যে ভাষায় কথা বলেন মাত্র ৩ জন

সংগৃহীত ছবি

যে ভাষায় কথা বলেন মাত্র ৩ জন

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে বাঙালি। ছিনিয়ে এনেছে মায়ের ভাষা। এর ঠিক উল্টো দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ১৪ দিনে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একটি করে ভাষা। ঠিক তেমনই একটি মৃতপ্রায় ভাষার নাম 'বাদেশি'।

এ ভাষায় কথা বলেন এমন মাত্র তিনজন বর্তমানে জীবিত রয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে তাদের মৃত্যুর পর এ ভাষা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

উত্তর পাকিস্তানের দুর্গম, পাহাড়ি অঞ্চলের একটি গোষ্ঠী এ ভাষায় কথা বলে। এ ভাষার কথা বলেন এমন একজন ব্যক্তি হলেন সাইদ গুল।

তিনি তার ভাষায় বলেন, অমাদের গ্রাম খুবই সুন্দর।
 শুরুতে ৯ থেকে ১০ টি পরিবার এ ভাষায় কথা বলতো। কিন্তু অন্যান্য এলাকা থেকে আমাদের অঞ্চলে ভিন্ন ভাষী লোক আসার করণে এ ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৯৬ শতাংশ মানুষ বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ১১টি ভাষাতে কথা বলেন। আবার এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে কয়েকশ ভাষা প্রচলিত। উদাহরণ হিসেবে পাপুয়া নিউগিনি, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার কথা বলা যায়। পাপুয়া নিউগিনিতে ৮৫০টিরও বেশি ভাষা রয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার রয়েছে ৬৭০টি ভাষা। জাতিসংঘের হিসাবে বিশ্বে এখন আছে ৬ হাজার ভাষা। কিন্তু প্রতি ১৪ দিনে হারিয়ে যাচ্ছে এদের মধ্যে একটি করে ভাষা।  

এরকম হারিয়ে যেতে বসা ভাষার তালিকায় থাকা আরেকটি ভাষা হলো এনজেরেপ। একসময় আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে প্রচলিত ছিল এই ভাষা। এখন এই ভাষায় কথা বলার মানুষ টিকে আছে মাত্র চার জন। নাইজেরিয়ার সেই চারজনের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়স যার, তিনি ষাট বসন্ত পার করেছেন। এই চারজনের মৃত্যুতে যে এনজেরেপ ভাষাটিও মৃত্যুবরণ করবে তা বলাই যায়।

বিলুপ্তপ্রায় আরেকটি ভাষার নাম 'লিকি'। ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চলে একসময় গির্জার পাদ্রীরাও এই ভাষায় কথা বলতেন। কিন্তু, এখন সেখানে জনা দশেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা লিকি ভাষার কিছু শব্দ জানেন। খুব শীঘ্রই এ ভাষাটিও পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন ভাষাবিদরা।

আরেকটি ভাষা 'পাকান্তি'। অস্ট্রেলিয়ার ডার্লিং নদীর আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত একসময়ের এই ভাষায় কথা বলেন এখন মাত্র ২২ জন। তবে অস্ট্রেলিয়ার সরকার ভাষাটিকে ফের বাঁচিয়ে তুলতে চেষ্টা করছে। এজন্য কিছু কিছু স্কুলে ফের পাকান্তি শেখানো শুরু করা হয়েছে।

বাঙালির ভাষার অধিকার আদায়ের দিন একুশে ফেব্রুয়ারিকে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ফলে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালির আত্মত্যাগের দিনটি এখন এখন বিশ্বের সব ভাষাভাষীর অধিকার রক্ষার দিন। সারা বিশ্বের মানুষ এখন পালন করে আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস। সেখানে প্রতি ১৪ দিনে হারিয়ে যাচ্ছে একটি ভাষা। বিশ্বজুড়ে মরতে বসা এই ভাষাগুলো বাঁচিয়ে তুলতে কেউ এগিয়ে আসবে কিনা- সেটাই এখন দেখার বিষয়।  

সম্পর্কিত খবর