বিডিআর বিদ্রোহ উসকে দেয় লাইভে মুন্নি সাহার ভুল তথ্য

সংগৃহীত ছবি

ভিডিও বার্তায় মইন ইউ আহমেদ

বিডিআর বিদ্রোহ উসকে দেয় লাইভে মুন্নি সাহার ভুল তথ্য

অনলাইন প্রতিবেদক

টেলিভিশন লাইভে সাংবাদিক মুন্নী সাহার ভুল তথ্য বিডিআর বিদ্রোহ আরও উসকে দিয়েছিলো বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ।

গত বৃহস্পতিবার তার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেয়া এক ভিডিওতে ওই হত্যাকাণ্ডের সময় সেনাপ্রধান হিসেবে নিজের ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে তিনি দাবি করেন, পিলখানার ভেতরে কী হচ্ছে, তারা কি অফিসারকে জিম্মি করছে, না হত্যা করছে? শুধু আমরা গুলির আওয়াজ শুনছি এবং এই গুলির আওয়াজ ওই এলাকার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। গোয়েন্দার থেকে আমরা কোনো তথ্যই পাচ্ছিলাম না।

শুধু ইলেকট্রনিক মিডিয়ার লোকজন (সাংবাদিক) ওখানে লাইভ প্রোগ্রাম কাভার করছিল। তার মধ্যে ছিল আমার যা স্মরণ পড়ে, মুন্নী সাহা টেলিকাস্ট করছিল লাইভ এবং বিদ্রোহীরা অফিসার সম্বন্ধে বিভিন্ন ভুল বক্তব্য, মিথ্যা বক্তব্য তুলে ধরছিল জনগণের সামনে। এর মাধ্যমে একটি ভুল ধারণা সৃষ্টি হচ্ছিল অফিসার সম্বন্ধে। এ ছাড়াও বিডিআরের অন্যান্য ক্যাম্পেও এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করছে।

উল্লেখ্য, পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের সময় সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল (অব.) মইন ইউ আহমেদ। ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ সরকার শপথ নেয় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। শপথ নেওয়ার পর দুই মাসের কিছু কম সময়ের মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থানরত মইন ইউ আহমেদ তার ২৯ মিনিটের ভিডিও বার্তায় ভিডিওবার্তায় বলেন, হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে ১৫ বছরে শুধু বিগত সরকারের কথা শুনতে হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা অনেক কিছুই জানা নেই। জনগণও জানতে পারেনি। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর অব্যবহৃত কিছু অস্ত্র বিডিআরকে দেওয়া নিয়ে বাহিনীটির তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের (হত্যাকাণ্ডে নিহত) সঙ্গে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে তার কথা হয়। তিনি অস্ত্রগুলো নিতে রাজি হন। তখন পর্যন্ত বিদ্রোহ সম্পর্কে তিনি (বিডিআরের ডিজি) কিছুই জানতেন না বলেই সাবেক সেনাপ্রধানের বিশ্বাস।

তিনি আরও বলেন, একটি বৈঠকে থাকার সময় ওই দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পিলখানায় কিছু একটা ঘটার তথ্য জানতে পারেন বলে উল্লেখ করেন মইন ইউ আহমেদ। আমার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি কর্নেল ফিরোজ রুমে প্রবেশ করেন এবং আমাকে কানে কানে বলেন, পিলখানায় গন্ডগোল হচ্ছে। আপনার দিকনির্দেশনা প্রয়োজন।

মইন ইউ আহমেদ জানান, তিনি তখন ওই সভা স্থগিত করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিডিআরের ডিজির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাঁদের ফোন ধারাবাহিক ব্যস্ত ছিল। সামরিক গোয়েন্দারা তখন তাঁকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান। ভয়াবহতা উপলব্ধি করে তিনি তখন সময় বাঁচাতে কারও নির্দেশ ছাড়াই সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে নির্দেশ দেন। তারা তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধপ্রস্তুতি শুরু করে, যার নামকরণ করা হয় ‘অপারেশন রি-স্টোর অর্ডার’।

সকাল ৯টা ৪৭ মিনিটে বিডিআরের ডিজিকে ফোনে পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করেন মইন ইউ আহমেদ। তিনি বলেন, বিডিআর ডিজি এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। তিনি (মহাপরিচালক) বলেন, দরবার চলাকালীন দুজন সশস্ত্র সৈনিক দরবার হলে প্রবেশ করে। একজন ডিজির পেছনে এসে দাঁড়ায়, অপরজন দরবার হল অতিক্রম করে বাইরে চলে যায়। তার পরপরই বাইরে থেকে গুলির শব্দ আসে। গুলির শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে দরবার হলে উপস্থিত সৈনিকেরা গন্ডগোল শুরু করে দেয়। তারা দাঁড়িয়ে যায়। দরবার হল থেকে বের হয়ে যায়।

সবশেষে সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ বলেন, ‘মনে হলো সব পরিকল্পনার অংশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে। ’

news24bd.tv/FA