হাসিনা চারজন ছাড়া কারো কথা শুনতেন না, কে সেই চারজন?

সংগৃহীত ছবি

হাসিনা চারজন ছাড়া কারো কথা শুনতেন না, কে সেই চারজন?

অনলাইন ডেস্ক

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার আকস্মিক পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ও দেশত্যাগে বিস্মিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন অনেক মন্ত্রী ও নেতা।  

গত এক সপ্তাহ ধরে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে থাকা আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলতে সক্ষম হয়েছিল। লুকিয়ে থাকা নেতা-কর্মীরাই দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন তাদের হতাশার কথা।

তাদের ভিতর একজন নেতা বলেন, আপা (হাসিনা) আমাদের ছেড়ে গেছেন।


এই অনুভূতি অনেক নেতা-কর্মীকেই প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন ৫ আগস্টে ঘটে যাওয়া ঘটনার পূর্বাভাস তাদের আগে দেওয়া হয়নি। হাসিনা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও অবাক হয়েছিলেন।

এমনই একজন নেতা জানান, " "আমরা টিভি থেকে এটি সম্পর্কে জেনেছি। " 


আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেন, বিকাল ৩টার দিকে যখন সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন ঠিক তখনই আমরা আমাদের বাড়ি থেকে বের হতে পেরেছি। তিনি জানান, "ধরা পড়লে আমাকে এবং আমার পরিবারকে জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হতো। " 

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যে গুলি ছোড়া হয়েছে- এ নিয়েও কয়েকজন নেতা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একজন নেতা বলেন, শেখ হাসিনা আমাদের কথা শুনতো না। তিনি এজন্য আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ চার সদস্যকে দায়ী করেছেন।  

'চারজনের এই গ্যাং'- শেখ হাসিনাকে জনবিচ্ছিন্ন করেছেন বলে দাবি ওই আওয়ামী লীগ নেতার। এই চারজনের মধ্যে রয়েছেন হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, সালমান এফ রহমান, ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আওয়ামী লীগের এই নেতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, এই গ্যাং শেখ হাসিনাকে পতনের দিকে নিয়ে গেছে। তিনি এই চারজনকে অন্ধবিশ্বাস করতেন এবং অতীতে শেখ হাসিনার যে রাজনৈতিক সত্ত্বা ছিল তা তিনি হারিয়ে ফেলেন এই চারজনের উপরে ভরসা করায়।  

চলতি বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচনে বিএনপিকে দলে না আনার ভুলকে হাসিনার ‘বড় ভুল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অনেক নেতা।  

দুর্নীতি, চাঁদাবাজি (চাঁদাবাজি), পুলিশের নৃশংসতার কারণে আমরা জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ অনুভব করতে পারতা তা কেটে যেত যদি বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হতো। আমরা এখনও জয়ী হতে পারতাম এবং দলকে ক্ষমতায় রাখতে পারতাম বলে উল্লেখ করেন এক নেতা।


নেতাকর্মীরা মনে করেন যে হাসিনা, জানুয়ারী ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করার পরে, অনেক বেশি একগুঁয়ে হয়ে উঠেছিলেন এবং কোনো পরামর্শ শুনতেন না। "তিনি টানা চতুর্থ জয়ের পর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন, এবং কোটা সংস্কারের প্রতিবাদ শুরু হলে জনগণের ক্ষোভের মাত্রা দেখতে ব্যর্থ হন," বলে জানান এক নেতা।  

জুলাইয়ের শুরুতে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সাথে দেখা করতে আবেদন করেছিলেন কিছু নেতা, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছিল যখন গোয়েন্দা বিভাগ জুলাই মাসে ছাত্রনেতাদের তুলে নিয়েছিল এবং ভয় দেখিয়ে এবং আন্দোলন প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। প্রবর্তীতে তারা বিবৃতি দেয় যে তাদের দিয়ে জোর করিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।  

হাসিনার চলে যাওয়ায়, ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বে থাকা অনেককে গ্রেফতার করা হয়। এতে করে সাড়ে ১৬ বছর ধরে দেশ শাসন করা ৫০ বছর বয়সী দলটি অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।  
তাদের মতে, তাঁর (হাসিনার) উচিৎ দলকে পুনর্গঠনের জন্য, কিছু তরুণ আওয়ামী নেতা যাদের মাঠ পর্যায়ে বিশ্বাসযোগ্যতা আছে, জনগণের সাথে যোগাযোগ আছে এবং অবশ্যই পরিবারের প্রতি অনুগত এমন মানুষকে নিয়োগ করা উচিত।  

আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে এখন যে মামলা ও অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে তার দীর্ঘ তালিকার প্রস্তুতি নিয়ে এক নেতা বলেন, অন্তত একজন সাধারণ সম্পাদক বা এমন একজন পদাধিকারী থাকা উচিত যিনি আওয়ামী লীগের লেটারহেডে সরকারের কাছে আবেদন করতে পারেন। প্রয়োজনে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের আইনি অধিকার চাইতে পারেন। হতাশা প্রকাশ করে এই নেতা বলেন, এখন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

রাজপথে জনগণের মনোভাব অনেকটা হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বিরোধী হলেও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন হাসিনা পরিবার এবং তার উত্তরাধিকারী সজীব ওয়াজেদ জয়ের ন্যূনতম বক্তব্য দেওয়া উচিত। সূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

news24bd.tv/এসএম

এই রকম আরও টপিক