সীমান্তে গুলির কথা অস্বীকার বিজিপির
বিজিবি-বিজিপি বৈঠক

সীমান্তে গুলির কথা অস্বীকার বিজিপির

রিশাদ হাসান ও ইসমত আরা ইসু

বাংলাদেশের দিকে গুলি ছোঁড়ার কথা অস্বীকার করেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি)। সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) মধ্যে পতাকা বৈঠকে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে। বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের জিরো পয়েন্টে শুক্রবার বিকেল সোয়া তিনটার দিকে বৈঠক শুরু হয়। দেড়ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে ৩৪ ব্যাটেলিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান এ কথা জানান। গুলির বিষয় অস্বীকার করার পাশাপাশি নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দেশটি ফের আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে তুম্ব্রু সীমান্তে দেখা গেছে ভিন্ন ঘটনা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর যখন গুলি ছুড়ছিল মিয়ানমার সেনারা তখন ভয়ে পালানোর চেষ্টা করা একজনের নাম নূরজাহান বেগম।

তার হাতে থাকা তেলের বোতল ও সুটকেসেও গুলি লাগে বলে জানান এ নারী।

নূরজাহান বলেন, যখন ওরা গুলি করছিল, তখন আমি প্রাণ ভয়ে পালানোর জন্য দৌড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা গুলি এসে আমার হাতে থাকা তেলের বোতলে আর আরেকটা গুলি সুটকেসে লাগে।

শুধু তাই নয়, মিয়ানমার সেনাদের কয়েকজন কাটাতারের বেড়া পেরিয়ে নোম্যান্স ল্যান্ডেও প্রবেশের চেষ্টা করে বলে জানায় নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা। তারা বলেন, সন্ধ্যার কিছুপর মই দিয়ে ওরা (মিয়ানমার সেনা) কাঁটাতারের বেড়া পেরুবার চেষ্টা করে। আমরা চিৎকার করতে শুরু করলে ওরা বেড়া টপকে পালিয়ে যায় আর গুলি ছোঁড়ে। সংখ্যায় তারা পাঁচ-ছয়জন ছিল।

এদিকে বৈঠকে মিয়ানমার সীমান্তে গুলি ছোঁড়ার কারণ হিসেবে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে তুলে ধরেছে। বাংলাদেশের দিকে তারা গুলি ছোঁড়েনি বলে জানায়।

লে. কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, সীমান্তে সেনা সমাবেশের পরিস্থিতি হলে আগে ভাগে জানাতেও বলে দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এখনো আতঙ্ক রয়েছে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাংলাদেশিদের মাঝে।

শুক্রবার সকালে লে.কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল সকালে মিয়ানমার সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করায় আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিলাম। তারা আজ বেলা ৩টায় বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুম পয়েন্টে পতাকা বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে। সীমান্তে বিজিবিকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্তের ওপারে দেড়শ' গজের মধ্যে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির  প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ সময় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়, এ ধরনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি সীমান্তে বিভ্রান্তির পাশাপাশি উত্তেজনা ছড়াবে। তাই ওই এলাকা থেকে সামরিক সরঞ্জামাদি সরিয়ে নিতে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়। এ ব্যাপারে তার কাছে একটি কূটনৈতিক পত্র দেওয়া হয় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের হাতে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিজিবি সেখানে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। দেশের ভেতরে এসে কেউ বিশৃঙ্খলা করবে, এটা অসম্ভব। বাংলাদেশ  রক্ষা করার জন্য যা যা করার দরকার সবকিছু করবে সরকার। বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামে বিজিবির ৯১তম ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দমনপীড়ন শুরু করে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। অন্তত ছয় হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়। আহত হয় হাজার হাজার মানুষ। প্রাণভয়ে অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।

সম্প্রতি দুই দেশ কয়েক দফা বৈঠকে বসার পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। ঠিক যখন এই ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা তখনই সীমান্তে ফের সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে ও গুলি ছুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করলো শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দেশ।

সম্পর্কিত খবর