারাষ্ট্রে বিজেপি কাঙ্খিত ফল পায়নি। ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। যেখানে লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্যে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২৯টি আসন, বিজেপি পেয়েছে ১২টি আসন এবং কংগ্রেস পেয়েছে ১টি আসন। পশ্চিমবঙ্গ একসময় শাসন করতো কমিউনিষ্ট পার্টি। সেখানে বামপন্থিদের এবার সূচনীয় পরাজয় হয়েছে। লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে তারা একটি আসনও পায়নি। সর্বভারতে যদিও সিপিএম ৪টি ও সিপিআই ২টি আসন পেয়েছে।  ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার গড়েছিল ২৮২টি আসন পেয়ে। পাঁচ বছর পর ২০১৯ সালে বিজেপি পেয়েছিল ৩০৩ আসন। এবার এক ঝটকায় বিজেপি নেমে আসল ২৪০ আসনে। অর্থ্যাৎ বিজেপির উত্থানে এবার টান লেগেছে। ঝুলন্ত সরকার কতদিন টিকবে? যতদিন বিজেপি অ্যালায়েন্সের অন্য দলগুলোর চাহিদা পূরণ করবে।  
লোকসভায় বিরোধীদের উপস্থিতি সোয়া দুইশোর বেশি হওয়ায় অর্ধেক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের পদ এখন তাদেরকে দিতে হবে। লোকসভার ডেপুটি স্পিকারের পদটি দিতে হবে বিরোধীদের। বিরোধীরা অভিযোগ করতো যে পাঁচ বছর ধরে মোদি সরকার ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগ, এনআইএর যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। তাদের দিয়ে দল ভাঙানো ও দল গঠনের মতো কাজে লাগিয়েছে। তৃতীয় মেয়াদে মোদি সরকার গঠন করলে শরিকদের যাবতীয় আবদার মেনে শাসন করার কায়দা তাঁকে শিখতে হবে। ৩২ আসনের ঘাটতি পূরণে বিজেপিকে জেডি–ইউ, টিডিপি, শিবসেনার শিন্ডে গোষ্ঠী, চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি ও উত্তর প্রদেশের জয়ন্ত চৌধুরীর আরএলডির মতো দলগুলোর সমর্থন নিতে হবে। এদের কাউকেই উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করার মতো অবস্থায় বিজেপি থাকবে না। শরিকদের দাবি মানতে হবে। পছন্দের মন্ত্রিত্বও দিতে হবে। না হলে জোট ছাড়ার প্রচ্ছন্ন শঙ্কার মধ্যে থাকতে হবে বিজেপিকে।  
সরকার গঠনের আগে এসব দলের সাথে বিজেপির নানান কিসিমের দর কষাকষি করতে হবে। যা নরেন্দ্র মোদির নতুন সরকারের জন্য বিজেপির একচেটিয়া কর্তৃত্ব অনেকটা খর্ব করবে।  

news24bd.tv/ডিডি