বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক সুন্দর রাখার উপায়

প্রতীকী ছবি

বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক সুন্দর রাখার উপায়

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

আজ যে মেয়েটি বউ হয়ে অন্যের ঘরে গেল, একটা সময় সে-ই আবার নিজের সন্তানকে বিয়ে দিয়ে শাশুড়ি হন। ছেলে বিয়ে দিয়ে ঘরে বউ আনেন। কিন্তু, সময়ের দুই প্রান্তে দাঁড়ানো একই মানুষটি যেন দুইটি আলাদা সত্ত্বা। বউ হয়ে যে মেয়েটি শাশুড়িকে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন, শাশুড়ি হয়ে সেই মেয়েটিই বউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতে শুরু করেন।

তবে বউ-শাশুড়ির প্রতিটা সম্পর্ক যে এমন এটাও ঠিক নয়। অনেক পরিবারেই এ দুইটি মানুষ এমন আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ হন যা যে কোন সম্পর্ককে হার মানায়।  

সমাজে বউ-শাশুড়ির বৈরী সম্পর্ক নিয়ে যেমন নানা প্রবাদ আছে, তেমনি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি কিংবা পারিবারিক কোনো দ্বন্দ্বে অনেক ক্ষেত্রেই বউ-শাশুড়ির সম্পর্ককে দায়ী করা হয়৷ আর তাই বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক সুন্দর রেখে সংসারে শান্তি বজায় রাখার কিছু উপায় জানিয়েছেন এক জার্মান বিশেষজ্ঞ৷

মনোভাব
বিয়ের আগে পর্যন্ত ছেলের ওপর মায়ের কর্তৃত্ব থাকে৷ কিন্তু ছেলের বিয়ের পর মা মনে করেন, তাঁর আদরের সন্তানটি বুঝি হাতছাড়া হয়ে গেল৷ অনেক মা মনে করেন, ছেলে বিয়ে করায় সংসারে তাঁর নিজের মূল্য কমে গেছে৷ মায়েদের এ মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে৷

ব্যক্তিস্বাধীনতা
বউ কী করে, কোথায় যায়, কোথায় বেশি পয়সা খরচ করে, তার বন্ধুরা কেমন ইত্যাদি বিষয়ে শাশুড়ির জানার আগ্রহ প্রচণ্ড, যা কিনা বউয়ের মনে বিরক্তির উদ্রেক করে৷ এ যুগের অনেক বউই চান, স্বাধীনভাবে চলতে, কিন্তু শাশুড়ির ব্যবহারের কারণে তা অনেক সময় সম্ভব হয় না৷ বউ বাড়িতে না থাকলে অনেক শাশুড়ি তো ছেলের বউয়ের অনুপস্থিতিতে তাঁর জিনিসপত্রও ঘাঁটাঘাটি করেন! এমন আচরণে পারস্পরিক শ্রদ্ধা কখনো বাড়ে না, উল্টো কমে।

সমাধানের উপায়?
বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক মধুর করতে শাশুড়িতে যেমন ভূমিকা রাখতে হয় তেমনি রাখতে হয় বউকেও।

পরিবার বিষয়ক জার্মান বিশেষজ্ঞ ইংগ্রিড রটের মতে- বউ সবসময় শাশুড়িকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা করবে এবং তা তাঁকে বুঝতে দেবে। এতে বউয়ের প্রতি শাশুড়ির মমতা বাড়তে থাকবে। তবে বউ কখনো শাশুড়ি থেকে সেরকম ভালোবাসা আশা করবেন না, যা আপনার মা-বাবা আপনাকে দিয়েছে৷

কিছুতেই মেনে নেওয়া সম্ভব না হলে কি করণীয়?
বিয়ের পর স্বামীকে সব স্ত্রী-ই পুরোপুরি নিজের মতো করে পেতে চান৷ আর সেই জায়গায় ভাগাভাগির বিষয়টি কোনোভাবে মাথায় এলেই বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে৷ এ পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই শাশুড়ির সাথে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব না হলে দূরত্ব বজায় রাখুন এবং সে কথা শাশুড়িকে নম্রতার সঙ্গে সরাসরি জানিয়ে দিন৷ তখন শাশুড়ির কোনো পরামর্শ পছন্দ না হলেও চুপ করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ৷

