ছাত্রলীগ কর্মীদের ছাদ থেকে ফেলে দিল আন্দোলনকারীরা

চট্টগ্রামের মুরাদপুর

ছাত্রলীগ কর্মীদের ছাদ থেকে ফেলে দিল আন্দোলনকারীরা

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রামের মুরাদপুরে ছাত্রলীগ কর্মীদের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে।  
এসময় প্রতিপক্ষের হামলা থেকে বাঁচতে ভবনের গ্রিল ধরে ঝুলতে থাকলেও রক্ষা পায়নি ছাত্রলীগ কর্মীরা। কেউ কেউ গ্রিল ভেঙে রুম থেকে বেরিয়ে আসারও চেষ্টা করেন। আজ মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় হামলার শিকার একজন ভিডিও কলে বাঁচার আকুতি জানান। বলতে থাকেন, আমাকে বাঁচান। আমাকে ওরা মেরে ফেলল।

‘এসময় ভবনের ছাদ থেকে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন দুর্বৃত্তরা।

জীবন বাঁচাতে লাফ দেয় অনেকে। এমনকি মাটিতে পড়েও রক্ষা পায়নি তারা। আহত ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলার শিকার হয়। ’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিকাল তিনটা থেকে নগরীর ষোলশহর স্টেশনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের কথা ছিলো কোটা আন্দোলনরীদের। এর আগেই ষোলশহর স্টেশন দখল করে রাখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরে কোটা আন্দোলনকারীরা মুরাদপুরে অবস্থান নেন।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ষোলশহর থেকে মিছিল নিয়ে মুরাদপুর গেলে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় ককটেল বিস্ফোরণসহ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়।

দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। চিত্রে দেখা যায়, হামলা থেকে বাঁচতে মুরাদপুরের একটি ভবনে দেয়াল থেকে শুরু করে কার্নিশ ও জানালা ধরে ঝুলে আছেন কয়েকজন। আর ওই ভবনের ছাদ থেকে কয়েকজন ছেলে গ্রিলে ঝুলে থাকাদের ওপর ইট-পাথর ছুঁড়ছে।

আরেকটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, ওই ভবনের নিচে মাটির ওপর কয়েকজন পড়ে আছেন। ধারণা করা হচ্ছে তারা আহত হয়ে সেখানে পড়ে আছেন। আরেকটি ভিডিও চিত্র দেখা গেছে, বাড়িটির দেয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একজন ছেলেও লাঠি-সোটা হাতে কয়েকজন ছেলে হামলা করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটে মুরাদপুর মোড়ে গিয়ে বেলাল কমপ্লেক্সের একটি বাণিজ্যিক ভবনে আশ্রয় নেন। এক পর্যায়ে কোটা আন্দোলনকারীরা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে এবং বাইরে থেকে ঘিরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারধর শুরু করেন।

এরপর ওই ভবনের ছাদ উঠে আন্দোলনকারীরা ভবনের দেয়াল ও জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে থাকাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। যারা গ্রিল ধরে ঝুলে আছে তারা যেন পড়ে যায় সেজন্য উপর থেকে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় কয়েকজন মাটিতে পড়ে গিয়ে আহতও হয়েছেন।

যারা মাটিতে পড়ে আছেন, তারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। তবে তাদের পরিচয় এবং শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে পারেনি চট্টগ্রাম ছাত্রলীগ। আর এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।

চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়।

নিহত মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ ফারুক (৩২) ও মোহাম্মদ ওয়াসিম (২২)। এছাড়া অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। তাঁর বয়স আনুমানিক ২৪ হবে বলে জানিয়েছেন চমেক চিকিৎসকরা।

সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির ব্যাটালিয়ন-৮ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী।