বন্ধু হিসেবে মাহফুজ আলম ও আমাদের সময়গুলো 

মাহফুজ আলম

মতামত

বন্ধু হিসেবে মাহফুজ আলম ও আমাদের সময়গুলো 

মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক আহসান

১। মাহফুজ ও আখতার আমার বন্ধু এবং ক্লাসমেট। থাউজ্যান্ড অফ আওয়ার্স আমরা একসাথে সময় কাটিয়েছি। মাহফুজ আর আমি একটা ব্যাপারে একমত ছিলাম মধ্যবিত্ত না নামলে কখনো ফ্যাসিবাদের পতন হবে না।


মাহফুজ পুরো আন্দোলনের সময়ে মধ্যবিত্তকে কানেক্ট করার চেষ্টা করেছে।
আরেকটা জিনিস সেটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি দলটার তাত্ত্বিক নেতা মাহফুজ। যারা মূলত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে স্বমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছে । আমরা সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু মাহফুজ হাল ছাড়ে নাই।

মাহফুজ এবং আখতার দুইজনই ক্যাম্পাসে পড়ে ছিলো একটা ইউরেকা মোমেন্টের জন্যে। মাহফুজ ছাত্রশক্তির লোকজনকে কানেক্ট করেছে আর আখতার লিড দিয়েছে।
২। সিবগাতুল্লাহ ভাই (ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক) আমাকে একদিন ডাকলেন দেখা করার জন্যে। সিবগাতুল্লাহ ভাইয়ের সাথে আমার অনেক আগের পরিচয়। আমি তো চাংখারপুলে থাকতাম। ভাইও চাংখারপুলেই থাকতেন।
এরপর তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলামের কাছে। এই ঘটনাগুলো গত বছরের ২৮শে অক্টোবরের আগে।
ওখানে আলোচনা হলো যে ক্যাম্পাসগুলোতে কোনভাবে ছাত্রলীগ মুক্ত করা যায় কি না। মানে আন্দোলন জমিয়ে তোলা সম্ভব কি না?
আমি উত্তর দিয়েছিলাম, ভাই ক্যাম্পাসের অবস্থা সেরকম না। এখন আপনারা নামলে হুদাই মাইর খাবেন।
তবে অপেক্ষায় থাকেন, এই বুলগাকপুরে দশ বছরের বেশি কেউ জোর করে শাসন করতে পারে নাই। এইবারও পারবে না।
এরপরে ছাত্রশিবির নিজের কাজটা ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করেছে। আট দফাকে নয় দফাতে রূপান্তরিত করার ব্যাপারে তারা ভুমিকা রেখেছিলো। মানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলন বানিয়েছে ছাত্রশিবির।
তাদের অনেক নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। তারা স্ট্রিট ফাইটেও অংশ নিয়েছেন।
৩। এই অভ্যুত্থানে যদি কোন সংগঠনের একক সবচেয়ে বেশি অবদান থেকে থাকে তাহলে সেইটা ছাত্রদল। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিনের স্ট্রিট ফাইটের অভিজ্ঞতায় এখানে লিড দিয়েছে। তাদের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী শহী দ হয়েছেন। এককভাবে সবচেয়ে বড় কোরবানী ছাত্রদলই দিয়েছে।
ছাত্রদল এইসব পেপারওয়ার্ক করে নাই। তারা রাজপথে রক্ত দিয়ে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রাস্তায় পড়ে ছিলো।
যদি হাসিনা কোনভাবে টিকে থাকতো তাহলে খুব বেশি মানুষের কিছু হতো না। সবচেয়ে বিপদে ঝুকিতে ছিলো এবং থাকতো ছাত্রদল। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র মারা গেলে যেভাবে সবাই আহাউহু করে ছাত্রদল মরলে করে না।
ধরেন, ওয়াসিমের রক্ত কখনো মুগ্ধের রক্তের সমান দামি হতে পারে নাই।
৪। আপামর জনগণ এখানে অনেক বড় ভুমিকা রেখেছে। মানে সকল স্তরের মানুষ যেভাবে নেমে এসেছে তা ছিলো স্বপ্নের মত। মানে কল্পনা করেছিলাম কিন্তু তা বাস্তব হয়ে দাড়াবে তা কোনদিন ভাবি নাই।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, কওমী মাদ্রাসা এবং যে রিকশাওয়ালাটা স্লোগান দিয়েছে তারা প্রত্যেকে এই বিপ্লবের অংশীদার।
এখন গণঅভ্যুত্থান শেষ। সবার উচিত নিজ নিজ কাজে মনোনিবেশ করা। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং এই বিজয় টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের তাইওয়ান, কিউবা কিংবা হিজ্রিয়েলের মত হতে হবে।
কারণ এদের মত আমাদেরও চারিদিকে শত্রু। তাইওয়ান, কিউবা কিংবা হিজ্রিয়েল যেভাবে নিজেদের তৈরি করেছে আমাদেরও ঠিক সেরকম ভাবে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে।

লেখক : শুভ্র আহসান নামে লেখালেখি করেন।  

এই রকম আরও টপিক