‌‘অপরাধের শিকার ৫৯ শতাংশই নারী, সাইবার অপরাধের শীর্ষে ‘হ্যাকিং’

‌‘অপরাধের শিকার ৫৯ শতাংশই নারী, সাইবার অপরাধের শীর্ষে ‘হ্যাকিং’

অনলাইন ডেস্ক

দেশে রেকর্ড হওয়া মোট অপরাধের ১১.৮৫ শতাংশই সাইবার অপরাধ। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিক্যাফ) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে প্রকাশ, অপরাধের শিকার হওয়া ৫৯ শতাংশই নারী। নানাভাবে এই অপরাধ সংঘটিত হলেও বর্তমানে সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে হ্যাকিংসংক্রান্ত সাইবার অপরাধ।

রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে গতকাল শনিবার এক আলোচনা সভায় গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরে সিক্যাফ।

সিক্যাফের গবেষণায় দেখা যায়, গত এক বছরে বাংলাদেশে যতগুলো সাইবার অপরাধ হয়েছে, তার ২১.৬৫ শতাংশই হ্যাকিংসংক্রান্ত সাইবার অপরাধ। আর এই অপরাধের শিকার হচ্ছেন মূলত ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মানুষ।

শতকরা হারে তা ৭৮.৭৮ শতাংশ।

গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দেশে সাইবার জগতে পর্নোগ্রাফি বিষয়ক অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া ১১.৩৫ শতাংশই পর্নোগ্রাফি অপরাধের শিকার হয়েছেন।
সিক্যাফের গবেষণায় আরো দেখা যায়, ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের সাইবার অপরাধে আক্রান্ত হওয়ার হার কমেছে।

তবে গত বছরও ১৩.৬৫ শতাংশ শিশু এই অপরাধের শিকার হয়েছে। ভুক্তভোগীদের ৪৭.৭২ শতাংশ সামাজিকভাবে মর্যাদা হারিয়েছেন। ৪০.১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তবে এই অপরাধের শিকার হওয়া প্রায় সবাই মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগীদের মাত্র ১২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নিয়ে থাকেন।

সিক্যাফের গবেষণা বলছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করা ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১২.৫০ শতাংশ এ বিষয় কোনো মন্তব্য করতে চাননি। অভিযোগ করেও কোনো ধরনের সুফল পাননি বলে জানিয়েছেন ৮৭.৫০ শতাংশ ভুক্তভোগী। নেটজগতে প্রতারণার শিকার হওয়াদের বেশির ভাগই শিক্ষিত নাগরিক।

সিক্যাফের গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক বলেন, ‘সামাজিক লোক-লজ্জার ভয়ে বেশির ভাগ সাইবার অপরাধই অন্তরালে থেকে যাচ্ছে। তাই গণ-সাইবার সাক্ষরতার পাশাপাশি দেশের সাইবার সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজস্ব সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ’

আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রি. জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আইনে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। আমরা সেই সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা করছি। সাইবার সিকিউরিটি আইনে পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের সবারই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এই সচেতনতা ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করতে হবে। শুধু শহরে নয়, গ্রাম পর্যায়েও এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ’

বিটিআরসির মহাপরিচালক আরো বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট সোসাইটি খুবই প্রয়োজন। আর স্মার্ট সোসাইটি নির্মাণে ডিজিটাল ডিভাইসকে প্রসারিত করতে হবে। আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্কিং তৈরি করেছি। এর সুফল পাওয়ার জন্য সাইবার সিকিউরিটি এবং সাইবার ক্রাইমকে আমলে রাখতে হবে। সচেতনতা যত বৃদ্ধি পাবে তত ক্রাইম কমে যাবে। ’

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (জি এস জি) বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ এ হুসেইন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক হুসেইন সামাদ, বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজির কোষাধ্যক্ষ ব্যারিস্টার নাজমুস সালিহিন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ।

news24bd.tv/তৌহিদ