রংপুরে কুপোকাত ঢাকা

প্রায় হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি হেসেছে মাশরাফির রংপুর রাইডার্স। 

রংপুরে কুপোকাত ঢাকা

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

মাঠে তখন টানটান উত্তেজনা। জয়-পরাজয়ের সম্ভাবনা ৫০/৫০। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ঢাকা ডায়নামাইটসের দরকার ১০ রান। রংপুর রাইডার্সের প্রয়োজন ২ উইকেট ও মিতব্যয়ী ওভার।

বোলিংয়ে আসেন থিসারা পেরেরা। ক্রিজে তখন ক্যারিবীয় ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ কাইরন পোলার্ড। পেরেরা প্রথম দুই বলে দারুণ ইয়র্কার দিলেন। তৃতীয় বলটি লো ফুলটস।

ডিপ মিড উইকেটে ছক্কা মারলেন পোলার্ড। ৩ বলে দরকার ৪ রান। চতুর্থ বলে ফের ইয়র্কার। কোনো রান হলো না। ২ বলে ৪ চার। সরলদোলকের পেন্ডুলামের মতো দুলছে ম্যাচ।

উত্তেজনায় ভাসছে গোটা স্টেডিয়াম। এমন সমীকরণ যখন ম্যাচের, তখনই পঞ্চম বলে পোলার্ডকে বোল্ড করেন পেরেরা। উত্তেজনার চরমে পৌঁছে যায় ম্যাচ। ১ বলে ঢাকার দরকার বাউন্ডারি। রংপুরের প্রয়োজন মিতব্যয়ী বোলিং। দারুণ এক বল করলেন পেরেরা। বোল্ড আবু হায়দার রনি। অবিশ্বাস্য! দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে ৩ রানের দম বন্ধ করা ম্যাচ জিতে নেয় রংপুর রাইডার্স। ৬ ম্যাচে রংপুরের এটা তৃতীয় জয় এবং ঢাকার অষ্টম ম্যাচে তৃতীয় হার। অবিশ্বাস্য ও চোখ ধাঁধানো জয় নিয়ে চট্টগ্রাম পর্ব খেলতে যাচ্ছে রংপুর রাইডার্স। চ্যাম্পিয়নদের ধরাশায়ী করে উজ্জীবিত রংপুর রাইডার্স। সমর্থকদের প্রত্যাশা সামনের ম্যাচগুলোতেও মাশরাফিরা জয়ে এনে দেবেন এবং নিশ্চিত করবে সুপার ফোর।

দারুণ জয়ে বিপিএল শুরু করেছিল রংপুর রাইডার্স। দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে হঠাৎ ছন্দপতন শুরু শিরোপা প্রত্যাশী দলটির। টানা তিন ম্যাচ হেরে ছিটকে পড়ার রাস্তায় উঠে আসে মাশরাফি বাহিনী। টানা হারের ধাক্কা সামলে চার নম্বর ম্যাচে ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের প্রত্যয়ী ব্যাটিংয়ে সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে জয়ে ফিরে আসে রেসে। সিলেটের বিপক্ষে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে গতকাল রংপুর রাইডার্স খেলতে নামে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে। দুই হেভিওয়েটের লড়াইয়ে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে জয় তুলে নেয় রংপুর রাইডার্স।

টি-২০ ক্রিকেটের দুই ফেরিওয়ালা গেইল ও ম্যাককালাম গতকাল তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামেন। প্রথম ম্যাচে দুজনের ব্যাট হাসেনি। ঝড় উঠেনি। তাই রংপুরেরও জেতা হয়নি। তবে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দুজনেই রান করেছেন। ঝড় তুলেছেন। তাদের ব্যাটিং ঝড়ে সিলেটের বিপক্ষে ৭ রানের লড়াকু জয় পায় রংপুর। ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন গেইল। গতকালও খেলেন হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস। আগের ম্যাচে ২১ বলে ৩৩ রান করা ম্যাককালাম সাজঘরে ফিরেন মাত্র ৬ রানে। গেইল খেলেন ২৮ বলে ৫১ রানের ঝড়ো ইনিংস। ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানবের নান্দনিক ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ৪ ছক্কায়। গেইল রান করলেও দলের অপরাপর ব্যাটসম্যানরা ছিলেন ব্যর্থ। মিথুন ২২, মাশরাফি ও থিসারা পেরেরা ১৫ এবং রবি বোপারা ১২ রান করেন। তাই ১৯.৫ ওভারেই ১৪২ রানে গুটিয়ে যায় রংপুর রাইডার্স। ঢাকার সফল বোলার ছিলেন দলনায়ক সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তিন স্পেলে বোলিং করে ৩.৫ ওভার বোলিং করে ১৬ রানের খরচে তুলে নেন ৫ উইকেট। বিপিএলের চলতি আসরে এটা কোনো বোলারের দ্বিতীয় ৫ উইকেট শিকার। পরশু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পক্ষে পাকিস্তানের হাসান আলি নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।

১৪৩ রানের টার্গেট। ডায়নামাইটস ব্যাটিংয়ে নামার পর ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আঘাত হানেন মাশরাফি। সাজঘরে ফেরত পাঠান সুনিল নারিনকে। এরপর অবশ্য আরেক ক্যারিবীয় এভিন লুইস ঝড়ো গতিতে ব্যাটিং করতে থাকেন। ২৫ বলে ৩ ছক্কায় ২৮ রান করে সোহাগ গাজীর বলে বোল্ড হন। জহুরুল ইসলাম অমিও ভালো ব্যাটিং করেন। ১৯ বলে ২৯ রান করে মাশরাফির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। আফ্রিদি ২১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ১৫ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায়। কিন্তু শেষ দিকে ২ ওভারে জয়ের প্রয়োজনীয় ১৩ রান তুলতে ব্যর্থ হয়ে ঢাকা অলআউট হয় ১৩৯ রানে। নাটকীয় জয়ের পর উল্লাসে মেতে উঠেন রংপুর রাইডার্সের ক্রিকেটাররা।

রাজশাহীকিংস : ১৬৬/৮, ২০ ওভার, খুলনা টাইটানস : ১৬৮/৮, ১৯.২ ওভার

রংপুর রাইডার্স : ১৪২/১০, ২০ ওভার, ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৩৯/১০, ২০ ওভার

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর