দিহান নামের যেই ছেলেটা ধর্ষণ করে একটা জলজ্যান্ত মেয়ে'কে মেরে ফেলেছে; আমি এই ছেলেটার ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে আজ ঘণ্টা দুয়েক সময় পর্যবেক্ষণ করেছি।
ইন্টার্ভিউ এবং অবজারবেশন আমার কাজের মাঝে'ই পরে। এই দুই পদ্ধতি ব্যাবহার করে'ই আমি আমার যাবতীয় গবেষণার তথ্য কিংবা ডাটা সংগ্রহ করেছি সব সময়। তবে, এই ছেলের প্রোফাইলে মাত্র দুই ঘণ্টা কাটিয়ে তো আর সায়েন্টিফিক অবজারবেশন করা সম্ভব নয়।
অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম- ২০১৪ সালে সে দিব্যি গাড়ি চালিয়ে বেড়িয়েছে। ফেসবুকে সেই ছবি আপলোডও করেছে। এই ছেলের বর্তমান বয়েস যদি ২২ হয়; তাহলে ২০১৫ সালে তো তাঁর বয়েস ছিল ১৫ বছর।
১৫ বছর বয়েসে কি গাড়ি চালনোর লাইসেন্স পাওয়া যায়?
তাঁর বাবা-মা কি জানত না; সে দিব্যি গাড়ি চালিয়ে বেড়াচ্ছে?
অতি অবশ্য'ই জানত।
মাঝে মাঝে গাড়ি'র ছবি আপলোড দিয়েছে। নানান রঙের গাড়ির ছবি আপলোড দিয়েছে।
কখনো মটর বাইকের ছবি আপলোড দিয়েছে; সেই সঙ্গে নিজের ছবি।
এই সব ছবি সে আপলোড দিয়ে নানান সব নীতিকথাও ক্যাপশনে লিখেছে।
এই ছেলে বিয়ের আগে যৌনতা'কে শুধু অপছন্দ'ই করতো না; রীতিমত ঘৃণা করতো!
এই বিষয় সে ফেসবুকেও লিখে জানিয়েছে।
ধর্ষণ'কে সে রীতিমত ঘৃণা করতো। ধর্ষকদের বিচারও সে দাবী করেছে।
এছাড়া জাগতিক সকল কিছুতে সে নিজেকে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ'র কাছে সমর্পণ করেছে সব সময়।
তাঁর ফেসবুক পোস্ট দেখে মনে হলো- সে ফেসবুকে নিয়মিত ইবাদত করতো।
খুবই ধার্মিক; যে কিনা বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক'কে ঘৃণা করে ইত্যাদি।
এই সব দেখছিলাম আর ভাবছিলাম- আমার কাছে বিষয় গুলো খুব পরিচিত মনে হচ্ছে।
কারন আমি নিজের জীবনে এমন দুই-একজন মানুষ'কে দেখেছি। এই শহরেই দেখেছি।
এদের কথা শুনলে মনে হবে- বিরাট ধার্মিক। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তো দূরের কথা; ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া কিংবা ব্যাংকে টাকা জমা রাখা'কেও এরা হারাম মনে করে।
এরা রাস্তা দিয়ে বের হলে ভাই'রা মিলে নানান সব গাড়ি পর্যালোচনা করে। কোন গাড়ি কোন ব্র্যান্ডের ইত্যাদি।
নানান সময় নানান সব ধর্মীয় বই কিংবা নীতিবাক্য সেয়ার করে।
দেখে মনে হবে- আহা, কতো'ই না ভালো মানুষ। কতো নীতিবান!
বলছি না- এইসব খারাপ কিছু। এইসব অতি অবশ্য'ই ভালো।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- এরা কি আদৌ বাস্তবে এমন?
বাস্তবে এরা মদ খায়। সিগারেট-গাঁজা সব'ই টানে!
শুধু কি তাই?
এদের সাথে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে; সেটা বর্ণনা করলে মনে হয় কঠিন হৃদয়ের মানুষেরও বুক কেঁপে উঠবে।
আচার-আচরণ এবং স্বভাবে এতোটাই অমানুষ এরা। হিংস্র পশুকেও হার মানাবে।
অথচ বাইরে থেকে নিজদের কতো'ই না ধার্মিক, ভালো আচরণের মানুষ হিসেবে প্রচার করে বেড়ায়। ঠিক যেমনটা দিহান নামের এই ছেলেটার ফেসবুকে গেলে দেখা যাচ্ছে।
যেই ছেলে সব কিছুতে নিজেকে আল্লাহ'র কাছে সমর্পণ করতো; সে বিনা লাইসেন্সে ১৪ বছর বয়েস থেকে গাড়ি চালিয়ে বেড়াচ্ছে!
যে ছেলে বিয়ের আগে যৌনতাকে ঘৃণা করতো; সে কিনা শুধু মিলন'ই করেনি; মেয়েটাকে হত্যা'ই করে ফেলেছে!
