ফরিদপুরে স্ত্রীর পরকীয়ার বলি অটোচালক স্বামী

বাদশা শেখ

ফরিদপুরে স্ত্রীর পরকীয়ার বলি অটোচালক স্বামী

নিউজ ২৪ ডেস্ক

ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদি রাজাপুর গ্রামে স্ত্রীর পরকীয়ার বলি হয়েছে বাদশা শেখ (৩৫) নামের এক ব্যক্তি। তাকে এসিড খাইয়ে ও গায়ে পেট্রল ঢেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাদশা মারা যায়।

লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় চারজনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী একটি মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে।

বাদশার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয়রা। শুক্রবার এলাকাবাসী দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।

এলাকাবাসী ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্ত্রী কাকলী বেগমের সঙ্গে স্থানীয় এনজিও কর্মী মো. বাদশার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

ঘটনাটি জানতে পেরে কাকলীর স্বামী অটোচালক বাদশা শেখ তাতে বাধা দেয়। এ নিয়ে তিনমাস আগে এলাকায় সালিশ-বৈঠকও হয়।  স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ কাকলী বেগমের বাবার বাড়িতে সে সালিশে মো. বাদশা কাকলী বেগমের সাথে কোনো সর্ম্পক রাখবে না মর্মে মুচলেকা দেয়। কিন্তু কয়েকদিন আগে ফের বাদশা শেখের স্ত্রীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ে মো. বাদশা। এ নিয়ে বাদশা শেখের সঙ্গে মো. বাদশার বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে কাকলির স্বামীকে দেখে নেবার হুমকি দেয় মো. বাদশা।  

গত বুধবার রাতে বাদশা শেখ বাড়িতে একা ছিলেন। এসময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক এসিড খাওয়ায় বাদশা শেখকে। পরে তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে বাইরে থেকে ঘরের শিকল আটকিয়ে পালিয়ে যায়। পরে বাদশা শেখের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। দ্রুত তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আশংকাজনক অবস্থায় পরে বাদশা শেখকে ঢাকায় পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে  মারা যায় বাদশা শেখ।  

বাদশা শেখকে নারকীয়ভাবে এসিড খাইয়ে এবং পুড়িয়ে মারার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয়রা।

নিহত বাদশা শেখের মামা রাজ্জাক মোল্যা জানান, রাত তিনটার দিকে বাদশার চিৎকারে তাদের ঘুম ভাঙে। এসময় তিনি ঘর থেকে বাইরে বের হতে গিয়ে দেখেন ঘরের বাইরে থেকে শিকল আটকানো। পরে দরজা ভেঙে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বাইরে বেরিয়ে দেখেন বাদশার সারা গায়ে আগুন। পরে আগুন নেভানো হয়। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি।

তিনি আরও দাবি করেন, স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে বাদশাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ঘটনার রাতে বাদশার স্ত্রী তার বাবার অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ছিল। আর ছেলে-মেয়ে ছিল নানার বাড়িতে। এসময় বাদশা ঘরে একাই ছিল। মারা যাবার আগে হাসপাতালে বাদশা কীভাবে তাকে এসিড খাওয়ানো হয়েছে এবং কারা আগুন দিয়েছে তা আমাকে বলেছে। বিষয়টি আমি পুলিশকে বলেছি।

মাচ্চর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. কাউসার বলেন, বাদশাকে যেভাবে পুড়িয়ে মারা হয়েছে তা লোমহর্ষক। স্ত্রীর পরকীয়ার কারণেই বাদশাকে জীবন দিতে হয়েছে। বাদশার স্ত্রী কাকলী বেগম লেবাননে থাকতো। গত চার মাস আগে সে বিদেশ থেকে দেশে আসে। দেশে আসার পরপরই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। গত তিনমাস আগে বাদশার স্ত্রীকে নিয়ে আমরা সালিশ বৈঠক করেছি। সেসময় স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিল। এ নারকীয় হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার চাই আমি। স্থানীয় অনেকেই বলেছেন, বাদশা শেখ একজন নিরীহ প্রকৃতির ছেলে ছিল। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে হারিয়ে সে মামা বাড়িতে বড় হয়। গত এক বছর আগে তার মা মারা যায়। স্ত্রী, দুই ছেলে-মেয়ে লিমা (১২) ও লিয়ন (৫) কে নিয়ে বসবাস করতো।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহিনুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের আটকের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।  

সম্পর্কিত খবর