সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা সমাবেশ, ফাঁকা গুলি বর্ষণ

বিজিপি'র গুলির পর নোম্যানসল্যান্ডে আতঙ্কে রোহিঙ্গারা

সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা সমাবেশ, ফাঁকা গুলি বর্ষণ

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার পাশে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সেনা সমাবেশ করেছে মিয়ানমার। সেই সঙ্গে সীমান্ত ঘেঁষে মোতায়েন করা হয়েছে ভারী অস্ত্র। এছাড়াও শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরে যেতে হুমকি-ধমকির পর ফাঁকা গুলিবর্ষণে ওই এলাকায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

এই তৎপরতাকে শূন্যরেখায় ক্যাম্প করে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।

আতঙ্কিত ওই রোহিঙ্গারা বলছেন, তারা এখনও না মিয়ানমারে না বাংলাদেশে ঢুকতে পারছে।

সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বিজিবি। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপিকে পতাকা বৈঠকের বার্তা পাঠিয়ে তারা। ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর কারণ হিসেবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকানোর কথা বলেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তাদের এই বক্তব্য বাস্তব অবস্থার বিপরীত বলে মন্তব্য করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

বি‌জি‌বি ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে তমব্রু কোনাপাড়া সীমা‌ন্তে গু‌লি ছুড়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বা‌হিনী (বিজিপি)। সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া প্রায় সাত হাজার রো‌হিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখাতেই বি‌জি‌পি এই ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনার পর সেখানে রো‌হিঙ্গাসহ সীমান্ত অঞ্চলের বা‌সিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে বি‌জি‌বি সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

বিজিবি জানায়, মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মাইকিং করে সরে যেতে বলছে। এতে সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ ঘটনা জানার পর বিজিবির পক্ষ থেকেও সতর্ক অবস্থান নেয়া হয়েছে। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও সাড়া দেয়নি মিয়ানমার।

এদিকে, বৃহস্পতিবার তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার পাশে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সেনা সমাবেশ করেছে মিয়ানমার। সেইসঙ্গে সীমান্ত ঘেঁষে মোতায়েন করা হয়েছে ভারী অস্ত্র। সকাল থেকে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও লরিতে করে মহাড়া দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা। তারা মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের শূন্যরেখা থেকে চলে যেতে বলেছে।

এ ঘটনার পর বিকেলে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ কে তলব করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব এম খোরশেদ আলম। এসময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাকে একটি আনুষ্ঠানিকপত্র (নোট ভারবাল) দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। ২০১৭র' ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দমনপীড়ন শুরু করে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। ফলে অন্তত ছয় হাজার মুসলমান নিহত ও হাজার হাজার মানুষ আহত হন। এ সময়ের মধ্যে অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।

সম্পর্কিত খবর