মাথায় ঘিলু না থাকলে পাইলট হওয়া যায় না

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি।

মাথায় ঘিলু না থাকলে পাইলট হওয়া যায় না

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি

সিভিল পেশাগুলোর মধ্যে পাইলট অর্থাৎ বৈমানিক একমাত্র পেশা যেটাতে লিঙ্গ বিবেচনায় ভাগ করা হয় না। যার কারণে এই পেশার ইউনিফর্ম পুরুষ/মহিলা সবার জন্য একই, তার জন্য টাই -টি ও বাদ যায় না। কারণ লিঙ্গ নয়; দক্ষতা , বুদ্ধিমত্তা ও সাহস এই পেশার মূল চাবিকাঠি। সব পাইলটই ট্রেনিং প্রসেস পাশ করেই পাইলট হয়।

নারীদের জন্য কিন্তু আলাদা ট্রেনিং নেই যে নারী পাইলটকে আলাদা করে ভাগ করে দেখতে হবে। লাখ লাখ টাকা থাকলেও কেউ পাইলট হয়ে যেতে পারে না, যদি তার মধ্যে সাহস আর মাথার মধ্যে ঘিলু না থাকে।  

যান না, আপনারা যারা নিজেদের মহাপুরুষ মনে করেন, ৫০/১০০ তলা বাদ দিলাম, ২০ তলা ছাদ (২০০ ফুট) থেকে নীচে তাকান আর নীচে তাকিয়ে হাঁটুন। কিন্তু একজন শিক্ষানবিশ অর্থাৎ ট্রেইনি পাইলটকে ২০/৩০ ঘণ্টা ফ্লাই করার পর পরই , stall recovery , emergency landing, force landing , Sidesliping , spinning recovery, Cross wind landing, crab landing (টার্মসগুলো না বুঝে থাকলে গুগল সার্চ করুন, এই উছিলায় কিছু শিখাও হবে/ জানাও হবে) ইত্যাদি আরও অনেক ট্রেনিং এর মাধ্যমে একজন পাইলট তৈরি হয়।

চার হাজার ফুট উপরে উঠে যখন ফ্লাইট প্রশিক্ষক বিমানের ইঞ্জিন হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়ে বলে, ''নাও এখন নিরাপদে ফ্লাই করে ল্যান্ড কর। '' তখন কিন্তু দেখে না যে ট্রেইনি পাইলট ছেলে না মেয়ে । সব কিছু শিখার পর বা ট্রেইনড হওয়ার পর যখন অফিসিয়ালি লাইসেন্স নেওয়ার জন্য ফ্লাইট টেস্টে সেই ট্রেইনি পাইলট যায়, পরীক্ষকও ওই একই কাজ করেন, তখনো তিনি দেখেন না টেস্টের পাইলটটি নারী নাকি পুরুষ। একজন পরীক্ষক আসেন বাইরে থেকে অর্থাৎ স্থানীয় উড্ডয়ন কর্তৃপক্ষ (Local Aviation Authority) থেকে, ফ্লাইট স্কুলের তিনি কেউ নন।

শখ থেকে কেউ বৈমানিক পেশা বেঁছে নেয় না বা চাইলেও পারে না, স্বপ্নবাজ সাহসীরাই বৈমানিক হয় এবং হতে পারে। আমি নিজ চোখে বহু পুরুষ মানুষকে দেখেছি কয়েক ঘণ্টা প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ভয়ে ছেড়ে চলে যেতে। সুতরাং, এই পেশায় নারী/পুরুষ এর বিভক্তি আনার চেষ্টা করবেন না। এটি কোন কুস্তি বা শারীরিক শক্তি দেখানোর পেশা নয় , বুদ্ধিমত্তার পেশা, দক্ষতার পেশা, সাহসী পেশা।

লেখক: বৈমানিক ও সাবেক মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল (প্রিয়তির ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

সম্পর্কিত খবর