একেই বলে দ্বি-চারিতা কিংবা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।
এতেও আসলে আমার খুব একটা আপত্তি নেই। কারণ আমি জানি- যে কোন মানুষ যখন একটা কাজ করে তার একটা কর্য-কারন সম্পর্ক আছে। মানুষ তো আর বিনা কারনে এমন ডাবল-স্ট্যান্ডার্ড আচরণ করে বেড়ায় না।
পারিবারিক পরিবেশ এবং পারিবারিক মূল্যবোধ'ই মানুষ'কে এমন করে তৈরি করে। যেই ছেলের বাবা একজন রেজিস্ট্রার; সে কিনা একেক সময় একেক গাড়ি কিনতে পছন্দ করতো। বাবা এতো টাকা কই থেকে পেত? এই বাবাও নিশ্চয় নিজেকে খুব ভালো এবং ধার্মিক মানুষ হিসেবেই প্রকাশ করে বেড়ায়। যেটা তাঁর সন্তানের কাছে খুব সহজেই ট্রান্সফার হয়েছে।
১৪ বছর বয়েসে সে যখন গাড়ি চালিয়ে বেড়িয়েছে- তার মা কি সেটা জানত না?
অতি অবশ্য'ই জানত। এতে তাদের কিছুই যায় আসেনি। তারা হয়ত এটাকে স্মার্টনেস মনে করেছে।
এই ছেলের এক ভাই মাদসাক্ত এবং এই ছেলে নিজে মাঝে মাঝেই নিজের মেয়ে বন্ধুদের একাকী বাসায় নিয়ে আসতো।
সেটা কি তার মা জানত না?
বাড়ির দারোয়ান তো ঠিক'ই জানত। মা হিসেবে দারোয়ানকে কি সে কখনো জিজ্ঞেস করে দেখেছে?
অবশ্য দারোয়ান সত্য বললে এই মা হয়ত উল্টো দারোয়ান'কেই দায়ী করেছে।
ঘরের মধ্যে পশু তৈরি হচ্ছে কী না দেখা জরুরি
বিশ্বাস করুন; আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। যেই ছেলে দুটো আমার সাথে অমানুষের মতো ব্যাবহার করেছে; আমি এদের ঘৃণা করার বদলে উল্টো বরং বলেছি- তোমরা যে একটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড জীবন যাপন করছ; একটা মিথ্যার উপর জীবন কাটিয়ে দিচ্ছ; স্রেফ সেটা বুঝার চেষ্টা করো।
আপনি ভুলটা ধরিয়ে দিলে বরং সমস্যা। দেখা যাবে উল্টো আপনার উপর তেড়ে আসছে!
পৃথিবীতে পয়েন্ট জিরো জিরো জিরো ওয়ান পারসেন্ট মানুষের সৌভাগ্য হয় ছয়টার অধিক দেশে পড়াশুনা করার। পৃথিবী নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়ার অভিজ্ঞতা নেয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বচ্চ ডিগ্রী নিয়ে যে কোন কিছু জটিল ভাবে চিন্তা করার। সেই সঙ্গে অতি জটিল বিষয় গুলোকে খুব সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করার। আমি সৌভাগ্যবান, আমার সেই সুযোগ হয়েছে।
যেই ছেলেটা একটা জলজ্যান্ত মেয়েকে মেরে ফেল'লো ; সেই ছেলেটার মা আজকেও কোন রকম দ্বিধা ছাড়া বলেছে- আমার ছেলে নির্দোষ। আপনার খোঁজ নিয়ে দেখেন।
এইবার আপনারাই বুঝে নিন- দোষটা কেবল এই ছেলের না। যেই পারিবারিক পরিবেশে সে বড় হয়েছে সেটার ভূমিকাই এতে বেশি।
সেই পরিবেশ তাকে শিখিয়েছে
-গাড়ি-মটর বাইক মানেই জীবন!
এই জন্য ফেসবুকে নানান রকম গাড়ি আপলোড দিতে সে পছন্দ করতো।
যেই পরিবেশ তাকে শিখিয়েছে
-সুন্দর সুন্দর ইংরেজি নীতি বাক্য বলে বেড়ালে সমাজে মূল্য পাওয়া যায়।
এই জন্য সে ছবির সাথে নানান সব ইংরেজি বাক্য জুড়ে দিত।
যেই পরিবেশ তাকে শিখিয়েছে
- ধর্মীয় নীতি বাক্য বলে বেড়ালে সমাজে ধার্মিক-ভালো মানুষের পরিচয় পাওয়া যায়।
এই জন্য নানান সময় ধর্মীয় নীতি বাক্য বলে বেড়াত।
যার একটাও সে নিজ জীবনে কখনো মেনে চলেনি। অথচ এই ছেলে কিন্তু বিশ্বাস করতো- সে ধার্মিক কিংবা ভালো মানুষ।
এই ছেলে বিয়ের আগে যৌনতাকে ঘৃণা করে বলে মাস দুয়েক আগে পোস্ট করেছে; সেই ছেলে কিনা দিব্যি যৌন মিলন কিংবা কে জানে, ধর্ষণ করে জলজ্যান্ত একটা মেয়েকে মেরে ফেলেছে!
একেই বলে শতভাগ দ্বিচারিতা।
মনস্টার কিংবা অমানুষ এভাবেই তৈরি হয়। একদিনে কিংবা রাতারাতি নয়।
আমিনুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অস্ট্রিয়া। (ফেসবুক থেকে)
news24bd.tv / কামরুল