আজ বিশ্ব বাঘ দিবস, সুন্দরবনে বাড়ছে বাঘের সংখ্যা

সবশেষ ২০১৮ সালে বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায়।

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস, সুন্দরবনে বাড়ছে বাঘের সংখ্যা

অনলাইন ডেস্ক

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস। বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা এবং এই প্রাণী সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ২৯ জুলাই দিবসটি পালন করা হয়। ২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ অভিবর্তনে এ দিবসটির সূচনা হয়। প্রাণিবিদরা বাঘকে বিড়ালজাতীয় বা ক্যাট গ্রুপের প্রাণী হিসেবে বর্ণনা করেন।

আমাদের চেনা বাঘের কেতাবি নাম ‘প্যান্থেরা টাইগ্রিস’। একসময় পৃথিবীতে বাঘের ৯টি উপপ্রজাতি ছিল। বর্তমানে টিকে আছে ছয়টি। সুন্দরবনের বাঘের বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্যান্থেরা টাইগ্রিস টাইগ্রিস’।
গাঢ় ডোরাকাটা দাগ এর অনন্য বৈশিষ্ট্য।

বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হলেও বাঘ টিকে আছে বিশ্বে এমন ১৩টি দেশে বাঘের ঘনত্ব বেশি থাকায় এসব দেশে গুরুত্ব সহকারে দিবসটি পালন করা হয়।  

সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে শেষ হয়েছে বাঘ গণনা। প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ জরিপে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির আভাস মিলেছে। এ বছর দিবসটির মূল আকর্ষণ ছিল বাঘশুমারির ফলাফল প্রকাশ। কিন্তু তা হচ্ছে না। বন কর্মকর্তারা জানান, আন্দোলন ও কারফিউর কারণে সব কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। সেজন্য আগামী মাসে ফল ঘোষণা করা হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর সুরক্ষা, প্রজনন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাঘের শিকার প্রাণীর সংখ্যা বাড়াতেও কাজ করতে হবে বন বিভাগকে।

২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রথম বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ নিজ নিজ দেশে বাঘের সংখ্যা ১২ বছরের মধ্যেদ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছিল। এরমধ্যে নেপাল বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। ভারত এবং ভুটানও দ্বিগুণের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা সামান্য বাড়লেও সে লক্ষ্য থেকে দূরে আছে।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ। সুন্দরবনের ভারসাম্য ধরে রাখতে সবার উপরে তাদের ভূমিকা। সুন্দরবন ভ্রমণে এখন অনেক পর্যটকের ক্যামেরায় ধরা পড়ছে বাঘের ছবি। চোরা শিকারি, বনদস্যুদের দাপট, অভয়ারণ্যে অবাধ যাতায়াত, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে গত কয়েক দশকে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমছিল। কমছিল বাঘের শিকার প্রাণীর সংখ্যাও।

সবশেষ ২০১৮ সালে বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায়। এরপর অভয়ারণ্য বাড়ানো এবং সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করাসহ নানা উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। যার সুফলও মিলতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে বাঘের প্রজনন, নিরাপত্তা ও সংখ্যা বৃদ্ধিতে সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০২২ সালে তৃতীয়বারের মতো সুন্দরবনের বাঘ গণনা শুরু হয় যা চলে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট রেঞ্জের ৬৩৯টি গ্রিডে ক্যামেরা বসিয়ে সংগ্রহ করা হয় ছবি। এসব ছবির তথ্য-উপাত্ত নিয়ে নিয়ে এখন চলছে বিশ্লেষণ।

বন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সাড়ে ১০ লাখেরও বেশি ছবি পাওয়া যায়। এরমধ্য থেকে সাড়ে ৭ হাজার বাঘের ছবি নিয়ে চলে বিশ্লেষণ, যা শেষ হয়েছে ৭ জুলাই। এই সাড়ে সাত হাজার বাঘের ছবি থেকে ইউনিক বাঘের ছবি নির্ধারণ করতে এখন চলছে বিশ্লেষণ।

বন বিভাগের তথ্যে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি এবং এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে দাঁড়ায় ১০৬টি। হঠাৎ করে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০টি থেকে ১০৬টিতে এসে দাঁড়ালে সারা বিশ্বে হইচই পড়ে যায়। ২০১৮ সালের সর্বশেষ বাঘশুমারিতে সুন্দরবনে ১০৬ থেকে বেড়ে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৪টিতে।

প্রাণী ও পরিবেশবাদীদের মতে, বাঘ সারা বিশ্বে একটি বিপন্ন প্রাণী। তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে তিন হাজার ৮৪০টি বাঘ প্রকৃতিতে রয়েছে।

বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, বাঘের প্রায় সাড়ে সাত হাজার ছবি পাওয়া গেছে। একই বাঘের ছবি পাওয়া গেছে বহুবার। এজন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতিটি বাঘের ‘ইউনিক আইডি’ করা হয়েছে। এসব ছবি বিশেষজ্ঞদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। তারা সেগুলো বিশ্লেষণ করছেন।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে লবণাক্ত এলাকা থেকে যে এলাকায় লবণ কম সেখানে বাঘের ছবি অনেক বেশি পেয়েছি। গত দুটি জরিপে খুলনা রেঞ্জে বাঘের ছবি কম ছিল, কিন্তু এবারের জরিপে খুলনা রেঞ্জে প্রচুর বাঘের ছবি পেয়েছি। যেটা সুন্দরবনের মোট বাঘের সংখ্যায়ও ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে এখন বাঘের যত উপপ্রজাতি রয়েছে, তাদের মধ্যে সুন্দরবনের বাঘ তুলনায় ছোট। স্বাভাবিকভাবে এর ওজনও কম। সুন্দরবনের স্ত্রীজাতীয় বাঘের গড় ওজন ৭৫ থেকে ৮০ কেজি। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে পাওয়া স্ত্রী বাঘের গড় ওজন ১৩৫ থেকে ১৪০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ’ 

news24bd.tv/DHL