২০০৯, ১৩, ২১ ও ২৪ সালে হাসিনা গণহত্যা চালিয়েছে: মামুনুল হক

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক

২০০৯, ১৩, ২১ ও ২৪ সালে হাসিনা গণহত্যা চালিয়েছে: মামুনুল হক

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেছেন, শেখ হাসিনার রাজনীতি ছিল প্রতিশোধের রাজনীতি, শেখ হাসিনার রাজনীতি ছিল লুটপাটের রাজনীতি। তিনি জাতিকে বিভক্ত করে এই জাতিকে শাসনের নামে শোষণের রাজনীতি করেছেন।

তিনি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের পৌর ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত ছাত্র-জনতার বিপ্লবে সংঘটিত গণহত্যার বিচার ও নৈরাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস শেরপুর জেলা শাখা এ গণসমাবেশের আয়োজন করে।

মামুনুল হক আরও বলেন, কোনো অজুহাতে স্বৈরাচারী হাসিনা ও তার দোসরদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশের মানুষ নেবে না।

তিনি বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে অনেকগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। তার মধ্যে ২০০৯ সালে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৩ সালে মতিঝিল শাপলাচত্বরে ঘুমন্ত হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে।

২০১৩ সালেই আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদ জানালে কোরআনপ্রেমী মানুষদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৪,১৫,১৬ সালে বিরোধী দলীয় অনেক নেতাকর্মীদের গুম-খুন-হত্যা করা হয়েছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালে বাংলাদেশের মাটিতে নরেন্দ্র মোদীকে আনার ন্যাক্কারজনক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো কারণে হেফাজতের বহু নেতাকর্মীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমন করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রায় দেড় হাজার স্বাধীনতাকামী তরুণ-যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন ভারত পাশে থাকলে কেউ তাকে উৎখাত করতে পারবে না। তবে মানুষ যখন ফুঁসে উঠল, জীবন দিল, হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে শেখ হাসিনার পতন ঠিকই ঘটল। দেশের মানুষের রক্ত ঝরিয়ে কোনো স্বৈরাচারী শাসক ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই, হাসিনাও ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই।

মামুনুল হক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী দিনেও দেশের মানুষের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে পদদলিত করে, দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতার মসনদে চিরদিনের মতো থাকার দুরভীসন্ধি কারও পূরণ হবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে। সবাই যার যার ধর্মীয় অধিকার ভোগ করবে। জানমালের নিরাপত্তা ভোগ করবে। যার যার ধর্ম পালনের অধিকার ভোগ করবে। আওয়ামী লীগ সরকারের কূটকৌশল ছিল সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যু। এখন শেখ হাসিনাও নাই, সংখ্যালঘু নির্যাতনও নাই। আমি দেশবাসীকে সচেতন করতে চাই, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

তিনি বলেন, এদেশের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে ইসলাম ও ইসলামী সভ্যতা ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। অন্তবর্তীকালীন সরকার ও তাদের এনজিও উপদেষ্টাদের প্রতি সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্ররা বিপ্লব করেছে। কিন্তু ছাত্রদের এই বিপ্লবকে কিছু চিহ্নিত পশ্চিমাগোষ্ঠী এনজিওর সেবাদাস ছিনতাই করার চেষ্টা করছে। এছাড়া তিনি শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশনকে বাতিল করে নতুন কমিশন গঠনের দাবি জানান।

জেলা খেলাফতে মজলিসের সভাপতি মাওলানা শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী এবং সহ-বাইতুল মাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান। গণসমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, শেরপুর জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাফিজুর রহমান, সাবেক সেক্রেটারি মাওলানা মো. আব্দুল বাতেন, তেরাবাজার জামিয়া সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ, শেরপুর পৌর জামায়াতের আমীর মাওলানা নূরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখ।

গণসমাবেশে বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে হাজারও নেতাকর্মী যোগ দেন।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক