উপস্থাপিকাকে তুলে নিয়ে বিয়ে, সেই ডিআইজিকে প্রত্যাহার

ফাইল ছবি

উপস্থাপিকাকে তুলে নিয়ে বিয়ে, সেই ডিআইজিকে প্রত্যাহার

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

ঘরে স্ত্রী রেখে জোর করে আরেক নারীকে বিয়ের অভিযোগ ওঠার পর আলোচনায় থাকা ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমানকে ক্লোজ করা হয়েছে।  আজ মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জারি করা আদেশে ডিআইজি মিজানকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়।  এদিকে অনেক খোঁজ করেও সন্ধান মিলছে না তার। পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানেও হাজির হননি তিনি।

ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নানারকম অপরাধ-অপকর্মে জড়িয়ে থাকার অভিযোগ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু চলছে।  টিভি উপস্থাপিকা এক তরুণীকে অপহরণ করে নিজের সরকারি ফ্ল্যাটে আটকে জোরপূর্বক বিয়ের খবর প্রকাশ হওয়ার পর তা আরও বেগবান হয়।  জানা যায়, ওই উপস্থাপিকার ওপর ধারাবাহিক নির্যাতন চালিয়ে জেল খাটিয়ে মামলায়ও ঝুলিয়েছেন। ঘরে একাধিক স্ত্রী বহাল থাকা সত্ত্বেও একের পর এক পরকীয়ায় জড়িয়ে ডিআইজি মিজান অনেক সম্ভ্রান্ত নারীর সর্বনাশ ঘটিয়েছেন মর্মে নানা অভিযোগ উঠেছে।

ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী তরুণীর নাম মরিয়ম আক্তার ইকো। জানা যায়, তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের উপস্থাপিকা। ব্যাংকের উচ্চ পদে চাকরির চেষ্টাকালে জনৈক মহিলার মাধ্যমে ডিআইজি মিজানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রথম পরিচয় হয় মরিয়ম আক্তার ইকোর। তবে কিছুদিন পর অশোভন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা এবং রহস্যময় আচরণে সন্দেহ হলে পুলিশ কর্মকর্তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেন মিজান।

ভুক্তভোগী মরিয়ম আক্তার ইকো অভিযোগ করে বলেন, গত ১৪ জুলাই ক্ষমা চাওয়ার নাম করে কৌশলে পান্থপথের বাসা থেকে বের করে আনা হয় তাকে। নিজের গাড়িতে ৩০০ ফুট সড়কের পাশে পূর্বাচলে নিয়ে মারধর এবং নির্যাতন করা হয়। পরে ওড়না দিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে গাড়িচালক গিয়াস এবং দেহরক্ষী জাহাঙ্গীরের সহায়তায় বেইলি রোডের সরকারি কোয়ার্টারে নিয়ে আসা হয় মরিয়মকে। সেখানে তিনজন মিলে দফায় দফায় নির্যাতন চালিয়ে তাকে অজ্ঞান করে ফেলা হয়। জানা যায়, নির্যাতনের সময় আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন মরিয়ম। নিজের কাপড়ে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছিলেন।

এ অবস্থায় মরিয়মের মাকে ডেকে এনে অস্ত্রের মুখে ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। উকিল বাবা হিসেবে ছিলেন গাড়িচালক গিয়াস এবং সাক্ষী করা হয় দেহরক্ষী জাহাঙ্গীরকে। পরে সেখান থেকে লালমাটিয়ায় ভাড়া বাসায় রেখে গোপনে ৪ মাস সংসার করেন মিজান।

অনুসন্ধান করতে গিয়ে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের জনৈক সংবাদ পাঠিকার সংযোগও পাওয়া যায়, যার সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ককে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে পড়ে।

মরিয়মের অভিযোগ, একই সময়ে বিয়ে না করার মিথ্যা কথা বলে আরও কয়েকটি পরকীয়ায় জড়িয়ে ছিলেন মিজান। ফেসবুকে ছবি আপলোড করায় অন্য প্রেমিকারা সটকে যাওয়াতেই মিজান বেশি খেপে ওঠেন।

এ ব্যাপারে মরিয়ম বলেন, ‘আমি ডিআইজি মিজানের বৈধ স্ত্রী। সে আমার সঙ্গে এত দিন সংসার করল। কিন্তু স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ফেসবুকে ছবি আপলোড করাতেই কেন যে মিজান চরম খেপে উঠল তাও বুঝতে পারছি না। সেই ক্ষোভেই বেইলি রোডের বাসায় ভাঙচুরের মামলায় ১২ ডিসেম্বর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে যেতে হয় আমাকে। যার চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে। এখন শুনছি, আমার বিরুদ্ধে ভুয়া কাবিন করার অভিযোগ এনে আরও একটি মামলা করা হয়েছে।

মরিয়ম আক্তার ইকো বলেন, স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে প্রতারণা করেছেন মিজান এবং সরকারি কর্মকর্তা হয়েও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জোরপূর্বক আমাকে বিয়ে করেছেন।

মরিয়ম প্রশ্ন তুলেন, কেনইবা সে আমাকে জোর করে বিয়ে করল, কেনইবা ৪ মাস সংসার করল আর কেনইবা আমাকে জেলে পাঠাল- এসবের কিছুই বুঝতে পারছি না।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে মিজান বলেন, তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ‘পুরোপুরি মিথ্যা’। ‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার ভালো বোঝাপড়া। আমরা পারিবারিক জীবনেও সুখী। আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য স্বামী বানিয়ে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে। ’ অভিযোগকারী নারীকে ‘প্রতারক’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ওই নারী ২০১৫ সালে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছিলেন। সেই সূত্রে তার সঙ্গে পরিচয়।

ওই নারীর বিরুদ্ধে রমনা থানায় ভাঙচুরের মামলার বিষয়ে মিজান বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই এই নারী বেইলি রোডে তার ভাইয়ের বাসায় জোর করে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। তখন থানায় একটি মামলা হয়। অভিযোগপত্র দেওয়ার পর এটি এখন বিচারাধীন।  ওই নারী কেন ওই বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি পুলিশ কর্মকর্তা মিজান।

তিনি দাবি করেন, ওই নারী যেসব অভিযোগ করেছিলেন, তা ইতিমধ্যে প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন।  

মিজানের এই বক্তব্য নিশ্চিত হতে মরিয়ম আক্তার ইকোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত কোনো অভিযোগ আমি তুলে নিইনি। আমাকে অপহরণপূর্বক তার সরকারি বাসায় আটকে রেখে বিয়ে করা, নির্যাতন চালানো, একের পর এক পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়াসহ ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত সব অভিযোগই শতভাগ সত্য।

সম্পর্কিত খবর