শাশুড়ি যা ভাবেন
বিয়ের পর ছেলে আর আগের মতো মায়ের খোঁজ নেয় না বা আগের মতো সখের খাবারগুলো খায় না– অনেক মা-ই এমন ভাবেন৷ ছেলের জীবনযাপন বা খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসা একেবারেই স্বাভাবিক৷ অথচ ছেলেকে বুঝতে খানিকটা ভুলই করেন মা৷ কারণ, নতুন জীবনে পরিবর্তন আসবে এটাই বাস্তব৷ তা মেনে নিলেই কিন্তু আবার সংসারে সুখ ফিরে আসতে পারে৷

শ্রদ্ধাবোধ
ছেলে ভালো থাকুক, সুখে থাকুক, তা পৃথিবীর সকল মা-ই চান৷ কাজেই ছেলের মতামতের প্রতি মায়ের শ্রদ্ধা রাখা দরকার৷ রাগারাগি বা অভিমান না করে সমস্যা নিয়ে বউয়ের সাথে সরাসরি কথা বলুন৷ এ যুগের আধুনিক এবং শিক্ষিত মেয়েরা অবশ্যই তা বুঝবে৷ যে কোনো সম্পর্কে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা অনেক বড় বিষয়৷

বউ শাশুড়ির দ্বন্দ্ব
বউ-শাশুড়ি ‘বেস্টফ্রেন্ড’ হবেন তা ধরে না নেয়াই ভালো৷ যে শাশুড়ি নিজের শাশুড়ির কাছে খারাপ ব্যবহার পেয়েছেন, তার মাথায়ও ওই বিষয়গুলো গেঁথে থাকে। তিনি হয়ত কথায় কথায় সেই উদাহরণ টেনে বউকে চাপে রাখতে চান। অনেক সময় তিনি মনে করেন এটাই ঠিক। তবে নিজের শাশুড়ির কাছ থেকে খারাপ আচরণের শিকার হওয়া শাশুড়ি তো বুঝবেন কতটা কষ্ট তাকে পোহাতে হয়েছে। তাই নিজের বৌমা যাতে একই আচরণের শিকার না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকাই উচিত তার৷ কারণ, সময় পাল্টে গেছে, সব খারাপ বিষয়গুলোকে ঝেড়ে ফেলার সময় এসেছে। সময়ের সাথে মানিয়ে চলতে পারলে নিজেরই সুখ৷

আজকের নারী
আজকের যুগের নারীদের অনেকেই চাকরিজীবী, তাই সবকিছু সামলে নিয়ে আগের দিনের মতো শাশুড়ির সেবা করা তাঁদের জন্য বেশ কঠিন৷ সেটা শাশুড়িকে বুঝতে হবে৷ আবার বউকেও বুঝতে হবে, শাশুড়ির দিকে মাঝে মাঝে কিছুটা মনোযোগ দেওয়া উচিত, বিশেষ করে ছুটির দিনে৷ তার মনটাও তো চায় আপনার কাছ থেকে কিছুটা সেবা পেতে। সময় পেলে শাশুড়ির সাথে গল্প করুন, স্বাস্থ্যের খবর নিন, শপিংয়ে যান কিংবা কোনো উপলক্ষে তাঁকে উপহার দিন৷ এতে সম্পর্ক সুন্দর হবে৷

নাতি-নাতনি
নাতি নাতনিকে শাশুড়ির কাছে নিয়মিত যেতে দিন৷ শাশুড়ি যত প্রভাবশালীই হোন না কেন, দেখবেন ধীরে ধীরে তিনি বউকে পছন্দ করতে শুরু করেছেন৷

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক সাধারণভাবে প্রায় একই রকম৷ জার্মানিতে দুইজন নারীর মধ্যে সম্পর্ক খারাপ থাকলে, বউ- শাশুড়ি কিংবা ননদ-ভাবীর মতো সম্পর্ক বলে ঠাট্টা করা হয়ে থাকে৷ তবে বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক সুন্দর রেখে সংসারে শান্তি বজায় রাখা সম্ভব, যদি দু’পক্ষই সেটা চায়৷

সম্পর্কিত খবর