একজন আনিসুল হক

ফাইল ছবি

একজন আনিসুল হক

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

না ফেরার দেশে চলে গেলেন (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ১০ টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।

বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী মেয়র আনিসুল হকের জন্ম চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায় ১৯৫২ সালে।

তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।  

১৯৮০ থেকে ১৯৯০'র দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আনিসুল হক তার কর্মজীবন শুরু করেন। উপস্থাপক হিসেবে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেছিলেন তিনি।

১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিটিভিতে সেই অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়। তার উপস্থাপনায় ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ অনুষ্ঠান দুটি জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় বিটিভির ফল প্রকাশের অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন আনিসুল হক। পরে অবশ্য টেলিভিশনের পর্দায় মানুষ তাকে বেশি দেখেছিল ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেই।

টিভি উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আনিসুল হক আশির দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বিকাশের পর্বে এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। কারখানায় চাকরি নিয়ে এক সময় নিজেই ব্যবসা শুরু করেন। সফলতাও অর্জন করেন নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে। মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুলের তৈরি পোশাক ছাড়া বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসন, কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা রয়েছে। ডিজিযাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেড এবং নাগরিক টেলিভিশনের মালিকানাও তার ব্যবসায়ী গ্রুপের।

এরপর ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে বিজিএমইএ'র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই'র সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। news24bd.tv

২০১০ থেকে ২০১২ সাল মেয়াদে সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আনিসুল হক। এছাড়া বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিআইপিপিএ'র সভাপতি ছিলেন তিনি।

রাজনীতিতে কোনো দলে নাম না লেখানো আনিসুল হক ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও ‘স্মার্ট’ নগরী হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। ঢাকার অবস্থা পাল্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেও সে দায়িত্ব শেষ করে যেতে পারলেন না তিনি।

আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। তিনি মোহাম্মদী গুরুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তাদের তিনজন সন্তান রয়েছে, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে তানিশা ফারিয়ামান এবং ওয়ামিক উমাইরা। ছেলে নাভিদুল হক বোস্টনের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক ও দেশ এনার্জি লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে কাজ করছেন। ওয়ামিক উমাইরা স্নাতক শেষ করে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় কাজ করছেন। তানিশা ফারিয়ামান যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনের সিমন্স কলেজ থেকে স্নাতক করেছেন।

বাংলাদেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক আনিসুল হকের ভাই। তার আরেক ভাই ইকবাল হক চিকিৎসক, থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। হেলাল হক নামে তার আরেক ভাই যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন। news24bd.tv

মেয়র হিসেবে যোগদানের পর নগরী সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন, নগরকে অবৈধ দখলমুক্তকরণ, যানজট নিরসনে উদ্যোগসহ বেশকিছু সাহসি পদক্ষেপ নেন আনিসুল হক।  

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক দখলমুক্ত করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ চালকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। পরে ওই সড়ক দখলমুক্ত করে সিটি করপোরেশন।

গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় বিশেষ রঙের রিকশা এবং ‘ঢাকা চাকা’ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সেবা চালু করেন আনিসুল হক। গুলশান এলাকায় অন্যান্য গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় তার সমালোচনাও করেন অনেকে।

বিমানবন্দর সড়কে যানজট কমাতে মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ করার উদ্যোগ নেন আনিসুল হক। এরইমধ্যে মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
এছাড়া ঢাকার খালগুলো উদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন আনিসুল হক। তার নির্দেশে বনানীর ২৭ নম্বরে যুদ্ধাপরাধী মোনায়েম খানের বাড়ি ‘বাগ এ মোনয়েম’র অবৈধ দখলে থাকা অংশ উদ্ধার করে সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে।

বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী এই মানুষটি অকালেই যেন পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিলেন। আগামী শনিবার তার মরদেহ দেশে নিয়ে আসা হবে। ওইদিনই বাদ আসর আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর