বাংলাদেশিরা সবসময় ভারতকে তাদের প্রতিপক্ষ ভাবে। গত ১৫ বছর স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনের ফলে বাংলাদেশের মানুষের যে দুর্দশা, তার জন্যও এদেশের মানুষ ভারতকে দায়ী করে। আর এর পিছনে দায়ী ভারতের আওয়ামীলীগ প্রীতি।
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়্যার’র কাছে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনই কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান।
১৯৭৯ সালে ইরান প্রেসিডেন্ট শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি দেশ ছেড়ে পালানোর পর সেখানকার মানুষ যেমন আমেরিকাকে দায়ী করেছিলো। ঠিক তেমনই বাংলাদেশের মানুষ তাদের সবধরনের খারাপ পরিস্থিতির জন্য ভারতকে দায়ী করে।
মি. সোবহান বলেন, ইরান-আমেরিকার সম্পর্কের ব্যাপারটি যদিও একটু ভিন্ন। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে ভারতীয়দের ব্যাপারটি দেখেন, আমাদের অনেকের আত্মীয় আছে ভারতে।
উপস্থাপক করণ থাপারের সঙ্গে ৩০ মিনিটের এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এদেশের মানুষ মনে করে এতদিন আওয়ামীলীগকে টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের সাহায্য দিয়েছিলো ভারত।
ভারত বিদ্বেষের ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, এদেশের মানুষের ধারণা ভারতীয়রা তাদের অবজ্ঞা করে। বিশেষ করে ভারতীয় মন্ত্রী বা সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্যে এই ব্যাপারটি প্রায়শই দেখা যায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশিদের নিয়ে করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র একটি বক্ত্যব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, অমিত শাহ বাংলাদেশের মানুষকে ভাবেন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। পাশাপাশি আপনাদের গণমাধ্যমেও আমাদের দেশের মানুষকে দেখানো হয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে। ফলে এদেশের মানুষ খুব সহজেই বুঝতে পারে, ভারতীয়রা তাদের পছন্দ করেন না। তাদের অবজ্ঞা করেন।
বিগত বছরের নির্বাচন নিয়ে মি. সোবহান বলেন, হাসিনার সময়ের বেশিরভাগ নির্বাচন ছিলো একপাক্ষিক। কিন্তু ভারত এখানে কি করেছে, আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় রাখতে তারা হাসিনার এই একপাক্ষিক নির্বাচনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে সহায়তা করেছে।
ভারতে হাসিনার অবস্থান নিয়ে মি. সোবহাব বলেন, ভারত এখনো মনে করে আওয়ামী লীগ তাদের প্রিয় বন্ধু। কিন্তু তারা জানেনা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কি পরিমাণ আওয়ামী বিদ্বেষী মনোভাব তৈরী হয়েছে। সুতরাং আওয়ামী লীগকে ভারতের এমন অন্ধ সমর্থন এবং ভারতে হাসিনার অবস্থানের বিষয়টি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও খারাপ করবে।
তিনি মনে করেন, ভারতের উচিৎ প্রতিবেশি দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যবস্থা নেওয়া।
তিনি বলেন, হাসিনা সরকার পতনের তিন সপ্তাহ হতে চললো। কিন্তু খেয়াল করেন, ভারত এখনো হাসিনাকে সমর্থন করছে। ব্যাপারটা এমন থাকলে, দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হবে।
তিনি ভারতে হাসিনার অবস্থানের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ভারত যদি হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়, তাহলে দুই দেশের সম্পর্কে বড় প্রভাব পড়বে।
তবে. মি সোবহান আশা রাখেন যে, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো হবে। আলোচনার দরজা এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি। তিনি বলেন, আমরা তাদের প্রতিবেশি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। প্রতিবেশি হিসেবে অবশ্যই আমাদের পরস্পরের সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন আছে।
তিনি আরও বলেন, অনেকের মতে আন্দোলনের ফলে দেশে ইসলামিক দলগুলোর প্রভাব বেড়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা খুবই পরিষ্কার যে, এই আন্দোলন কোনো ইসলামিক বিপ্লবের আন্দোলন ছিলোনা। এটা ছিলো ছাত্রদের আন্দোলন। ছাত্ররা সবার সামনে থেকে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে এবং দেশকে একটি পুর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে জীবন দিয়েছে।
তিনি আরও গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়ে কথা বলেন। সেটি হলো বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন।
মি. সোবহানের মতে, বাংলাদেশের হিন্দুরা কোনো ঝুঁকির মধ্যে নেই। কিছু এলাকায় কিছু সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটেছে। কিন্তু আপনাদের ভারতীয় গণমাধ্যমে যা দেখানো হয়েছে, তেমনটা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা এদেশের অভ্যন্তরে এখন পর্যন্ত নিরাপদে আছে এবং ভালো আছে।
সূত্র: দ্য ওয়্যার
news24bd.tv/JP