হামলায় ‌‌‌‘কুপোকাত’ ইসরাইল

হিজবুল্লাহ'র গোলা

হামলায় ‌‌‌‘কুপোকাত’ ইসরাইল

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ইসরাইলি হামলার প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করলেন। ইসরাইলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনের জবাবে পাল্টা শক্ত আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহ।

অন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায়, গতকাল হিজবুল্লাহ ইসরাইলের একটি সামরিক যানের উপর রকেট হামলা চালায় এবং এতে বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হয়। এরমধ্যে সম্ভবত ইসরাইলের নর্দান ডিভিশনের কমান্ডার নিহত হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হিজবুল্লাহর এ প্রতিশোধমূলক হামলার মাধ্যমে ইসরাইলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে।

প্রথম বার্তা হচ্ছে, মহররম মাসের প্রথম দিনে এ হামলা চালানো হয়েছে। মহররমের প্রথম দিনে হামলার এ ঘটনা থেকে লেবাননের জনগণের মধ্যে আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা ও আশুরার বিপ্লবী চেতনার বিষয়টি ফুটে ওঠে।

দ্বিতীয় বার্তা হচ্ছে, হিজবুল্লাহ মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহ পাল্টা হামলার প্রতিশ্রুতি দেয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ইসরাইলে শক্ত হামলা চালানো হল।

এর ফলে, একদিকে ইসরাইলিরা টানা এক সপ্তাহ ধরে চরম দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটিয়েছে অন্যদিকে, তারা এটাও লক্ষ্য করেছে হিজবুল্লাহ প্রতিশ্রুতি মোতাবেক স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পাল্টা হামলা চালিয়েছে।

হিজবুল্লাহর প্রতিশোধমূলক হামলার তৃতীয় বার্তা হচ্ছে, হিজবুল্লাহ সংগঠন ইসরাইলি নেতৃবৃন্দ ও তাদের সমর্থকদের এটা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, কোনো আগ্রাসনই বিনা জবাবে ছেড়ে দেয়া হবে না এবং হামলা করে পালিয়ে যাওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে। লেবাননের পার্লামেন্ট সদস্য ও প্রতিরোধকামী গ্রুপের সদস্য হাসান ফাজলুল্লাহ বলেছেন, "শত্রুরা এটা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, লেবাননে হামলা চালালে বিনা জবাবে কেউ পার পাবে না। " 

চতুর্থ বার্তা হচ্ছে, ইসরাইলি সেনারা নিশ্চিত ছিল যে হিজবুল্লাহ পাল্টা আঘাত হানবে এবং এ কারণে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় ছিল। কিন্তু তারপরও হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরাইলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সেনা কমান্ডার নিহত হওয়াসহ আরো সেনা হতাহত হওয়ার ঘটনায় ইসরাইলি জনগণের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভীতসন্ত্রস্ত ইসরাইলিরা নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছে।

পঞ্চম বার্তা হচ্ছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, পশ্চিম এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে একমাত্র হিজবুল্লাহ ও অন্য প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলো।

এ ব্যাপারে হিজবুল্লাহর উপমহাসচিব শেইখ নাঈম কাসেম বলেছেন, প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে এবং হিজবুল্লাহ এ অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য নির্ধারণের ক্ষমতা রাখে।

ষষ্ঠ বার্তা হচ্ছে, হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা এমন সময় ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে যখন আর মাত্র দুই সপ্তাহ পর ইসরাইলে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নির্বাচনী প্রচারণায় জনগণকে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে একমাত্র তিনিই ইসরাইলিদের জন্য নিরাপত্তা দিতে পারেন। কিন্তু হিজবুল্লাহর হামলায় প্রমাণিত হয়েছে নেতানিয়াহু নিজেই ইসরাইলিদের জন্য নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কের কারণ। গতকাল হিজবুল্লাহর হামলার পর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের ব্যাপক মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে যার প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন নির্বাচনে।


সপ্তম বার্তা হচ্ছে, ইসরাইলি সেনারা যখন আহতদেরকে সরিয়ে নিচ্ছিল তখন তারা হিজবুল্লাহর গোলা ও বন্দুকের আওতার মধ্যেই ছিল। কিন্তু তারপরও আহদের ওপর হামলা না চালিয়ে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় হিজবুল্লাহ যুদ্ধ, রক্তপাত ও হত্যাকে সমর্থন করে না বরং তারা যে হামলা চালিয়ে তা সম্পূর্ণ আত্মরক্ষার্থে।

অষ্টম বার্তা হচ্ছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর হামলার প্রতি লেবাননের জনগণ ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর সমর্থন। এ সমর্থন থেকে বোঝা যায় এ অঞ্চলের আরব জনগণ দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক চায় না বরং তারা ইসরাইলকে ঘৃণা করে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর