সংস্কার বনাম কট্টরপন্থা: কে হবেন ইরানের প্রেসিডেন্ট?

সংগৃহীত ছবি

সংস্কার বনাম কট্টরপন্থা: কে হবেন ইরানের প্রেসিডেন্ট?

অনলাইন প্রতিবেদক

ইসলামী কট্টরপন্থী রাষ্ট্র ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে আছেন এক সংস্কারপন্থী প্রার্থী। তবে বিশ্লেষকদের দাবি, খেলা এখনও শেষ হয়নি। ইরানের প্রেসিডেন্ট হয়ে শেষ হাসিটা কে হাসবেন সেটাই দেখার অপেক্ষা।

শুক্রবার তেহরানের জনগণ ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সকাল ৭টা থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটের জন্য অপেক্ষা করেছে।

ভোটারদের সারি এতটাই দীর্ঘ ছিলো যে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। ভোটাররা ভোট দিতে আসেন পরিবারসহ। অনেকের সাথে ছিলো বয়স্ক নাগরিক। অনেকে আবার ভোট দিতে আসেন হুইলচেয়ারে।

রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ইরানের ভোটের চিত্র। ভোটাররা প্রতিবেদককে বলেন, 'আপনার পাঠকদের বলে দিন আজ ইরানিদের জন্য বিশেষ একটি দিন। বিশ্বের কোনো শত্রু ইরানিদের ভাঙতে পারবে না। কোনো নিষেধাজ্ঞারও তোয়াক্কা করি না আমরা। '

দীর্ঘ ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে এক হাতে সদ্য প্রয়াত প্রেসিডেন্ট রাইসির ছবি ধরেছিলেন এক নারী। যার অন্য হাতে ছিলো এর আগের নির্বাচনগুলোতে তার অংশগ্রহণের নানা দলিলাদি। তার এই উপস্থিতি প্রমাণ করে তিনি এমন কাউকে ভোট দিতে এসেছেন যিনি সাবেক প্রেসিডেন্টের অসমাপ্ত ধর্মীয় কাজগুলো সমাপ্ত করবেন।

এক ভোটার বলছিলেন, 'এই নির্বাচন আমার কাছে খাবারের রুটির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একটি বিপ্লবের জন্য ভোট দিচ্ছি। কারণ আমরা বিপ্লবে বিশ্বাসী। আমরা ধর্মপ্রাণ মুসলমান, এবং আমরা আমাদের নেতাকে হতাশ করতে চাই না। '

যদিও সেখানে থাকা অনেকেই আবার এর বিরোধিতাও করেন। কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন ভোটার রক্ষণশীল ভোটারদের উগ্র বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন।

ইরানে যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট চার বছরের মেয়াদের জন্য সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়। জিততে হলে একজন প্রার্থীকে ৫০% এর বেশি ভোট পেতে হবে। যদি কোন প্রার্থী এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে, যেমনটি এবারও ঘটেছে, একটি রান অফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ভোটাররা তাদের আইডি কার্ড নিয়ে ভোট কেন্দ্রে পৌঁছান, একটি স্ট্যাম্পযুক্ত ব্যালট গ্রহণ করেন এবং তাদের নির্বাচিত প্রার্থীর নামে লেখেন। ভোট দেয়ার পর তারা তাদের নথিপত্র ফেরত পায়। সহজে বলতে গেলে এটা অনেকটা যেকোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মতো। তবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রে এসব নির্বাচনের গভীর তাৎপর্য রয়েছে।

ভোটে অংশগ্রহণই মুখ্য
ভোটারদের উপস্থিতি বৈধ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মূল ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। দেশটিতে ভোটে অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষ প্রার্থী এবং ভোটার উভয়ের জন্য সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করে একটি ব্যতিক্রমী সুবিধাজনক ভোটদান প্রক্রিয়া তৈরি করেছে। নাগরিকরা সেখানে সমালোচনা, অভিযোগ এবং প্রস্তাব করার জন্য স্বাধীন। কেউ কেউ ভোট কেন্দ্রের বাইরেও এটি করে। এই উন্মুক্ত পরিবেশের লক্ষ্য হলো দেশের রাজনীতিতে ইরানিদের আগ্রহকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা।

কিন্তু ইরানে মূল সমস্যা হল অর্ধেক জনসংখ্যা ভোট দেয় না। এজন্য ভোটারদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানোর জন্য সাংবাদিকদেরও সরকার থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের মতে, প্রায় ১৫০টি বিদেশি মিডিয়া আউটলেট সেখানে উপস্থিত ছিল। যার মধ্যে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলি সাধারণত ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বের সমালোচনা করে। তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছে এবং ভোটাররা যাতে চাপে না পড়ে এবং তাদের প্রতিবেদনগুলো সঠিক এবং উস্কানি বা বিকৃতি থেকে মুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

ইরানীরা কি চায়?
মোহাম্মদ মারান্দি নামে ইরানের একজন বিশিষ্ট বিশ্লেষক আরটি'কে বলেন, 'পোল অনুযায়ী ইরানীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অর্থনীতি। পোল বলছে- চাকরি, মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনীতি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা টেলিভিশনে বেশিরভাগ সময় বৈদেশিক নীতি নিয়ে কথা বলেছেন। এটা নিয়ে নাগরিকদের আগ্রহ কম। '

প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনী বিতর্কে হিজাব একটি প্রধান ফোকাস ছিল। এই ইস্যুটি এখন ধর্মীয় নৈতিকতাকে অতিক্রম করে রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ করেছে। দেশটির কিছু অংশ এই পরিবর্তনের দাবি করে।

শুক্রবার দিনভর চলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সবশেষ পাওয়া ফল অনুযায়ী, সংস্কারপন্থী পেজেশকিয়ান অপ্রত্যাশিতভাবে প্রথম রাউন্ডে জয়লাভ করেছেন। অন্যদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাইদ জলিলি। যিনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত।

news24bd.tv/FA