চলে গেলেন অভিনেতা ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড

চলে গেলেন অভিনেতা ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড

অনলাইন ডেস্ক

হলিউড অভিনেতা ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে এই অভিনেতার বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। দীর্ঘদিন বার্ধ্যক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি।

'দ্য হাঙ্গার গেমস' ও 'ডোন্ট লুক নাও' সিনেমায় অভিনয় করে সাদারল্যান্ড বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।  ডোনাল্ড সাদারল্যান্ডের ছেলে ও অভিনেতা কিফার সাদারল্যান্ড এক বিবৃতিতে বাবার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে অভিনেতার মৃত্যুর দিনক্ষণ না জানিয়ে কিফার বলেন, "ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি আপনাদের জানাচ্ছি যে, আমার বাবা ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড আর নেই। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি চলচ্চিত্রের ইতিহাসের একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতা ছিলেন ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড।

তিনি যে কাজই করে থাকুন না কেন, যে চরিত্রই করুন, ভালো-মন্দ বা কুৎসিত, হতাশ করেননি। অভিনয় করতে ভালোবাসতেন তিনি। যা করেছেন ভালোবেসে করেছেন। এর চেয়ে বেশি কখনো কেউ কিছু চাইতে পারে না। বলা যায়, একটি জীবন বেঁচে ছিল খুব ভালোভাবে। ‘দ্য ডার্টি ডজন’, ‘এমএএসএইচ’ ও ‘ক্লুটে’ সিনেমায় অভিনয় করেও দারুণ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন সাদারল্যান্ড। ১৯৭০ সালে কোরিয়ান যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত ‘এমএএসএইচ’ সিনেমায় পিয়ার্সের ভূমিকায় অভিনয় করে নিজেকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়।

এই অভিনেতার মৃত্যুর খবরে শোকার্ত হয়েছেন তার সহ অভিনেতারা। এদিকে অভিনেতা রব লো মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে, তার প্রাক্তন সহ তারকাকে "আমাদের অন্যতম সেরা অভিনেতা" বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, "অনেক বছর আগে তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। যা আমার জন্য সম্মানের ছিল। এবং আমি তার অভিনয়গুণ কখনো ভুলব না। " আরেক সহ শিল্পী ক্যারি এলউইস বলেছেন, সাদারল্যান্ডের মৃত্যুতে তিনি 'ভেঙে' পড়েছেন।

সাদারল্যান্ডের ছেলে কিফার সাদারল্যান্ডকে উদ্দেশ্য করে ক্যারি এলউইস ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, "তোমার জন্য আমাদের হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। তার (সাদারল্যান্ড) সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। ''

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছে এক শোক বার্তা। সাদারল্যান্ডের পুরো পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে ট্রুডো বলেন, "তিনি একজন শক্তিশালী অভিনেতা ছিলেন। তার নৈপুণ্যে একটি উজ্জ্বলতা বিরাজ করত। এবং সত্যিই একজন মহান কানাডিয়ান শিল্পী ছিলেন সাদারল্যান্ড। "

উল্লেখ্য, কানাডার নিউ ব্রান্সউইকে জন্ম সাদারল্যান্ডের। ক্যারিয়ার শুরু ১৯৫৭ সালে, রেডিও নিউজ রিপোর্টার হিসাবে। এর পরে লন্ডন একাডেমি অব মিউজিক এন্ড ড্রামাটিক আর্টে পড়াশোনা করার জন্য কানাডা ছেড়ে পাড়ি জমান লন্ডনে। লন্ডনে লেখাপড়া শেষে সাদারল্যান্ড ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন। প্রথমে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ে সুযোগ আসে তার।

এরপর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র সাদারল্যান্ডের হাতে আসতে বেশি সময় লাগেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত 'দ্য ডার্টি ডজন' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি, যা মুক্তি পায় ১৯৬৭ সালে। এই সিনেমাটি তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

১৯৭০ এর দশকে তাকে 'দ্য ইগল হ্যাজ ল্যান্ডেড' এ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। আশির দশকে সাদারল্যান্ড অস্কার বিজয়ী 'অর্ডিনারি পিপল' সিনেমায় একজন আত্মঘাতী কিশোরের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি সাদারল্যান্ড টেলিভিশনে ফের নিয়মিত হয়েছিলেন ২০০০ সালে। তার 'ডার্টি সেক্সি মানি' এবং 'কমান্ডার-ইন-চিফ' দারুণ সেসময় দারুণ জনপ্রিয় হয়।

'দ্য হাঙ্গার গেমস: মকিংজে - পার্ট টু', সিনেমায় তিনি অত্যাচারী রাষ্ট্রপতি স্নো চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

২০১৫ সালে সাদারল্যান্ড বিবিসিকে বলেছিলেন, তিনি আশা করেন চলচ্চিত্রটির সামাজিক-রাজনৈতিক বার্তা তরুণদের তাদের চারপাশের বিশ্ব সম্পর্কে আরও সচেতন করে তুলবে। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক সক্রিয়তার জন্য পরিচিত ছিলেন এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন একজন প্রতিবাদী মানুষ।

বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাদারল্যান্ড বলেছিলেন, তিনি অর্থ উপার্জনের জন্য কখনো অভিনয় করেননি। এবং তার ধারণা তার প্রজন্মের কোনো অভিনয় শিল্পীই সেটা করেননি। কিন্তু চলচ্চিত্রের শিল্পে মারাত্মক একটি পরিবর্তন এসে গেছে জানিয়ে সাদারল্যান্ড বলেছিলেন, "এখন অভিনয় শিল্পীরা অর্থ উপার্জন করতেই অভিনয় করেন। আগের মতবাদ আর সেই। "

বৈচিত্র্যময় বহু চরিত্রে অভিনয়ের পরও সাদারল্যান্ড কখনো অস্কারের মনোনয়ন পাননি। যদিও তিনি সম্মানসূচক একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন ২০১৭ সালে। (সূত্র: বিবিসি

news24bd.tv/SC