বিস্ময়ে ভরা নাটোরের ‘অচিন গাছ’

নাটোরের প্রাচীন ‘অচিন গাছ’

বিস্ময়ে ভরা নাটোরের ‘অচিন গাছ’

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর প্রতিনিধি

সুপ্রাচীন এক জনপদ নাটোর। নাটোর জেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা রকম প্রাচীন নিদর্শন। জেলার সাতটি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে রয়েছে অনেক পুরনো গাছ, কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে অনেক বৃক্ষ, তাদের মধ্যে একটি ‌‘অচিন’ গাছ, গাছের বয়স কত সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। গাছটির সঠিক পরিচয়ও কেউ জানেন না।

এলাকার পুরনো লোকটিও ছোট থেকেই এই গাছটিকে দেখছেন এমন অবস্থায়।

নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুলশী গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই ‘অচিন’ গাছ। সমান্তরাল ভূমি থেকে পাহাড়ের মতো প্রায় ১৫ ফুট উঁচুতে এবং প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতা ও চারপাশে আয়তনে প্রায় ১৫০ স্কায়ার ফুট, এর মূল আবাস, অসাধারণ কারুকাজ সজ্জিত শেকড় বহন করছে সুপ্রাচীন কালের সাক্ষী হয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা ৬০ বছরের বৃদ্ধা আবুল কালাম জানান, গাছটি ঠিক কত বছর আগে জন্মেছে তার দাদাও তাকে বলতে পারেনি।

এলাকার আরেক বাসিন্দা ৬৫ বছরের মো. মোকছেদ আলী জানালেন, গাছটিতে আঙুর ফলের মতো ফল ধরে। বৈশাখ মাসের শেষে এই ফল পাকে, পাঁকলে তা অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। এলাকার ছোট ছোট বাচ্চারা এবং অনেক মানুষ এই ফল খান। এই গাছটি নিয়ে নানা রকম গল্প প্রচলিত রয়েছে। গ্রামবাসী ও আশেপাশের মানুষের বিশ্বাসের একটি বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে এই খিরির গাছ।

মোছা. লাইলী বেগম জানালেন, এই গাছটি বহু বছর আগে হক সাহেব নামের একজন কর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং লোকলস্কর নিয়ে গাছ কাটার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন কিন্তু কাটতে পারেনি। পরে দু- সপ্তাহের মধ্যে সেই ব্যক্তি মারা যায়, তখন থেকে গ্রামবাসী এই গাছটির উপরে একটি বিশ্বাস স্থাপন করে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এই বৃক্ষটি পরিদর্শন করতে আসে এবং অনেক মানুষ এইখানে রোগ ব্যাধির জন্য মানত করে এবং তারা অনেকেই এখানে এসে শিন্নি রান্না করে মানুষের মাঝে বিতরণ করে।

নাটোরের ঐতিহ্য সংস্কৃতির সুবিশাল অংশের কালের সাক্ষী এই গাছ। যদিও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অবহেলা সহ্য করে দাঁড়িয়ে আছে স্থানীয়দের বিশ্বাসী এ গাছ। এলাকাবাসী মনে করেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে। তারপরেও যেন তারা গাছগুলোর দেখভালের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

মোছা. রমিছা বেগম জানান, গ্রামবাসীর অনেক দিনের দাবি, এই গাছটির চারপাশ দিয়ে পার বাঁধাই করে দেওয়ার, স্থানীয় সাংসদকে জানানো হয়েছিল দাবি সম্পর্কে, তিনি গাছটির পার বাঁধাই করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

এই গাছের বীজ পড়ে কোথাও কোনো চারা বা গাছ আজ পর্যন্ত জন্ম হয়নি বা কেউ হতেও দেখেননি।

এ ব্যাপারে সিংড়া উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, এই প্রাচীন বৃক্ষটি সম্পর্কে কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। আমরা এই গাছটিকে অচিন গাছ হিসেবেই জানি। তবে এই গাছটির পাতা এবং ডালসহ বিস্তারিত তথ্য আমরা গবেষণাগারে পাঠিয়েছি; যাতে এই গাছটি সম্পর্কে বিশদে জানতে পারি। গাছটি রক্ষার জন্য এ মর্মে একটি আবেদন করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এই গাছটির চারদিক বাঁধাই করার জন্য মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের অবেদন করা হয়েছে। বর্তমানে আমরা প্রতিনিয়ত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সব সময় নজর রেখেছি।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/নাসিম/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর