নিজের মেয়ের বাল্যবিয়ে দিলেন কাজী!

কাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র ও তার মেয়ের রেজিস্ট্রেশন কার্ড

নিজের মেয়ের বাল্যবিয়ে দিলেন কাজী!

নিউজ ২৪ ডেস্ক

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ঢোলারহাট ইউনিয়নের কাজী আমজাদ হোসেন অবশেষে নিজের নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আইন অমান্য করে নিজের মেয়েকে বাল্যবিবাহ দেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ইতোমধ্যে কাজী আমজাদ আলী বিরুদ্ধে বাল্যবিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

অভিযোগে জানা গেছে, সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের কাজী আমজাদ হোসেন দীর্ঘদিন যাবৎ আইন ভঙ্গ করে এলাকায় বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করে আসছেন নিজের প্রভাব দেখিয়ে।

পূর্বে কাজী আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা রেজিস্ট্রারের বরাবরে বাল্যবিয়ে বিষয়ে অভিযোগ করলেও কোন লাভ হয়নি।  

সম্প্রতি কাজী আমজাদ হোসেন নিজের নাবালিকা মেয়েকে (মোছা. আরজিনা) একই উপজেলার চিলারং পাহাড়ভাঙ্গা এলাকার আব্দুল কাদেরে ছেলে বিজিবি সদস্য রবিউল ইসলামের সাথে বাল্যবিয়ে দেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।  

কাজী আমজাদ হোসেনের মেয়ে (মোছা. আরজিনা) মধুপুর ঈদগাহ দাখিল মাদরাসা থেকে জেডিসি (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা) উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার জেডিসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড অনুযায়ী বর্তমান বয়স ১৫ বছর ৩ মাস ১১ দিন।

মধুপুর ঈদগাহ দাখিল মাদরাসা সুপার রুহুল আমিন জানান, আরজিনা মাদরাসার দাখিল শ্রেণির ছাত্রী। সম্প্রতি তার বাবা কাজী আমজাদ হোসেন আরজিনাকে বিয়ে দিয়েছেন বলে আমরা খবর পেয়েছি।

ঢোলার হাট এলাকার শরিফুল ইসলাম জানান, কাজী আমজাদ হোসেন ইতোমধ্যে এলাকায় প্রায় ২০টির বেশি বাল্য বিবাহ দিয়েছেন। সর্বশেষ নিজের নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে বাল্য বিবাহ প্রদানের অভিযোগে কাজীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাজী আমজাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে নিজের মেয়ের বিয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, কাজীদের বিরুদ্ধে বাল্য বিবাহ প্রদানের অভিযোগ উঠতেই পারে। ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধনের উপর ভিত্তি করে বয়স দেখেই যে কারো বিবাহ সম্পন্ন করা হয়। সেখানে বয়স সঠিক থাকলে বিবাহ দিতে আইনগত বাধা থাকার কথা নয়।

ঠাকুরগাঁও জেলা কাজী রেজিস্ট্রার রফিকুল ইসলাম জানান, বিবাহ নিকাহ আইনে বাল্যবিবাহ ও তাতে সহযোগিতা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। যদি কাজী আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহ দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার কাজী রেজিস্ট্রার কার্ড বাতিল করা হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়ালের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রশাসন থেকে বাল্যবিবাহ বন্ধে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। কেউ যদি নিজ ইচ্ছায় ইউনিয়ন পরিষদে কোন মেয়ে বা ছেলের জন্ম নিবন্ধনপত্রে বয়সসীমা বৃদ্ধি করে বিবাহ প্রদান করেন, সেটিও আইনত অপরাধ। কাজী আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে নিজ মেয়ে ও একাধিক বাল্যবিবাহ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।

সম্পর্কিত খবর