উপকূলবাসীর আশার আলো বরগুনার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

তালতলীর নিশানবাড়িয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিমার্ণ কাজ

উপকূলবাসীর আশার আলো বরগুনার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বরগুনা জেলার তালতলীর নিশানবাড়িয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিমার্ণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চীনের ‘পাওয়ার চায়না রিসোসর্ লিমিটেড’ ও বাংলাদেশের আইসোটেক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আইসোটেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড’ ও বরিশাল ইলেট্রিক পাওয়ার কোম্পানি। ৩০৭ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হবে ২০২২ সালে। এ প্রকল্প এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে ১৭৪ একর জমির ওপর গত বছর এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরের অদূরে বরগুনার তালতলীতে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। এরইমধ্যে জমি অধিগ্রহণ এবং মাটি ভরাটের কাজ এগিয়েছে অনেক দূর। ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় গড়ে তোলা ভূমিহীন দরিদ্র ১৩৯টি পরিবারের মধ্যে ১২৫টি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কমর্কতার্রা জানিয়েছেন, নিশানবাড়িয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে লোডশেডিং কী তা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ভুলে যাবে।

বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড লাইনের বরিশাল স্টেশনের পর সমস্যা দেখা দিলেও ভোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পটুয়াখালী ও বরগুনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সাময়িক সমস্যা মেটানো হচ্ছে।

আইসোটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মঈনুল আলম জানিয়েছেন, পরিচ্ছন্ন কয়লা প্রযুক্তি সম্পন্ন পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ঘিরে তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়ায় ব্যাপক কমর্চাঞ্চল্য চলছে। আমাদের পার্টনার ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান। তারা ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে দক্ষতার সঙ্গে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। তারা বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।

তিনি আরও জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালিত হবে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লার মাধ্যমে। সে জন্য পায়রায় নিমার্ণ করা হচ্ছে বড় কোল-ইয়াডর্। আমদানি করা কয়লা সরাসরি গভীর সমুদ্র থেকে এই কোল-ইয়াডের্ আসবে। বাংলাদেশের সবার্ধুনিক পাওয়ার প্লান্ট এখানে স্থাপিত হচ্ছে। আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্লান করা হচ্ছে। শকস অ্যান্ড নকসকে কন্ট্রোল করার জন্য ডি সালফারাইজেশন প্যান বসানো হবে। কয়লা যেন ছড়িয়ে না যায়, সে ব্যবস্থাও রাখা হবে।

news24bd.tv

আইসোটেকের মিডিয়া অ্যাডভাইজার ফিরোজ চৌধুরী জানিয়েছেন, সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পে সাড়ে তিন হাজার লোক কমর্সংস্থানের সুযোগ পাবে। পরিবেশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেটাকে সবোর্চ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সেখানে বসবাসকারীদের জন্য পুনবার্সন কাযর্ক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সেখানে পানি উন্নয়নের বোডের্র জমিতে ১৩৯টি পরিবারকে পুনবার্সন করা হচ্ছে। এছাড়া সেখানে নির্মিত হবে ৫০ শয্যার হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দির। যেহেতু এলাকার পানি লবণাক্ত তাই থাকবে সুপেয় পানিরও ব্যবস্থা।

পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানান, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লোডশেডিং এর সিস্টেমই থাকবে না।

বরগুনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে গেলে দেশের বিদ্যুত সংকট দূর করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এজন্য সকলের সহযোগিতা করা উচিৎ।

বরগুনা-১ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, তালতলীতে আইসোটেক গ্রুপ ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এটি  দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলে আর্থসামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেড ক্যাটাগরির কয়লাভিত্তিক এই প্রকল্পটিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়বে না। ২৫ বছর মেয়াদী এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে সরকার পাবে ৩০৭ মেগাওয়াট। যা ২০২২ সাল থেকে যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। আর প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সরকারের কাছে বিক্রি করা হবে ৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে সবোর্চ্চ ৬ টাকা ৭০ পয়সা পর্যন্ত।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর