ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, দাফনের আগেই আসামির জামিন

ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, দাফনের আগেই আসামির জামিন

অনলাইন ডেস্ক

ঢাকার গ্রিন রোডে অবস্থিত কমফোর্ট হাসপাতালে সেফটোপ্লাস্টি সার্জারি করার সময় কর্তব্যরত ডাক্তার এবং সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, উদাসীনতা এবং ভুল চিকিৎসার কারণে মিনিস্টার মাইওয়ান গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সামসুদ্দোহা শিমুলের মৃত্যু ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) চুয়াডাঙ্গার জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

বাংলাদেশ কর্পোরেট সেক্টরের আইকন, অটবি ফার্নিচার কোম্পানির সাবেক জেনারেল ম্যানেজার, এসিআই গ্রুপের সাবেক পরিচালক এবং মিনিস্টার- মাইওয়ান গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জনাব সামসুদ্দোহা শিমুলের এই মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার।

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করায় মৃত্যুর প্রতিবাদে গত বুধবার (২১ আগস্ট) মৃত ব্যক্তির পক্ষে বাদী হয়ে জনাব রিয়াজ ইসলাম (ভাগ্নে) কলাবাগান থানায় কমফোর্ট হাসপাতালের ডাক্তার ড. জাহির আল-আমীনকে প্রধান আসামি করে মোট ৪ ব্যক্তির নামে একটি মামলা দায়ের করেন।

তবে বৃ্‌হস্পতিবার (২২ আগস্ট) মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করার পূর্বেই আসামিদের কোর্টে তোলা হলে মামলাটি বিচার বিশ্লেষণ করে মহামান্য আদালত প্রধান আসামিসহ বাকিদের জামিন মঞ্জুর করেন।

কলাবাগান থানার মামলার ২ (৮), ২০২৪ মামলা করার সময় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করে থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবিরকে বারবার মামলাটির ধারা পরিবর্তন করে দেওয়ার আর্জি জানানো হলেও ধারা পরিবর্তন করা হয়নি। মামলাটি বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৩০৪ এর ‘ক’ ধারা অনুযায়ী রুজু করা হয়।

উক্ত ধারা অনুযায়ী একজন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর এবং সর্বনিম্ন ২ বছর হয় যা অত্যন্ত প্রহসনমূলক এবং সুষ্ঠু বিচারের পরিপন্থী।

ভুক্তভোগীর পরিবার এবং স্বজনদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে মামলাটির ধারা পরিবর্তন করে দেওয়া হয় যাতে করে আসামি কোন প্রকার আইনি জটিলতায় ছাড়াই আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী জনাব সায়মা সুলতানা বলেন, ‘‘আমার স্বামী জনাব সামসুদ্দোহা শিমুল একজন সুস্থ সবল মানুষ। সেফটোপ্লাস্টি সার্জারির মত এমন একটি ছোট সার্জারি করে আমার স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমার স্বামী পৃথিবীতে নেই। আমার দুটো সন্তান। তারা কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছে। আমার দুই সন্তানকে আমি কি বলে সান্ত্বনা দিবো সেই ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমাদের সব শেষ। আমি আমার স্বামীর হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। ’’

এ ব্যাপারে মিনিস্টার মাইওয়ান গ্রুপের হেড অব ব্র্যান্ড সোহেল কিবরিয়া বলেন, আমরা বার বার বলার পরও পুলিশ নিজেদের ইচ্ছায় মামলার ধারা ঠিক করেন। আমাদের এখন প্রধান অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। আমরা বিচার চাই। পুলিশের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে যাব।
শনিবার (২৪ আগস্ট) প্রেসক্লাবের সামনে আমরা ‘জাস্টিস ফর শিমুল’ ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবো এবং স্মারকলিপি পেশ করবো। ”

মিনিস্টার মাইওয়ান গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সামসুদ্দোহা শিমুলের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয় শুক্রবার (২৩ আগস্ট) চুয়াডাঙ্গার জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে। এসময় সারাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

এর আগে, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে ঢাকার গ্রিনরোডে অবস্থিত কমফোর্ট হাসপাতালে সেফটোপ্লাস্টি সার্জারি করার জন্য জনাব সামসুদ্দোহা শিমুলকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার জনাব ড. জাহির আল-আমীন এবং ইফতেখারুল কাওসার (যিনি এনেস্থিসিয়া দেন) রোগীর অপারেশন করতে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করেন।

সাধারণত এই অপারেশন শেষ করতে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট লাগলেও ডাক্তার অনেক সময় নেওয়ায় রোগীর পরিবারের সদস্যরা উদগ্রীব হয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাইলে প্রথমে তারা বলতে অস্বীকার করে। কর্তব্যরত ডাক্তার অন্য উপায় না পেয়ে এক পর্যায়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে স্বজনদের জানায় রোগী মারা গেছেন। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঐ ডাক্তার তাৎক্ষণিক আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঐ ডাক্তারকে অজ্ঞাত জায়গা থেকে বের করে লোক দেখানো পুলিশের হাতে সোপর্দ করে দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ডাক্তার এবং যিনি এনেস্থিসিয়া দেন তারা অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশের পূর্বে মদ্যপ অবস্থায় ছিলো বলে দাবি করা হয়।

ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা করার আরও অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে তিনি এক মহিলা রোগীর কানের ভুল সার্জারির করার কারণে তার চিকিৎসা করার লাইসেন্স এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল যা এখনো আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। এমন একজন ডাক্তার কি করে উক্ত হাসপাতালে ডা. হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ এবং কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীর স্বজনরা।

news24bd.tv/SC